সিরিয়ায় ২ গোষ্ঠীর সংঘাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৯৪

সিরিয়ায় ৬ দিনের সংঘাতে প্রায় ৬০০ জন নিহত হন। ছবি: এএফপি
সিরিয়ায় ৬ দিনের সংঘাতে প্রায় ৬০০ জন নিহত হন। ছবি: এএফপি

সিরিয়ায় দ্রুজ গোষ্ঠী অধ্যুষিত সওয়েইদা প্রদেশে ছয় দিনের সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সহিংসতার মাত্রা যাতে আর না বাড়ে, সেটা নিশ্চিতে ওই প্রদেশ থেকে সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে দেশটির ইসলামপন্থি সরকার।

আজ শুক্রবার এক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি। 

গত রোববার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের এই প্রদেশে নতুন করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়। দ্রুজ যোদ্ধা ও সুন্নি বেদুঈন গোষ্ঠীর সদস্যদের মুখোমুখি সংঘর্ষে শত শত মানুষ নিহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, এই সহিংসতায় বেদুঈনদের সুরক্ষা ও সহায়তা দিয়েছে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। 

জনশূন্য সওয়েইদা

গতকাল সওয়েইদা সিটি একেবারে জনশূন্য ছিল। এএফপির সংবাদদাতা সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানান,  সংঘাতের মধ্যে দোকানগুলো লুট হয়েছে এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অসংখ্য মরদেহ সড়কে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। 

হানাদি ওবেইদ (৩৯) পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি এএফপিকে বলেন, 'শহরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সেখানে বন্যা বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে।'

সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা

টেলিভিশনে প্রচারিত বক্তব্যে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা জানান, 'বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতাদের সওয়েইদার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে। এতেই 'জাতির চূড়ান্ত স্বার্থ' রক্ষা পাবে।'

মঙ্গলবার ওই অঞ্চলে সরকারি সেনা মোতায়েন করার পর সংঘাতের মাত্রা বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে দ্রুজদের সুরক্ষা দিতে সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, রোববার থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৯৪ হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত সংখ্যাটি ৩৫০ ছিল।

এই যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থাটি সিরিয়াজুড়ে সূত্রদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। 

সংঘাতের মুখে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন সিরিয়ার সোয়েইদা প্রদেশের মানুষজন। ছবি: এএফপি
সংঘাতের মুখে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন সিরিয়ার সোয়েইদা প্রদেশের মানুষজন। ছবি: এএফপি

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলের সংঘাতে প্রায় দুই হাজার পরিবার বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

সওয়েইদা প্রদেশে সংক্ষিপ্ত সামরিক অভিযানে সরকারি বাহিনীর ওপর বিমানহামলা চালায় ইসরায়েল। পাশাপাশি, দামেস্কেও সামরিক বাহিনীর সদরদপ্তরসহ অন্যান্য সরকারি স্থাপনায় সতর্কতামূলক হামলা চালায় দেশটি।

ইসরায়েল হুশিয়ারি দেয়, সওয়েইদা থেকে সরকারি বাহিনী সরে না আসলে হামলার মাত্রা আরও বাড়াবে তারা।

পর্যবেক্ষক সংস্থা জানায়, ইসরায়েলি হামলায় দামেস্কে ৩ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

সিরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম সানা জানায়, সরকারি সেনা প্রত্যাহারের পরও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থেকেছে। সওয়েইদার শহরতলিতে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালানোর অভিযোগ এসেছে।

দ্রুজদের দোষারোপ

সোয়েইদা প্রদেশে ছবির জন্য পোজ দিচ্ছেন দ্রুজ যোদ্ধারা। ছবি: এএফপি
সোয়েইদা প্রদেশে ছবির জন্য পোজ দিচ্ছেন দ্রুজ যোদ্ধারা। ছবি: এএফপি

চলমান সংঘাতের জন্য সিরিয়ার প্রশাসন সওয়েইদার দ্রুজ যোদ্ধাদের দায় দিয়েছে।

এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ 'দুষ্কৃতিকারীদের' যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে বেসামরিক মানুষের ওপর 'ভয়াবহ সহিংসতা' চালানোর অভিযোগ আনে।

প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে ইসরায়েলকে হুশিয়ার করে বলা হয়, 'সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে ও অযাচিতভাবে নাক গলাচ্ছে ইসরায়েল। এতে গোলযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা বাড়ছে এবং এ অঞ্চলের পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Sadarghat launch terminal: Once a thriving riverport now barely afloat

With the rise of modern highways and faster road travel, the once-bustling river port is witnessing a sharp drop in passenger traffic

11h ago