মাইক্রোওয়েভ ওভেনে দেবেন না এই ৫ জিনিস

অতি উৎসাহী হয়ে সবকিছুই ওভেনে দিয়ে দেওয়া যাবে না। বিশেষ কিছু জিনিস তো একেবারেই না।
ছবি: সংগৃহীত

রান্নাঘরে অনেকদিন ধরেই মাইক্রোওয়েভ ওভেন আমাদের অন্যতম সঙ্গী হয়ে উঠেছে। আগের বেলার খাবারটা একটু গরম করে নেওয়া, ঘরেই পিজ্জা-পাস্তা বানানোসহ আরও নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হেঁশেল গমগম করে বাহারি সুবাসে। কিন্তু অতি উৎসাহী হয়ে সবকিছুই ওভেনে দিয়ে দেওয়া যাবে না। বিশেষ কিছু জিনিস তো একেবারেই না।

দেখে নেওয়া যাক, কোন বস্তুগুলো মাইক্রোওয়েভ ওভেনে দেওয়া যাবে না।

প্লাস্টিকের পাত্র

আমাদের তাড়াহুড়োর জীবনে পরিবেশের ভালো-মন্দ খুব একটা পাত্তা না দিয়ে যে পাত্র বোধহয় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি, তা হচ্ছে প্লাস্টিক। ঘরে-বাইরে প্লাস্টিকের বাটি, কাপ, গ্লাস, প্লেট, টিফিন বাক্স– বহু ধরনের তৈজসই ব্যবহৃত হয়। তবে কোনোভাবেই প্লাস্টিকের পাত্রে থাকা খাবার মাইক্রোওয়েভে গরম করতে দেওয়া যাবে না।

প্লাস্টিকের পাত্র থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মাইক্রোওয়েভে উত্তপ্ত হয়ে খাবারে ছড়িয়ে যেতে পারে। প্লাস্টিক গলে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি হোক বা রান্নাঘরের বাড়তি ঝক্কি, প্লাস্টিক মোটেও সহায়ক নয়। তাই খাবার প্লাস্টিকের পাত্রে সংরক্ষণ করা হলেও ওভেনে গরম করে নেওয়ার জন্য কাঁচের বা সিরামিকের পাত্রে নেওয়া ভালো হবে। প্লাস্টিকের মতো এসব পাত্রে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে না।

 

আঙুরজাতীয় ফল

গল্পে পড়া সেই শেয়ালের মতোই মাইক্রোওয়েভের কাছেও 'আঙুর ফল ভীষণ টক'! কারণ এই ছোট ছোট ফলগুলোই রান্নাঘরে বাঁধিয়ে দিতে পারে এক তুলকালাম কাণ্ড। অর্ধেক করে কেটে রাখা আঙুরজাতীয় যেকোনো ফলই যদি ওভেনে দেওয়া হয়, তাহলে একটা সময় এর মধ্যকার পানি আর লবণ উপাদান মিলিত হয়ে এক ধরনের প্লাজমা তৈরি করে। এই প্লাজমা আবার বেশ ভালোরকম বিদ্যুৎ পরিবাহী, তাই এ থেকে স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি এবং আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।

অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল

এটি ভুল ধারণা যে টেক-অ্যাওয়ে খাবার-দাবার অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে থাকা অবস্থাতেই ওভেনে দিয়ে গরম করে ফেলা যায়।

মাইক্রোওয়েভ যখন ধাতব পদার্থের সংস্পর্শে আসে, তখন স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয় এবং তা থেকে আগুন লাগার আশঙ্কা আছে। এর পেছনের বৈজ্ঞানিক কারণ হচ্ছে, ধাতব পদার্থে মাইক্রোওয়েভ প্রতিফলিত হয় এবং এতে করে তীব্র বিদ্যুৎ প্রবাহ উৎপন্ন হয়। এইক্ষেত্রে উৎপন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহ অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের মধ্য দিয়ে বয়ে যাবে, যা থেকে এক পর্যায়ে আগুন লেগে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, খুব কম সময়ের জন্য ক্ষুদ্র পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম চাইলে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে দেওয়া যেতে পারে। তবে সাবধানের মার নেই। তাই এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেকোনো টেক-অ্যাওয়ে খাবার থেকে আবরণটা ছাড়িয়ে নিয়ে তবেই ওভেনে দেওয়া ভালো।

ধাতব পাত্র

আমাদের রান্নাঘরে ধাতব পাত্রের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ার মতো। কিন্তু কোনোভাবেই এসব পাত্রকে সরাসরি মাইক্রোওয়েভের ভেতর দেওয়া যাবে না। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের মতোই এসব পাত্র মাইক্রোওয়েভের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখায়, এক্ষেত্রে প্রভাবটা বরং আরও তীব্র ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়। আগুন লাগার আশঙ্কার পাশাপাশি ওভেনে থেকে এসব পাত্র অতিরিক্ত উত্তপ্ত হবার কারণে হাত পুড়ে যাবার মতো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।

যদি ধাতব পাত্র ব্যবহারের কারণে আগুনের ফুলকি দেখা যায়, তবে মাইক্রোওয়েভ বন্ধ করে দিতে হবে এবং ভারি দস্তানার সাহায্যে খুব সাবধানে পাত্র বের করে আনতে হবে।

স্টাইরোফোম

আজকাল অনেক রেস্তোরাঁ, ক্যাটারিং সার্ভিস বা ঘরোয়া পরিসরের অনুষ্ঠানেও স্টাইরোফোমের পাত্র বেশ জনপ্রিয়। এটিও এক ধরনের প্লাস্টিক, তবে আমাদের পরিচিত প্লাস্টিক থেকে একটু আলাদা। বিরিয়ানি, কাচ্চি, খিচুড়ি ইত্যাদি খাবার ঠিকঠাক পরিমাণে ও স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে পরিবেশন বা বহন করতে অনেকেই স্টাইরোফোমের পাত্র বেছে নেন। কিন্তু ব্যবহারের দিক দিয়ে অত্যন্ত সুবিধাজনক হলেও ওভেনের জন্য একেবারেই সুবিধার নয় এই পাত্রটি। ওভেনে গরম করতে দিলে স্টাইরোফোম খুব সহজে গলে যায় এবং রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি খাবারে মিশে যায়, যা থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো মুশকিল।

এ ছাড়া অতিরিক্ত পুড়ে গিয়ে স্টাইরোফোমের বিভিন্ন অংশ লেগে গিয়ে মাইক্রোওয়েভ ওভেনটিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এসব সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি এড়াতে একটু কষ্ট করে নিরাপদ পাত্রে খাবার সরিয়ে নেওয়াই বিচক্ষণের কাজ হবে।

Comments