মংডুর শেষ সেনা চৌকির পতন, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে

মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি। ফাইল ছবি: আরাকান আর্মির ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত
মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি। ফাইল ছবি: আরাকান আর্মির ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত

বেশ কয়েক বছর ধরেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী। সম্প্রতি দেশটির বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ ভূখণ্ডের দখল নিয়েছে এই গোষ্ঠীগুলো।

এমন পরিস্থিতিতে সেই রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শহর মংডুর সর্বশেষ সেনা চৌকির দখল নেওয়ার দাবি করেছে সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি। ফলে, তাদের নিয়ন্ত্রণে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত।

আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ওই সেনা চৌকি দখলের মাধ্যমে রাখাইন রাজ্যের উত্তর অংশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি।

প্রতিবেদন অনুসারে, এই অর্জনে রাখাইন রাজ্যে নিজেদের শাসন ব্যবস্থা চালুর পথে আরেক ধাপ এগিয়েছে আরাকান আর্মি।

মিয়ানমারজুড়ে চলমান গৃহযুদ্ধে মূল ভূমিকা পালন করছে রাখাইন রাজ্য।

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই সেনা শাসনের বিরুদ্ধে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে। শুরুতে শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু, সেনাদের অস্ত্র ব্যবহারে তা রূপ নেয় সশস্ত্র ও রক্তক্ষয়ী সংঘাতে।

গতকাল দিন শেষে গোপন জায়গা থেকে আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইং থুখা এপিকে এসএমএস পাঠিয়ে জানান, গত রোববার তারা মংডুর সব সামরিক চৌকির দখল নিয়েছেন।

সেই সেনা চৌকির কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনকে আটক করেছে তারা।

'যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় তাকে আমরা আটক করি,' বলেন আরাকান আর্মির মুখপাত্র।

মংডুর পরিস্থিতি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি এপি।

সেই এলাকার বেশিরভাগ অংশে মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ আছে।

মিয়ানমারের সামরিক সরকার এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে।

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয় থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে মংডু। গত জুন থেকে সেই অঞ্চলে আরাকান আর্মি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

মিয়ানমারের এই সশস্ত্র সংগঠনটি বছরের শুরুর দিকে পালেতাও ও বুথিডং দখল করে নেয়। এই শহর দুটিও বাংলাদেশ সীমান্তে।

মংডুতে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ফাইল ছবি: ইউএনবি/এপি (২৯ নভেম্বর, ২০২৪)
মংডুতে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ফাইল ছবি: ইউএনবি/এপি (২৯ নভেম্বর, ২০২৪)

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যের ১৭টি শহরের মধ্যে ১১টির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি। সঙ্গে পাশের চিন রাজ্যেরও একটি শহরের দখলে নিয়েছে তারা।

রাখাইনের গুরুত্বপূর্ণ শহর 'আন'। সেখানে সেনা সদরদপ্তরের মাধ্যমে পুরো পশ্চিমাঞ্চলের ওপর নজর রাখে সামরিক বাহিনী। তবে আরাকান আর্মির হামলার মুখে ওই শহর পতনের মুখে। যেকোনো সময় এর নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে সামরিক জান্তা।

গত শুক্রবার টেলিগ্রামে পোস্ট করে আরাকান আর্মি জানায়, তারা ৩০টিরও বেশি সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর পশ্চিম কমান্ডের দখল এখনো নিতে পারেনি আরাকান আর্মি। ওই ঘাঁটির মাধ্যমে রাখাইন ও চিন রাজ্যের দক্ষিণ অংশ ও বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের জলসীমার নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে সামরিক বাহিনী।

মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত ভূখণ্ড ছাড়িয়ে নাফ নদী থেকে বঙ্গোপসাগরের উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত।

গত রোববার আরাকান আর্মি জানায়, তারা নাফ নদীর মাধ্যমে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, স্থানীয় পুলিশ ও সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট মুসলিমরা নৌকায় বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টা করছে।

গত বছর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সশস্ত্র জোটের অংশ হিসেবে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সামরিক অভিযান চালিয়ে প্রতিবেশী চীন সীমান্তে বেশ খানিকটা গুরুত্বপূর্ণ এলাকার দখল নিয়েছিল।

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

5h ago