বিয়ের পর ওজন কেন বাড়ে, করণীয় কী

বিয়ের পর অনেকেরই ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়। বিয়ের আগে নিজেকে স্লিম ও কাঙ্ক্ষিত বিয়ের পোশাকে মানানসই দেখতে চায় সবাই। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফিটনেস রুটিন ভেঙে যায়। সেই কারণে ওজন বেড়ে যায়।
ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

বিয়ের পর অনেকেরই ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়। বিয়ের আগে নিজেকে স্লিম ও কাঙ্ক্ষিত বিয়ের পোশাকে মানানসই দেখতে চায় সবাই। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফিটনেস রুটিন ভেঙে যায়। সেই কারণে ওজন বেড়ে যায়।

যে কারণে বিয়ের পর ওজন বাড়তে পারে

• বিয়ের পর খাওয়া-দাওয়ার ধরন, খাওয়ার পরিমাণ, সময় সবকিছুই বদলে যায়। সেই কারণেও ওজন বাড়তে পারে

• নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাবার বাড়িতে যে ধরনের খাবারে অভ্যস্ত ছিলেন, শ্বশুরবাড়িতে এসে সেখানে হয়তে ভিন্নতা থাকে। এতে ইনটেসটাইনের ওপর চাপ পড়ে। ভিটামিন বি স্টোরেজের অবস্থা একেবারে শেষপ্রান্তে এসে পড়ে। শারীরিকভাবে তো বটেই, মানসিকভাবেও অশান্তি হয়। ফলে ওজন বাড়তে পারে।

• প্রথম কিছুদিন বিয়ের যাবতীয় অনুষ্ঠানের কারণে ঠিকমতো খাওয়া হয় না। তবুও মিষ্টি, কেক, কোক খাওয়ার পরিমাণ যায় বেড়ে। সেই কারণেও শরীরের অবস্থা নাজেহাল হয়ে যায়। বিপাকক্রিয়াও অস্থিতিশীল হয়ে যায়।

• বিয়ের পর অনেকে হানিমুনে যান। যতই ভ্রমণ, ততই বাইরে খাওয়া। ট্রেন, প্লেন, বাস সব জায়গাতেই প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড। এ ছাড়াও পেস্ট্রি, চিজ, সফট ড্রিংকস তো আছেই।

• যুক্ত হয় নতুন সংসারের স্ট্রেস। স্ট্রেস বিপাকক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। ওজন বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। ভিটামিন বি-র নিজস্ব কোনো ক্যালরি থাকে না। কিন্তু অন্য ক্যালরির বিপাকে ও খাবারের শক্তিকে আনলক করতে সাহায্য করে। তাই ভিটামিন বি-র পরিমাণ কমা মানেই পুরো শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার গরমিল হয়ে যাওয়া।

ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

• খাওয়ার সময়ে পরিবর্তন হলেই পরিবর্তন আসে ভিটামিন বি স্টোরে। প্রতিটি বি ভিটামিন মূলত বিপাকীয় প্রক্রিয়ার জন্য একটি কোএনজাইম।

• বিয়ের সঙ্গে নতুন পরিবার ও বন্ধু মহল তৈরি হয়। ফলে সেসময় দাওয়াতে যেতে হয় বেশি। 'একটু খেলে কিছু হয় না' এমন কথায় অনেকেই বেশি খেয়ে ফেলেন। ফলে ওজনও বৃদ্ধি পায়।

• খাবার যাতে নষ্ট না হয়, তাই অনেক নারীই এক বেলায় রান্না করা খাবার অন্য বেলাতেও খেয়ে থাকেন। এটিও ওজনবৃদ্ধির একটি সাধারণ কারণ।

• বিয়ের আগে অনেকেই জিম, যোগব্যায়াম, জুম্বা বা অ্যারোবিক্সের মতো শরীরচর্চায় সময় দিয়ে থাকেন। কিন্তু বিয়ের পর অনেকেই তা বন্ধ করে দেন।

ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধে যেসব বিষয় মেনে চলতে পারেন

• সময়মতো খেতে হবে। বিশেষ করে শরীর যে সময়ে খেয়ে অভ্যস্ত।

• ১৫ দিনে অন্তত একবার নিজের পছন্দের খাবার খেতে পারেন।

• বিয়ের পর ভিটামিন বি সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যায়। চা-কফির পরিমাণ কমিয়ে, সকালে দুধ খাওয়াও অভ্যাস করতে পারেন। দুধে বেশি পরিমাণে ভিটামিন বি থাকে।

• ফিটনেস নিজের জন্য, নিজেকে ভালো রাখার জন্য, এই বিশ্বাস মাথায় রেখে ডায়েট, ইয়োগা বা জিম যা আগে করে অভ্যস্ত ছিলেন, তা করতে হবে সময় বের করে।

• নিয়মমাফিক খাওয়া এবং ব্যায়াম সত্ত্বেও শরীরের ওজন বাড়তে পারে ঘুমের অভাবে। ঘুমের অভাবে বিপাক ধীর হয় এবং ক্ষুধার হরমোন 'ঘেরলিন' বৃদ্ধি পায়। এলোমেলো হয় স্ট্রেস হরমোন 'কর্টিসল'। যার ফলে ওজন বৃদ্ধি বিশেষ করে মেদ বাড়ে। ঘুমের অভাব সরাসরি ওজনবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত, তাই প্রতিদিন অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

• জিমে আগ্রহী না হলে, দম্পতি হিসেবে একসঙ্গে করা যায় এমন ব্যায়াম পরিকল্পনা করতে পারেন। নাচের ক্লাসে যোগদান, ট্রেকিংয়ে যাওয়া, একসঙ্গে হাঁটা কিংবা যোগাসন। এতে একজন আরেকজনকে অনুপ্রেরণা দেওয়ারও সুযোগ হবে।

• কিছুটা সময় ব্যয় করে খাদ্যপণ্যের পুষ্টির লেবেলগুলো পড়ার চর্চা শুরু করুন। কারণ সেখানে স্পষ্টভাবে মোট ক্যালরি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট সামগ্রী, সোডিয়াম বা চিনির মাত্রা বিস্তারিতভাবে লেখা থাকে। এতে ডায়েটে ট্রান্সফ্যাট তৈরির সম্ভাবনা দূর করতে সক্ষম হবেন। ট্রান্সফ্যাট এমন একটি উপাদান যা শুধুমাত্র দ্রুত ওজন বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায় এবং শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে পেটের অংশে মেদ জমা করে।

• রাতের খাবার দ্রুত খেতে হবে। কারণ বিপাকক্রিয়া সন্ধ্যার দিকে কমে যায়। দেরিতে খাবার খাওয়ার ফলে শরীর অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করার সুযোগ না পেয়ে তা ফ্যাট হিসেবে সঞ্চয় করে।

• পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট দিয়ে তৈরি খাবার ক্যান্ডি, সাদা রুটি, পিৎজা, ডোনাট, কুকি, বার্গার, চকলেট ইত্যাদি ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায় এবং এতে প্রচুর ক্যালরি থাকে। যা দ্রুত কোষে চর্বি হিসেবে জমা হয়। ওজনবৃদ্ধি এড়াতে খেতে হবে জটিল এবং অপরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট।

• ডিম, ফর্টিফায়েড সিরিয়াল, সি-ফুডেও ভিটামিন বি পাওয়া যাবে। সঙ্গে ক্যালশিয়াম সাপ্লিমেন্টও খেতে পারেন।

প্রয়োজনে পুষ্টিবিদ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সহায়তা নিতে হবে। অন্য কোনো জটিলতা থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে নিতে হবে নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা।

Comments