আসল পশমিনা শাল চিনবেন যেভাবে

পশমিনা শাল
ছবি: ইউএনবি থেকে নেওয়া

আরামদায়ক উষ্ণতা ও নান্দনিক কারুকাজের মেলবন্ধনে চাদর বা শাল প্রতি শীতেই থাকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। এগুলোর মধ্যে অভিজাত শ্রেণির আলাদা দৃষ্টি থাকে পশমিনা শালের দিকে। দেহাবরণটির প্রধান উপাদান পশমিনার নমনীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য এর রয়েছে জগৎ জোড়া খ্যাতি। কাপড়টি বোনা হয় চাংথাং মালভূমিতে চড়ে বেড়ানো চাংথাঙ্গি নামক পাহাড়ি ছাগলের পশম থেকে।

মালভূমিটির অবস্থান ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরের অঞ্চল লাদাখে, আর সেখান থেকেই মূলত এই পশমিনা বস্ত্রের উৎপত্তি। বর্তমানে আসলগুলোর পাশাপাশি নানা বৈচিত্র্যে অনেক আধুনিক সংস্করণও তোলা হয় বাজারগুলোতে। এগুলোর মধ্য থেকে কীভাবে আসল পশমিনা শালটি চিনে নেবেন, চলুন তা জেনে নেওয়া যাক।

আসল পশমিনা শাল চেনার কার্যকরী উপায়

নমনীয়তা যাচাই

পশমিনা কাপড়ের প্রধান ও অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর সূক্ষ্ম কোমলতা। অথচ এর উষ্ণতায় কোনো ঘাটতি পড়ে না। এর উপর আলতো করে হাত বুলিয়ে গেলে পাখির পালকের মতো হালকা অনুভূত হবে। একই সঙ্গে পুরো পৃষ্ঠে পাওয়া যাবে মসৃণতার সরব উপস্থিতি।

অপরদিকে, সিন্থেটিক বা মিশ্রিত উপাদানের শালগুলোর অধিকাংশই থাকে মোটা, অমসৃণ ও তুলনামূলকভাবে স্বল্প নমনীয়।

বুননের কাজ পর্যবেক্ষণ

এই শাল ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে হাতে বোনা হয়, যার ফলে বুননগুলো সামান্য অসমান হয়। মেশিনে তৈরি সিন্থেটিক শালগুলোর বুনন হয় ত্রুটিহীন এবং একই ধরনের। এই সূক্ষ্ম তারতম্যটি বোঝার জন্য কাপড়টি হাতে ধরে ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখতে হবে।

অবশ্য খাঁটি পশমিনার বুননের রেখাগুলোতে অসঙ্গতির নমনীয়তা এবং উষ্ণতার মানে কোনো প্রভাব ফেলে না। বরং তা যুগ যুগ ধরে কারুশিল্পীদের দক্ষতার কথা গর্বের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে।

কাপড়ের চকচকে ভাব যাচাই

সরাসরি সূর্যের আলোয় ধরলে যদি কাপড় চকচক করে, তবে বুঝতে হবে এতে সিল্ক, নাইলন বা অন্যান্য কৃত্রিম উপাদানের মিশ্রণ আছে। কারণ চাংথাঙ্গি ছাগলের পশম থেকে বানানো পশমিনা আলোকে প্রতিফলিত করার বদলে শোষণ করে নেয়। তাই সূর্যালোকের সংস্পর্শে এলে এগুলো চকচকে দেখাবে না।

সূক্ষ্ম হলেও এই কাপড় স্বচ্ছ নয় অর্থাৎ সূর্যালোক এতে প্রতিসরিত হয় না। বরং এটি রোদের আলোকে ঢেকে দিতে পারে।

উলের স্থির বিদ্যুৎ সংবেদনশীলতা নিরীক্ষা

শালের প্রান্ত দু আঙুলে ধরে আলতোভাবে ঘষে দেখতে হবে কাপড়ে থাকা উলের পশম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে কি না। কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় বানানো কাপড়ে ঘর্ষণের ফলে স্থির বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এতে করে উলের ফাইবারগুলো সংবেদনশীলতার কারণে সোজা দাঁড়িয়ে যায়।

কিন্তু আসল পশমিনা প্রাকৃতিক পশম দিয়ে তৈরি হওয়ায় ঘর্ষণ কোনো স্থির বিদ্যুতের সৃষ্টি করতে পারে না। তাই ঘর্ষণের জায়গায় উলের সূক্ষ্ম পশম না দাঁড়িয়ে যথাস্থানে অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকে।

শিখা পরীক্ষা

অন্যান্য পদ্ধতিগুলো প্রয়োগের পরে সন্দেহ থাকলে তবেই এই পরীক্ষাটি ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায় এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। খাঁটি পশমিনা শাল যাচাইয়ের জন্য একটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর পদ্ধতি। তবে পরীক্ষাটি করার সময় সতর্ক থাকা জরুরি।

খুব সতর্কতার সঙ্গে শাল থেকে একটি ছোট সুতা টেনে বের করে আগুনে পোড়াতে হবে। প্রকৃত পশমিনা পোড়ার সময় চুল পোড়ার মতো গন্ধ ছড়াবে। ধীরে ধীরে পুড়ে সূক্ষ্ম সুতাটি গুঁড়া ছাইতে পরিণত হবে। অন্যদিকে সিন্থেটিক ফাইবারগুলো পোড়ালে সেগুলো ধীরে ধীরে গলে যাওয়া শুরু করবে। এ সময় গলতে থাকা অংশগুলো থেকে প্লাস্টিকের মতো গন্ধ বের হবে।

পশমিনা শাল আসল না নকল তা চেনার জন্য স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলোর দিকে খেয়াল দেওয়াই যথেষ্ট। কারণ সূক্ষ্ম নমনীয়তা, সূর্যালোক শুষে নেওয়া এবং স্থির বিদ্যুতের প্রতি অসংবেদনশীলতা উপাদানগত দিক থেকে একে অতুলনীয় করে তোলে। আর এই বিশেষত্বটিই ফুটে উঠে উপরোক্ত পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে কাপড় যাচাইয়ের সময়। মূলত প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার বাইরে যেয়ে কৃত্রিমতা সংযোজনের ফলে কাপড়ে চাংথাঙ্গি ছাগলের পশমের স্বকীয়তা লোপ পায়। আর এই বিষয়টি যাচাই করার মাধ্যমে শালের উপাদান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

All killings, rights abuses must be probed

Volker Turk says about crimes committed before, after Aug 5

3h ago