এ সপ্তাহে রাশিয়া সফরে যাবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

শি জিন পিং ও ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি: রয়টার্স (২০২৩)
শি জিন পিং ও ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি: রয়টার্স (২০২৩)

চলতি মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখ রাশিয়া সফর করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

এ সময় তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে মিত্র বাহিনীর ঐতিহাসিক বিজয় উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। 

আজ রোববার ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

এমন সময় এই সফরের খবর এলো যখন বেইজিং-ওয়াশিংটনের মধ্যে মার্কিন শুল্ক নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। 

১৯৪৫ সালের ৯ মে ইউরোপের 'বিজয় দিবস' ঘোষণা করা হয়। এর একদিন আগে জার্মান বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। তবে এদিন ইউরোপে যুদ্ধের অবসান হলেও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ফ্রন্টে জাপানের সঙ্গে যুদ্ধ অব্যাহত থাকে।

এই মাহেন্দ্রক্ষণটি উদযাপনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তিন দিনের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন, যা ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। 

রাশিয়ার সবচেয়ে বড় মিত্রের অন্যতম চীন। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়াকে একঘরে করে রাখলেও চীনের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক শক্তিশালী থেকেছে।

২০২২ সালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরুর আগে দুই দেশ ঘোষণা দেয়, তাদের 'অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে কোনো সীমা নির্ধারণ করা নেই।' এরপর থেকেই বাণিজ্য ও সামরিক খাতে সম্পর্ক বড় আকারে সম্প্রসারণ করেছে বেইজিং-মস্কো, যা পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বেগের কারণ। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের 'বিজয় দিবস' উদযাপনের শোভাযাত্রার মহড়া চলছে। ছবি: এএফপি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের 'বিজয় দিবস' উদযাপনের শোভাযাত্রার মহড়া চলছে। ছবি: এএফপি

রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, এই সফরে পুতিনের সঙ্গে শি দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসবেন। এই বৈঠকে 'অংশীদারিত্ব ও কৌশলগত সম্পর্কের উন্নয়ন' ও 'আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ' বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

ক্রেমলিন আরও জানায়, 'দুই দেশের সরকারের প্রতিনিধি ও মন্ত্রীরা বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে সই দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।'

রোববার রাষ্ট্রীয় টিভির কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, রাশিয়া ও চীনের স্বার্থের জায়গাগুলো 'সমন্বিত।'

বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, 'এই সম্পর্ক কৌশলগত, এটি অনেক গভীর'।

ইউক্রেন-রাশিয়ার তিন বছরের সংঘাতে নিজেদেরকে নিরপেক্ষ রাখার চেষ্টা করে গেছে চীন। তবে পশ্চিমা সরকারগুলোর দাবি, চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক মস্কোকে জরুরি অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন জুগিয়েছে।

এপ্রিলে জেলেনস্কি অভিযোগ তোলেন, রাশিয়াকে অস্ত্র যোগাচ্ছে চীন। এমন কী, রাশিয়ার পক্ষে ১৫৫ জন চীনা নাগরিক যুদ্ধ করেছে এবং বিষয়টি সম্পর্কে বেইজিং অবগত—এমন অভিযোগও তোলেন ইউক্রেনের নেতা।

তবে উভয় দাবিকে 'দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য' বলে উড়িয়ে দিয়েছে বেইজিং। 

রোববার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মন্তব্য করেন, 'আন্তর্জাতিক ক্ষমতার দৃশ্যপটে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আসছে' এবং এ সময়ে চীন-রাশিয়ার ঐতিহাসিক ও কৌশলগত সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, 'জাতিসংঘ, এসসিও ও ব্রিকস এর মতো বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রমে রাশিয়া-চীন আরও ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের ছাপ রাখবে'।

'(তারা) বিশ্বের সুবিস্তৃত দক্ষিণাঞ্চলকে সংঘবদ্ধ করবে, বৈশ্বিক সুশাসন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিয়ে একে সঠিক পথে পরিচালিত করবে, একপাক্ষিকতা ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ জানাবে এবং যৌথভাবে এমন একটি বিশ্ব তৈরির পক্ষে প্রচারণা চালাবে, যেখানে রয়েছে সমতা, বহুপাক্ষিকতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন।'

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রসঙ্গে চীনের মুখপাত্র বলেন, 'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে বড় দুই যুদ্ধক্ষেত্র ছিল এশিয়া ও ইউরোপে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী ওই যুদ্ধ জয়ে চীন ও রাশিয়ার অসামান্য আত্মত্যাগ এবং মহান ও ঐতিহাসিক অবদান রয়েছে।' 

৯ মে মস্কোর রেড স্কয়ারের শোভাযাত্রায় শি জিনপিংয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন বিশ্ব নেতা অংশ নেবেন। মূলত রাশিয়ার মিত্র দেশের প্রতিনিধিরা সেখানে যাবেন।

ক্রেমলিন একাধিকবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি থেকে নাৎসিদের বিদায় করার সঙ্গে তুলনা করেছে।

 

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh to clear rooppur dues

Govt moves to clear Rooppur dues to Russia after US waiver

Central bank seeks nod from Washington after Russia's reply

12h ago