যে ১০ ভুলে ক্ষতি হতে পারে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের

মাইক্রোওয়েভ ওভেনের যথাযথ যত্ন নিলে অন্তত ১০ বছর নির্বিঘ্নে ব্যবহার করা যায়।
ছবি: সংগৃহীত

মাইক্রোওয়েভ ওভেনের যথাযথ যত্ন নিলে অন্তত ১০ বছর নির্বিঘ্নে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ব্যবহারের ভুলের কারণে বা সঠিক যত্নের অভাবে অনেক সময় মাইক্রোওয়েভের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন না অনেকে।

চলুন জেনে নিই এই ভুলগুলো-

পরিষ্কার করতে অনীহা

মাইক্রোওয়েভ সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। রান্নাঘরের জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করাটা হয়তো খুব আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা না, তবে মাইক্রোওয়েভের বেলায় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি হয়তো অনেক নোংরা হলে মাইক্রোওয়েভ পরিষ্কার করেন। কিন্তু প্রতিদিন ব্যবহারের পর যে ছোটখাট খাদ্যকণা ও অন্যান্য অবশিষ্টাংশ ভেতরে পড়ে থাকে, সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে রাখা ভালো। তা না হলে অবশিষ্টাংশ পরবর্তী ব্যবহারের সময় শক্তি টেনে নেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে এগুলো থাকলে মাইক্রোওয়েভের ভেতরের দিকের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যেতে পারে।

এ ছাড়া, ব্যবহারের পর খাবারের অবশিষ্টাংশ পরিষ্কার না করলে মাইক্রোওয়েভকে প্রতিবার সেগুলো গরম করার জন্য বাড়তি শক্তি খরচ করতে হয়। যা এই যন্ত্রটির জন্য দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনতে পারে।

নির্দিষ্ট কিছু খাবার মাইক্রোওয়েভে দেওয়া

মাইক্রোওয়েভ ব্যবহারের আগে ভালোভাবে জানতে হবে কোন খাবার এটিতে দেওয়া যাবে আর কোনটি দেওয়া যাবে না। ডিম বা আলুর মতো কিছু খাবার মাইক্রোওয়েভে দিলে প্রচুর চাপ উৎপন্ন হয়ে ফেটে যেতে পারে। এগুলো যদি মাইক্রোওয়েভের ভেতর ফেটে যায় তাহলে ভেতরে এক ধরনের শকওয়েভ তৈরি হতে পারে, যা ক্ষতিকর।

অনুপযুক্ত পাত্র ব্যবহার করা

আপনি শুধু খাবারই মাইক্রোওয়েভে দিচ্ছেন না, কোনো না কোনো পাত্র ব্যবহার করছেন। এমন কোনো পাত্র ব্যবহার করা উচিত না, যা মাইক্রোওয়েভের জন্য ক্ষতিকর। ধাতব কোনো কিছু দেওয়া মাইক্রোওয়েভের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অন্যান্য উপাদানও ক্ষতি করতে পারে।

মাইক্রোওয়েভে দেওয়ার যোগ্য না, এমন যেকোনো প্লাস্টিকের পাত্র এড়িয়ে চলতে হবে। ভেতরে যদি সামান্য পরিমাণ প্লাস্টিকও গলে যায়, তাহলেও বড় ক্ষতি হতে পারে। এতে খাবারেরও ক্ষতি হতে পারে।

অনেক জোরে মাইক্রোওয়েভের দরজা আটকানো

মাইক্রোওয়েভ থেকে খাবার বের করার পর অনেকেই কনুই দিয়ে এটির দরজা আটকান। এতে ২টি জিনিস ঘটতে পারে। ১ হচ্ছে দরজা খুব জোরে আটকে যেতে পারে এবং ২ হচ্ছে দরজা ঠিকমতো না আটকানোর আশঙ্কা থাকে। ২টি বিষয়ই ক্ষতিকর।

মাইক্রোওয়েভের দরজা খুব জোরে আটকাতে গেলে দরজার বিভিন্ন মেকানিজম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার ঠিকমতো না আটকালেও তাপ ঠিকমতো ভেতরে থাকে না। তাই খুব জোরে মাইক্রোওয়েভের দরজা আটকানো উচিত নয়।

