‘চরম বিপর্যয়ের’ তিয়াত্তরের নোবেল শান্তি পুরস্কার

৫০ বছর আগে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ও ভিয়েতনামের সংগ্রামী রাজনীতিবিদ লে দুক তো কে নোবেল দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘চরম বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করা হয়।
১৯৭৩ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কার জেতেন ভিয়েতনামের লে দুক তো (ডানে) ও যুক্তরাষ্ট্রের হেনরি কিসিঞ্জার (বাঁয়ে)। ছবি: এএফপি
১৯৭৩ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কার জেতেন ভিয়েতনামের লে দুক তো (ডানে) ও যুক্তরাষ্ট্রের হেনরি কিসিঞ্জার (বাঁয়ে)। ছবি: এএফপি

অন্য বছরের মতো এবারও নোবেল শান্তি পুরষ্কার নিয়ে চলছে অনেক জল্পনা কল্পনা। তবে নোবেলের ইতিহাসে ১৯৭৩ সাল বিশেষ উল্লেখযোগ্য, কারণ সে বছরের শান্তি পুরস্কার ছিল অত্যন্ত বিতর্কিত।

৫০ বছর আগে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ও ভিয়েতনামের সংগ্রামী রাজনীতিবিদ লে দুক তো কে নোবেল দেওয়ার সিদ্ধান্তকে 'চরম বিপর্যয়' বলে অভিহিত করা হয়।

আজ শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

লে দুক তো এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন এবং কিসিঞ্জার অসলো যেয়ে পুরষ্কার গ্রহণ করার 'সাহস' পাননি। নোবেল কমিটির পাঁচ সদস্যের দুই জন এই ঘটনার পর পদত্যাগ করেন।

কিসিঞ্জার ও লে দুক। ছবি: রয়টার্স
কিসিঞ্জার ও লে দুক। ছবি: রয়টার্স

নরওয়ের নোবেল ইতিহাসবিদ এসলে সুইন এ বিষয়টিকে 'চরম বিপর্যয়' বলে অভিহিত করেন।

'এটা নোবেল শান্তি পুরস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে উদাহরণ', যোগ করেন তিনি।

১৯৭৩ এর ১৬ অক্টোবরের এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে মানুষকে বিস্মিত করে। নরওয়ের নোবেল কমিটি কিসিঞ্জার ও লে দুক তো কে 'আলোচনার মাধ্যমে ভিয়েতনামে অস্ত্রবিরতি' বাস্তবায়নের জন্য যুগ্মভাবে এই পুরষ্কার দেয়।

সে বছরের ২৭ জানুয়ারি এই দুই নেতা ভিয়েতনামে অস্ত্রবিরতি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে প্যারিস শান্তি চুক্তিতে সাক্ষর করেন।

সুইন বলেন, 'এটা আদতে কোনো শান্তি চুক্তি ছিল না, বরং এক ধরনের সন্ধি ছিল, যা খুব দ্রুতই ভেঙে পড়ে'।

বিশ্লেষকদের মতে, এটা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সম্মানজনক ভাবে ভিয়েতনাম থেকে সেনা প্রত্যাহারের একটি সুযোগ। ইতিহাস আমাদের জানায়, সে সময় ভিয়েতনামে মার্কিন বাহিনী একেবারেই সুবিধা করতে পারছিল না এবং দেশটিতে যুদ্ধ-বিরোধী অনুভূতি অনেক প্রবল হয়ে পড়ছিল।

পুরস্কার বিজেতাদের নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিতর্ক দেখা দেয়।

নোবেল কমিটির দুই সদস্য অসন্তোষ প্রকাশ করে পদত্যাগ করেন, যা ছিল একটি নজিরবিহীন ঘটনা।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস পুরস্কারজয়ীদের ব্যঙ্গ করে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল 'নোবেল যুদ্ধ পুরষ্কার'। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা নরওয়ের পার্লামেন্টে চিঠি দিয়ে এই বিষয়টির সমালোচনা করেন। তারা বলেন, 'স্বাভাবিক চেতনা বোধ সম্পন্ন কোনো মানুষ এ ধরনের অন্যায় মেনে নিতে পারে না।'

হেনরি কিসিঞ্জার (১০০) সে সময় নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি এই যুদ্ধকে প্রতিবেশী দেশ কম্বোডিয়াতেও ছড়িয়ে দেন এবং ভিয়েতনামকে চাপে রাখত হ্যানয় শহরে নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করেন। 

২০২৩ সালে ১০০ বছর বয়সী হেনরি কিসিঞ্জার চীনের নেতা শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ছবি: রয়টার্স
২০২৩ সালে ১০০ বছর বয়সী হেনরি কিসিঞ্জার চীনের নেতা শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ছবি: রয়টার্স

এছাড়াও চিলিতে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সালাভাদর আলেনদের বদলে বিদ্রোহী অগাস্তো পিনোশের অভ্যুত্থানের প্রতি সমর্থন দিয়েও দুর্নাম কুড়ান তিনি।

পশ্চিমা বিশ্বে লে দুক তো একজন কট্টরপন্থী নেতা হিসেবে বিবেচিত। নোবেল শান্তি পুরস্কারের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই পুরষ্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটিকে চিঠি দিয়ে জানান, 'যখন প্যারিস চুক্তির প্রতি সম্মান জানানো হবে, বন্দুকের নল নিশ্চুপ হবে এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামে প্রকৃতপক্ষে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, কেবল তখনই আমি এই পুরষ্কার গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করব।'

ভিয়েতনামের নেতা লে দুক তো। ছবি: সংগৃহীত
ভিয়েতনামের নেতা লে দুক তো। ছবি: সংগৃহীত

বিক্ষোভের মুখে পড়ার আশংকায় কিসিঞ্জার অসলো যেয়ে পুরষ্কার গ্রহণ করেননি। তিনি ন্যাটোর বৈঠকে যোগ দেওয়ার অজুহাত দেখান।

১৯৭৫ সালে সায়গনের পতনের পর তিনি তার পুরস্কার ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু কমিটি তা গ্রহণ করেনি।

নোবেল ইনস্টিটিউটের বর্তমান প্রধান ওলাভ নোলস্তাদ বলেন, তৎকালীন কমিটি আশা করেছিল এই পুরস্কারে ভিয়েতনামে দীর্ঘমেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। ৫০ বছর গোপন থাকার পর প্রথা অনুযায়ী সে সময়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের যুক্তি ও অন্যান্য তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে।

এছাড়াও, ভিয়েতনামে শান্তি প্রতিষ্ঠা হলে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে শীতল সম্পর্ক উষ্ণ হবে এবং স্নায়ু যুদ্ধেরও অবসান ঘটাবে বলে আশা করেছিল কমিটি।

'আমি মনে করি এটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। যেসব ব্যক্তি কোনো দেশের বিরুদ্ধে অন্য দেশের যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, তাদেরকে শান্তি পুরষ্কার দেওয়া কোনা কাজের কথা নয়', যোগ করেন নোলস্তাদ।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus-led interim govt takes charge

2 months of interim govt: Hopes still persist

The interim government had taken oath two months ago with overwhelming public support and amid almost equally unrealistic expectations.

2h ago