রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

বাখমুত থেকে সেনা প্রত্যাহারের হুমকি দিলেন ভাগনার-প্রধান

বাখমুত শহরের কাছে গত ২৩ এপ্রিল ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর এক সদস্য কামানের গোলা ছুঁড়ছেন। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদের পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুতের যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ভাড়াটে সেনাদের বাহিনী ভাগনার গ্রুপের প্রধান।

রোববার কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। 

শনিবার রুশ সামরিক ব্লগার সেমিয়ন পেগোভের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন বলেন, কামানের গোলার স্বল্পতায় বাখমুতের যুদ্ধে অন্যান্য যুদ্ধের তুলনায় ৫ গুণ বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে।

প্রিগোঝিন বলেন, 'প্রতিদিনই হাজারো মরদেহের স্তূপ জমে যাচ্ছে। আমরা মৃতদের কফিনে ভরে তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠাচ্ছি।'

প্রিগোঝিন আরও জানান, তিনি রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর কাছে যত দ্রুত সম্ভব গোলাবারুদ পাঠানোর দাবি জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। 

তিনি বলেন, 'যদি গোলাবারুদের স্বল্পতা না মেটানো যায়, তাহলে আমরা ভীতু ইঁদুরের মতো ছোটাছুটি না করে হয় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে যাব অথবা আমাদেরকে মারা পড়তে হবে।'

টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক অডিও বার্তায় প্রিগোঝিন আরও জানান, গোলাবারুদের অভাবে তিনি ৯৪ জন যোদ্ধা হারিয়েছেন। 

তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে আরও গোলাবারুদ থাকলে নিহতের সংখ্যায় ৫ ভাগের ১ ভাগে নেমে আসতো।' এর আগে প্রিগোঝিন অভিযোগ করেছিলেন, রাশিয়ার নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনী তার দলের সেনাদের প্রয়োজন অনুযায়ী গোলাবারুদ দিচ্ছে না। তিনি একইসঙ্গে রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে 'বিশ্বাসঘাতকতার' অভিযোগ আনেন। 

অপরদিকে, ইউক্রেনের সামরিক মুখপাত্র শনিবার জানিয়েছে, রুশ বাহিনী বাখমুতে মোতায়েন ইউক্রেনীয় বাহিনীর কাছে সামরিক সরঞ্জাম ও উপকরণ সরবরাহ বন্ধ করতে পারেনি। 

ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার প্রিগোঝিনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, তার বাহিনী রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে দৈনিক ৪ হাজার শেলের চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৮০০ শেল পাচ্ছে। 

প্রিগোঝিন আরও জানান, ১৫ মের আগেই ইউক্রেনের বহুল প্রত্যাশিত পালটা আক্রমণ শুরু হবে। তিনি দুঃখ করে জানান, রুশ সেনাবাহিনী এই হামলা মোকাবিলা করার জন্য দ্রুত প্রস্তুতি নিচ্ছে না। 

ইনস্টিটিউট আরও জানায়, 'বাখমুত থেকে সেনা প্রত্যাহারের হুমকি দিয়ে প্রিগোঝিন এটাই প্রমাণ করলেন যে বাখমুতে রুশ অবস্থানের ওপর শক্তিশালী পাল্টা-আক্রমণ আসলে তা সামলানোর মতো অবস্থানে নেই রুশরা।'

প্রায় ১০ মাস ধরে বাখমুতের দখল নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া। 

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সের্হেই শেরাভাতি জানান, বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে রুশরা বাখমুতে মোতায়েন ইউক্রেনীয় বাহিনীর সরঞ্জাম ও রসদের সরবরাহ পথ দখল করার কথা বলে আসছে, কিন্তু আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী তা হতে দেয়নি।

'রোড অব লাইফ' নামে পরিচিত ১৭ কিমি দীর্ঘ পথটি বাখমুত থেকে নিকটবর্তী শহর চাসিভ ইয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত। মূলত, এই সড়কের দখল নিলেই বাখমুতের ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য রসদ আসা বন্ধ হয়ে যাবে এবং তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে। 

শেরাভাতি আরও জানান, ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য রসদ, অস্ত্র ও গোলাবারুদের সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। তারা এ সড়ক জুড়ে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং প্রকৌশলীরা বাখমুত যাওয়ার জন্য নতুন অস্থায়ী সড়ক নির্মাণ করছেন। 

'সব মিলিয়ে, আমাদের জন্য বাখমুতের দখল ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে', যোগ করেন তিনি। 

সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, বাখমুতের পতন হলে হামলার মুখে পড়তে পারে চাসিভ ইয়ার। তবে এ শহরটি কিছুটা উঁচুতে অবস্থিত এবং ইতোমধ্যে সেখানে ইউক্রেনীয় বাহিনী কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে বলে জানা গেছে। 

ইউক্রেন বাখমুত রক্ষার অঙ্গিকার করেছে। রাশিয়ার মতে, এ শহরের দখল নিতে পারলে তারা ইউক্রেনের অন্যান্য অংশে সহজেই হামলা চালাতে পারবে।

Comments

The Daily Star  | English

Fakhrul alleges conspiracy to delay polls, urges BNP to resist

"Efforts are being made to create division and pit different state institutions against each other"

49m ago