ভেতরে কিছু না দিয়েই মাইক্রোওয়েভ চালু করে দেওয়া

অনেক সময় কয়েক সেকেন্ড বাকি থাকতেই অনেকে মাইক্রোওয়েভ বন্ধ করে দেন। এটা ক্ষতিকর। আবার অনেক সময় ভুলবশত ভেতরে কোনো খাবার না দিয়েই মাইক্রোওয়েভ চালু করে দেন অনেকে। এক্ষেত্রে নজরে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাইক্রোওয়েভ বন্ধ করে দিন। ভেতরে কিছু না থাকলে মাইক্রোওয়েভ নিজেই নিজের উৎপাদিত শক্তি শোষণ করে, যা খুবই ক্ষতিকর।

ভুল সার্কিট ব্যবহার করা

রান্নাঘরে অনেকগুলো সার্কিট থাকতে পারে। অনেকেই যখন যে সার্কিট সুবিধা, সেটি ব্যবহার করেন। কিন্তু মাইক্রোওয়েভে এমন কোনো সার্কিটে ব্যবহার করা উচিত নয়, যে সার্কিটে কিচেনের অন্যান্য ভারী মেশিন চলে। ভারী কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সের জন্য অবশ্যই আলাদা আলাদা সার্কিট ব্যবহার করা উচিত। সার্কিট যদি যথার্থ না হয়, তাহলে বৈদ্যুতিক প্রবাহের সমস্যার কারণে মাইক্রোওয়েভের ক্ষতি হতে পারে।

ওয়েট লিমিট অতিক্রম করা

প্রতিটি মাইক্রোওয়েভের ওয়েট লিমিট থাকে। এজন্যই আমরা বলি ১০ লিটার বা ২০ লিটারের মাইক্রোওয়েভ ওভেন। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি খাবার কিংবা বড় কোনো ফ্রোজেন খাবার মাইক্রোওয়েভে দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন। অনেক বেশি খাবার কিংবা অনেক বড় ফ্রোজেন খাবার মাইক্রোওয়েভে দিলে বাড়তি চাপ পড়ে। ফলে মোটরসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

মাইক্রোওয়েভের চারপাশে কিছুটা ফাঁকা জায়গা না রাখা

অনেকেই মাইক্রোওয়েভের ওপর কিংবা এর আশেপাশে কোনো জায়গা না ছেড়েই অনেক কিছু রাখেন। এতে মাইক্রোওয়েভে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে না। যদি মাইক্রোওয়েভের হিট ভেন্ট (যেদিক দিয়ে গরম তাপ বের হয়) কোনো দেয়ালের সঙ্গে লাগানো থাকে বা এমন পরিস্থিতিতে থাকে, যেখান থেকে বাতাস বের হতে পারে না, তাহলে এটি খুব কম সময়ে গরম হয়ে যেতে পারে। তাই হিট ভেন্ট সবসময় উন্মুক্ত রাখা ভালো।

নির্দেশনা অনুসরণ না করা

প্রতিটি মাইক্রোওয়েভের সঙ্গে একটি নির্দেশনা দেওয়া থাকে। ওই নির্দিষ্ট মাইক্রোওয়েভটি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, কীভাবে ব্যবহার করা যাবে না তার বিস্তারিত বর্ণনা থাকে নির্দেশনায়। অনেকেই এটি ভালোভাবে পড়ে দেখেন না। মাইক্রোওয়েভ ব্যবহারের আগে সবার উচিত ভালোভাবে নির্দেশনা পড়ে নেওয়া। তাহলে অনেক অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।

স্টেইনলেস স্টিলের পাত্র দেওয়া

স্টেইনলেস স্টিলের কোনো পাত্র মাইক্রোওয়েভে দেওয়া উচিত নয়। কারণ এ ধরনের পাত্র তরঙ্গকে প্রতিফলিত করে। মাইক্রোওয়েভ চালুর পর যে তরঙ্গ উৎপন্ন হয়, সেগুলো স্টেইনলেস স্টিলের পাত্র ও মাইক্রোওয়েভের পৃষ্ঠদেশের মধ্যে চলাচল করে। এটি মাইক্রোওয়েভের জন্য ক্ষতিকর।

তথ্যসূত্র: রিডার্স সাইজেস্ট

Comments