ঈদের গয়নায় যেমন সাজ

ঈদের গয়না

এই উৎসবের মৌসুমে গয়না এমন এক অনুষঙ্গ যা ঐতিহ্যবাহী হোক বা আধুনিক—যেকোনো পোশাককে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে। এই উৎসবে নিজেকে সাজাতে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পরতে পারেন একটু ভিন্ন ডিজাইনের ব্রেসলেট, নজরকাড়া কানের দুল অথবা স্টাইলিশ পায়ের নূপুর। তাই এই ঈদে সবাইকে মুগ্ধ করতে গয়না বাছাইয়ের সময় কোন জিনিসগুলো মাথায় রাখবেন তাই জানাব আজ।

মালা

একটি সাধারণ পোশাককে আকর্ষণীয় করে তুলতে এবং সাজে উৎসবের আমেজ আনতে একটি নজরকাড়া মালা পরে ফেলুন। কুন্দন সেট বা কয়েক লহরের পোলকি নেকলেস বেছে নিতে পারেন। একটি সুন্দর ডিজাইনের মালা সাধারণ সিল্ক বা শিফনের পোশাককে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। গভীর গলা অথবা স্কুপ নেক পোশাকের সঙ্গে মানানসই একটি মালা আপনাকে যেমন আকর্ষণীয় করে তুলবে, তেমনি আপনার সাজে যোগ করবে আভিজাত্য।

তবে যদি খুব ঝলমলে সাজ না চান তাহলে একটি চিকন সোনার চেইন বা পার্ল নেকলেস বেছে নিতে পারেন। সোনা বা মুক্তোর এসব গয়নার চিরন্তন আবেদন তো আছেই। এগুলো আনারকলি জামা বা হাল আমলের কুর্তার সঙ্গেও দারুণ মানিয়ে যায়। আর আপনার প্যাস্টেল পোশাকের সঙ্গে হালকা ডিজাইনের অর্ধচন্দ্র বা হার্ট শেইপের পেনডেন্ট পরে ফেলতে পারেন।

কানের দুল

ঈদের সাজকে পরিপূর্ণ করতে এক জোড়া মনকাড়া কানের দুলের বিকল্প নেই। ঈদের পোশাকের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী লুক পেতে পরে ফেলুন ভারী ডিজাইনের ঝুমকা বা চাঁদবালি। এগুলোর ডিজাইনে সূক্ষ্ম নকশা থাকায় সেগুলো ভারী কাজ করা শাড়ি, সালোয়ার কামিজ বা কুর্তার সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যায়। একইসঙ্গে এগুলো আপনার পুরো সাজে ঐতিহ্যের ছোঁয়া যোগ করবে।

ভারী সাজ না চাইলে, হালকা স্বর্ণ বা রূপার রঙের ছোট স্টাড বা হুপ কানের দুল পরতে পারেন, যা ঝলমলে ডিজাইনের হালকা কাজ করা সালোয়ার কামিজের সঙ্গেও ভালো মানাবে। সহজেই পরা যায়, আবার ফ্যাশনেবল এমন কিছু চাইলে এই ছোট কানের দুলগুলো একেবারে আদর্শ। অনেক সময়, এই সাধারণ দুলগুলোই সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে।

আংটি

আংটির কদর অন্যান্য গয়নার চেয়ে কিছুটা কম হলেও এটি যেকোনো পোশাককে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষমতা রাখে। উজ্জ্বল রঙের পাথর দিয়ে তৈরি বা পেইসলি কিংবা ফুলের মতো ক্লাসিক ডিজাইনে সাজানো একটি বড় আকারের স্টেটমেন্ট রিং আপনার হাতকে আকর্ষণীয় করে তোলে। আনারকলি বা লেহেঙ্গার সঙ্গে হাতে এমন একটি আংটি আপনার ভেতরের ফ্যাশন ডিভাকে ফুটিয়ে তুলবে।

গয়না

উজ্জ্বল রঙের পোশাকের সঙ্গে বড় ধরনের রিং পরতে পারেন যা মোটা ব্রেসলেটের মাধ্যমে হাতের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। রুবি বা এমারেল্ড বসানো ভিন্ন নকশার গহনা বেছে নিলে সাজে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে।  পোশাকের ভারসাম্য বজায় রেখে অতিরিক্ত ঝলমলে গহনা এড়িয়ে চলতে চাইলে এবং সাজে হালকা গ্ল্যামার যোগ করতে পার্ল বসানো চিকন ব্যান্ড বা রিং একসঙ্গে পরার চেষ্টা করুন।

চুড়ি এবং ব্রেসলেট

বাঙালির ঈদের সাজের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো চুড়ি ও ব্রেসলেট। লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে সোনালি ও লাল রঙা চুড়ির কোনো জুড়ি নেই। এই গয়নাগুলোর জটিল নকশা ও ভারী ডিজাইন এগুলোকে জমকালো পোশাক, যেমন শাড়ি ও লেহেঙ্গার সঙ্গে পরার উপযুক্ত করে তোলে, পাশাপাশি সাজে ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের ছোঁয়া যোগ করে।

