সৌদি আরবের কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির উদ্যোগ ট্রাম্পের

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র প্যাকেজ বিক্রির প্রস্তাব দেবেন। মে মাসে সৌদি সফরের সময় তিনি এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করবেন বলে জানা গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ছয় সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে। 

এর আগে, ট্রাম্পের পূর্বসূরি বাইডেন রিয়াদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করার প্রচেষ্টা হাতে নেন। ওই বৃহত্তর চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। তবে শেষ পর্যন্ত বাইডেনের ওই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। 

বাইডেনের প্রস্তাবে চীনের কাছ থেকে অস্ত্র কেনা বন্ধ ও সৌদি আরবে চীনা বিনিয়োগে সীমাবদ্ধতা আরোপের বিনিময়ে অত্যাধুনিক মার্কিন অস্ত্র পেতে পারত সৌদি আরব। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাবেও এ ধরনের শর্ত রয়েছে কী না, তা রয়টার্স জানতে পারেনি।

এ বিষয়ে জানতে হোয়াইট হাউস ও সৌদি সরকারের যোগাযোগ কার্যালয়ের কাছে মন্তব্য চাওয়া হলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।

এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক সম্পর্ক অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা এই অংশীদারিত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ এবং আমরা সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা চাহিদা মেটাতে তাদের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখব।'

প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি করলে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নতুন চাকরি সৃষ্টি  হবে।

দুইজন সূত্র জানিয়েছেন, মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা লকহিড মার্টিন কর্পোরেশন সি-১৩০ পরিবহন বিমানসহ বেশ কিছু আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে। অপর এক সূত্র জানান পরিবহন বিমানের পাশাপাশি লকহিড ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডারও দেবে। 

সি-১৩০ পরিবহন বিমান। ছবি: লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট
সি-১৩০ পরিবহন বিমান। ছবি: লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট

এই অস্ত্র প্যাকেজে আরটিএক্স কর্পোরেশনেরও (আগের নাম রেথিওন টেকনলজিস) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। পাশাপাশি এতে বোইং, নর্থরপ গ্রুমান কর্প এবং জেনারেল অ্যাটমিকস ও অবদান রাখবে বলে চার সূত্র জানান। 

এ বিষয়টির সংবেদনশীলতা বিচারে কোনো সূত্রই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

আরটিএক্স, নর্থরপ ও জেনারেল অ্যাটমিকস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে। বোইং তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে জবাব দেয়নি।

লকহিড মার্টিনের মুখপাত্র বলেন, বিদেশি শক্তির কাছে সামরিক উপকরণ বেচা-কেনার বিষয়টি এক সরকারের সঙ্গে অন্য সরকারের সরাসরি লেনদেন। এ ধরনের কোনো বিষয় সম্পর্ক তথ্য জানতে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

সূত্ররা জানান, উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা ট্রাম্পের সফরসঙ্গী হতে পারেন।

দীর্ঘদিন ধরেই সৌদি আরবকে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

২০১৭ সালে ট্রাম্প রিয়াদের কাছে ১১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে ২০১৮ সাল নাগাদ মাত্র সাড়ে ১৪ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ওই সময় সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের আলোকে এসব চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে মার্কিন কংগ্রেস। 

প্রয়াত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। ফাইল ছবি: রয়টার্স
প্রয়াত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। ফাইল ছবি: রয়টার্স

২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসনের আমলে কংগ্রেস খাশোগি হত্যাকাণ্ডের জেরে সৌদি আরবের কাছে মারণাস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সৌদি আরবকে ইয়েমেন যুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে বাধ্য করা। ওই যুদ্ধে অসংখ্য বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছিলেন। 

মার্কিন আইন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অস্ত্র বিক্রির বড় চুক্তিগুলো কংগ্রেসের সদস্যদের যাচাই-বাছাই ছাড়া বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। যার ফলে, সৌদি আরবের প্রতি নমনীয় অবস্থানে যেতে বাধ্য হয় বাইডেন প্রশাসন।

২০২৪ সালে মারণাস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন বাইডেন।

তিন সূত্র জানিয়েছেন, লকহিডের এফ-৩৫ জেট বিমান কেনার ব্যাপারে বেশ কয়েক বছর ধরে আগ্রহ দেখিয়ে এসেছে সৌদি আরব। এ বিষয়টি ট্রাম্পের সফরের সময় আলোচিত হবে বলে তারা জানান। তবে এই সফরেই ওই বিমান কেনার চুক্তি চূড়ান্ত হবে বলে মনে করেন না তারা।

যুক্তরাষ্ট্র সব সময় নিশ্চয়তা দিয়ে এসেছে যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল অন্য আরব দেশগুলোর চেয়ে বেশি আধুনিক ও উন্নত অস্ত্র পাবে। এ বিষয়টিকে 'কোয়ালিটেটিভ মিলিটারি এজ (কিউএমই)' বা 'গুণগত সামরিক সুবিধা' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

নয় বছর ধরে ইসরায়েলের কাছে এফ-৩৫ রয়েছে। তারা এই বিমান ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি স্কোয়াড্রন তৈরি করেছে।

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

2h ago