স্বাস্থ্যকর চুলের ৫ আয়ুর্বেদিক রহস্য

কয়েক দশক আগেও দক্ষিণ এশীয়রা সবচেয়ে সুন্দর, উজ্জ্বল আর ঘন চুলের অধিকারী ছিল। তবে দূষণের হার বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মান, জলবায়ু ভারসাম্যহীনতার কারণে সৃষ্ট আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ চুলের স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
ছবি: সংগৃহীত

কয়েক দশক আগেও দক্ষিণ এশীয়রা সবচেয়ে সুন্দর, উজ্জ্বল আর ঘন চুলের অধিকারী ছিল। তবে দূষণের হার বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মান, জলবায়ু ভারসাম্যহীনতার কারণে সৃষ্ট আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ চুলের স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এরপরও আশার কথা হলো, এশীয়দের আয়ুর্বেদের অনেক গোপন রহস্য জানা রয়েছে। আমাদের চুলের হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার উপাদানগুলো কিন্তু আছে আমাদের রান্নাঘরের তাকেই।

আমলকি

আমলকি এমন একটি ফল যা চুলকে সতেজ করে এবং চুলে শক্তি যোগায়। এর ভিটামিন, খনিজ, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট মাথার ত্বকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলের গোড়াকে শক্তিশালী করে। আমলকি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি অ্যাসিডে পূর্ণ, যা খুশকি কমাতে সাহায্য করে এবং চুল থেকে ময়লা ও অতিরিক্ত তেল চিটচিটে ভাব দূর করে। নিয়মিত চুলে তেলের সঙ্গে আমলকির নির্যাস ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। উপাদানটি অকালে চুল পাকা রোধ করতে পারে।

ভৃঙ্গরাজ

ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রনের মতো চুলের যত্নের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর মোটামুটি সব কটিই পাওয়া যায় ভৃঙ্গরাজের মধ্যে। এটি আর্দ্র অঞ্চলের একটি ভেষজ উদ্ভিদ, যা 'চুলের রাজা' নামেও পরিচিত। ভেষজটিতে ফ্ল্যাভোনয়েডস, ফাইটোস্টেরল এবং বিভিন্ন ধরণের চুল-বান্ধব উপাদান রয়েছে যা চুল পড়া কমায়। চুলের গোড়ার মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে প্রাকৃতিকভাবে চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে, ফলিকলকে সক্রিয় করে। এছাড়াও ভেষজটিতে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা খুশকি এবং মাথার ত্বকের সংক্রমণ কমায়। এটি বেশিরভাগ সুপারস্টোরে গুঁড়ো আকারে সহজেই পাওয়া যায়।

মেথি

এটি একটি সাধারণ রান্নার উপাদান। মেথি সারা বছরই পাওয়া যায়। মেথির অসাধারণ ঔষধি গুণাবলী রয়েছে এবং চুলের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী। এতে আয়রন, প্রোটিন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে যা চুলকে পুষ্টি দেয় এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে নিকোটিনিক অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা খুশকি ও চুল পড়া কমায়। মেথিতে ভিটামিন এ, সি, কে, ফলিক অ্যাসিড, ফ্ল্যাভোনয়েড ও স্যাপোনিনে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা চুলের শুষ্কতার মতো মাথার ত্বকের সমস্যা নিরাময় করতে সহায়তা করে। এটি  টাক পড়া এবং চুল পাতলা হয়ে যাওয়াও রোধ করে। মেথি চুলের দ্রুত ও স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধির জন্য চুলের ফলিকলকেও পুষ্ট করে।

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী

অ্যালোভেরা চুলের বিভিন্ন চিকিৎসায় কাজে লাগে। এতে ফ্যাটি অ্যাসিড উপাদান রয়েছে যা মাথার ত্বকের সংক্রমণ এবং শুষ্কতা নিরাময় করে। অ্যালোভেরাতে ভিটামিন এ, সি এবং ই রয়েছে যা চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং চুলের ফলিকলগুলোকে ভেতর থেকে মেরামত ও পুনরুজ্জীবিত করে। এটি ভিটামিন বি ১২ এবং ফলিক অ্যাসিডের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা চুল পড়া রোধ করতে পারে এবং মাথার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চুলকানি, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস এবং অতিরিক্ত তেল নিঃসরণকে কমাতে পারে। এছাড়া, অ্যালোভেরাতে শীতল করার গুণাবলি রয়েছে যা মাথার ত্বককে হাইড্রেট এবং ময়েশ্চারাইজ করে।

ব্রাহ্মী

সাধারণত মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে ব্যবহৃত হয় ব্রাহ্মী। এটি চুলের টনিক হিসেবেও দারুণ। শুকনো এবং গুঁড়ো করা ব্রাহ্মী চুলের হেয়ার প্যাক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা চুলের বৃদ্ধি এবং চুল ঘন হতে সাহায্য করে। ব্রাহ্মী পাতা ও নারকেল তেল একসঙ্গে গরম করে নিয়ে মাথার ত্বকে প্রয়োগ করলে খুশকির সমস্যা কমে। সুপার শপগুলোতে গুঁড়ো হিসেবে যেমন পাওয়া যায় তেমনি ব্রাহ্মী শাক হিসেবেও পাওয়া যায়।

অনুবাদ করেছেন আসিয়া আফরিন চৌধুরী

Comments