ঈদের গয়না

ঈদে বড় পাথর বসানো সোনার বা রুপার কড়া ব্রেসলেটও বেছে নিতে পারেন। রুপা, রোজ গোল্ড বা ম্যাট গোল্ডেন ব্রেসলেট আধুনিক লুকের জন্য দুর্দান্ত বিকল্প। আরও ক্লাসিক সাজের সঙ্গে একটু আধুনিকতা যোগ করতে চাইলে, পাতলা চুড়িগুলো স্তরে স্তরে পরতে পারেন বা হাতে একটি কাফ ব্রেসলেট জড়িয়ে নিতে পারেন। এটি হালকা ধরনের কাপড়, যেমন শিফন, কটন বা প্যাস্টেল রঙের সিল্কের সঙ্গে বেশ ভালো মানিয়ে যায়।

নূপুর এবং পায়ের আংটি

ঈদের ক্লাসিক স্টাইলের সঙ্গে ভালো মানিয়ে যায় এমন দুটি গহনা হলো পায়েল ও টো রিং। এগুলো হয়তো আপনার কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নাও মনে হতে পারে, তবে এগুলো সহজেই আপনার লুককে অন্যরকম করে তুলতে পারে।

পায়ে মৃদু রিনিঝিনি শব্দ যোগ করতে চাইলে, ছোট ছোট ঘণ্টা বা ঝুলন্ত কয়েনসহ পায়েল পরতে পারেন, যা আপনাকে আরও প্রাণবন্ত লুক দেবে। একটি সাধারণ লেহেঙ্গা বা শাড়ির সঙ্গে এই উৎসবমুখর অনুষঙ্গটি হবে বাড়তি সৌন্দর্যের ছোঁয়া।

তবে যদি আপনি সাধারণ লুক পছন্দ করেন, তাহলে একটি সিম্পল সোনার টো রিং বা চিকন রূপার পায়েল পরতে পারেন, যা আপনার পোশাকের সৌন্দর্য বাড়াবে, তবে একে ছাপিয়ে তুলবে না। হালকা গ্রীষ্মকালীন কাপড় ও প্যাস্টেল রঙের পোশাকের সঙ্গে এই ধরনের গয়না দারুণ মানিয়ে যায়।

আজকাল পায়েল ও টো রিং নেকলেস ও কানের দুলের সেটের সঙ্গেও পাওয়া যায়। তাই আপনার পুরো লুকে সামঞ্জস্য আনতে এগুলোর খোঁজ করুন।

চুলের অনুষঙ্গ

উৎসবে নিজেকে সবার চেয়ে আলাদাভাবে সাজিয়ে তুলতে চুলের অনুষঙ্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর বাঙালি নারীর সাজ মানেই বাহারি চুলের অনুষঙ্গ। একটি টিকলি দিয়ে চুলের সাজ পরিপূর্ণ করতে পারেন অথবা ঝলমলে ক্রিস্টাল খচিত মুকুটেও নিজেকে সাজিয়ে তুলতে পারেন। সাধারণ খোঁপা হোক বা ঢেউ খেলানো খোলা চুল, এ ধরনের অনুষঙ্গ আপনাকে মুহূর্তেই রানির মতো করে তুলবে।

সোনালি নকশার প্রজাপতি বা ফুলের নকশা করা বড় হেয়ার ক্লিপ আপনার কালো বা বাদামী চুলকে আরো সুন্দর করে তুলবে। মুক্তা খচিত হেয়ার ক্লিপ বা সাধারণ সোনার পিনও আধুনিক লুকের জন্য দারুণ বিকল্প হতে পারে। এ ধরনের অনুষঙ্গ উৎসবের আনন্দের সঙ্গে আভিজাত্য যোগ করবে।

কীসের সঙ্গে কী মেলাবেন

মনে রাখুন, ঈদের গয়নার সাজের মূল বিষয় হলো পরিমিতিবোধ। সুন্দর মার্জিত লুকের জন্য একটি হার, কাচের চুড়ি বা বালা এবং মানানসই কানের দুল ব্যবহার করতে পারেন।

যদি পোশাকটি সাধারণ হয়, তবে চুড়িদার বা সালোয়ার কামিজের সঙ্গে ঝলমলে গয়না পরা এড়িয়ে চলুন। একটি পেনডেন্ট হার বা সাধারণ কানের দুল আপনার পোশাকে পরিমিত ঔজ্জ্বল্য যোগ করার জন্য যথেষ্ট।

তাই এই ঈদে আপনার গয়না হোক আপনার ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন, যা একইসঙ্গে উৎসবের আনন্দকে আরো উজ্জ্বল করে তুলবে।

ছবি ও গয়নাঃ শৈলী বাই তাহমিনা শৈলী

অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম

 

Comments

The Daily Star  | English

Tribute to July uprising: Drone show lights up Dhaka's sky

In 12 vivid motifs, the July uprising came alive, tracing the heroism of Abu Sayed and the stirring role of women in the movement

8h ago