ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কে বিশ্বজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির বাণিজ্যিক অংশীদারদের কাছ থেকে পণ্য আমদানিতে বড় আকারে আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন গতকাল বুধবার। তার এই সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার এএফপির প্রতিবেদনে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
ট্রাম্প শুল্কের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হতে চলেছে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
চীন
পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা সর্বশেষ এই শুল্কের 'স্পষ্ট বিরোধিতার' কথা জানিয়েছে বেইজিং এবং নিজেদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় 'পাল্টা ব্যবস্থা' নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে দেশটি।
দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্কিন শুল্ক 'আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন লঙ্ঘন করেছে এবং এতে বড় আকারে সংশ্লিষ্টদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থহানী হয়েছে।
সর্বশেষ শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বে ৫৪ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে চীনের ব্যবসায়ীদের।
জার্মানি
জার্মান গাড়ি নির্মাতাদের সংগঠন ভিডিএ বলেছে এই শুল্ক 'সবার ক্ষতির কারণ হবে'।
'সবাই একত্র হয়ে এবং প্রয়োজনীয় শক্তিমত্তার নিদর্শন রেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে ইইউ'র প্রতি আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে আমরা যে এ শুল্ক নিয়ে দরকষাকষি করতে আগ্রহী, সে আভাস দেওয়াও অব্যাহত রাখতে হবে', যোগ করে ভিডিএ।
জার্মান রাসায়নিক উপকরণ খাতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। ওই খাতের প্রতিনিধিরা ইইউকে 'মাথা ঠাণ্ডা' রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'পাল্টা শুল্ক আরোপ বা প্রতিশোধমূলক প্রতিক্রিয়া দেখালে ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়বে'।
জাপান

জাপানের পণ্য আমদানিতে আরোপিত মার্কিন শুল্কের পরিমাণ ২৪ শতাংশ। জাপানের বাণিজ্যমন্ত্রী ইওজি মুতো এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন।
মুতো বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ একটি একপাক্ষিক উদ্যোগ, যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমি আবারও এটা জাপানের ক্ষেত্রে কার্যকর না করার জন্য (ওয়াশিংটনকে) অনুরোধ জানাই।
জাপানের প্রধান ক্যাবিনেট সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি সংবাদদাতাদের জানান, এ ধরনের শুল্ক আরোপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নীতিমালা ও দুই দেশের বাণিজ্য চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য মন্ত্রী জনাথন রেনল্ডস বলেন, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য 'শান্ত ও অঙ্গীকারবদ্ধ' থাকবে, যা যুক্তরাজ্যের পণ্য আমদানিতে ওয়াশিংটনের আরোপ করা ১০ শতাংশ শুল্ক 'প্রশমন' করবে।
তবে তিনি আরও উল্লেখ করেন, 'আলোচনার টেবিলে সব ধরনের বিকল্পই উত্থাপন করা হতে পারে'।
'আমাদের হাতে (পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য) বেশ কিছু উপকরণ রয়েছে এবং প্রয়োজনে আমরা ব্যবস্থা নিতে পিছপা হব না', যোগ করেন রেনল্ডস।
কানাডা

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি হুশিয়ারি দেন, এই শুল্ক 'বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে।'
'আমরা এসব শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেব এবং লড়ে যাব। আমরা আমাদের কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করব', যোগ করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ জানান, নতুন শুল্কটি 'বন্ধুসুলভ আচরণের নিদর্শন নয়' এবং এতে দুই ঘনিষ্ঠ মিত্রের সম্পর্ক প্রভাবিত হবে।
তিনি বলেন, 'এই শুল্ক অপ্রত্যাশিত নয়। তবুও আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই: এগুলো পুরোপুরি অনাকাঙ্ক্ষিত।'
থাইল্যান্ড

থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা জানান, তাদের পণ্য রপ্তানিতে আরোপিত ৩৬ শতাংশ মার্কিন শুল্কের মোকাবিলার জন্য তার সরকারের একটি 'শক্তিশালী পরিকল্পনা' রয়েছে। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন, দরকষাকষি করে শুল্কের পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে।
তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, তার সরকার এর প্রভাব কমিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে।
Comments