ভাতের সঙ্গে প্রতিদিন কাঁচা মরিচ খাওয়া কি ভালো

জানিয়েছেন মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।
ভাতের সঙ্গে কাঁচামরিচ খাওয়া কি ভালো
ছবি: সংগৃহীত

দেশি রান্নায় ব্যবহৃত একটি অপরিহার্য উপাদান কাঁচা মরিচ। রান্নায় ব্যবহারের পাশাপাশি ভাতের সঙ্গে, সালাদের সঙ্গেও কাঁচা মরিচ খান অনেকে।

চলুন জেনে নিই কাঁচা মরিচ খাওয়ার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ এবং এটি প্রতিদিন কাঁচা খাওয়া ভালো কি না সেই বিষয়ে। জানিয়েছেন মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান

কাঁচা মরিচের পুষ্টিগুণ

পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী জানান, কাঁচা মরিচ শরীরের অনেক উপকার করে।

কাঁচা মরিচে থাকে ক্যাপসাইকিন, যা মূলত মরিচকে ঝাল করতে ভূমিকা রাখে। কাঁচা মরিচে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, কে, বি৬, থিয়ামিন, রিবোফ্লাবিন, নিয়াসিন এবং ফলেট, সোডিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি খনিজ উপাদান। এ ছাড়াও রয়েছে প্রচুর ডায়াটারি ফাইবার, পানি, অল্প পরিমাণে কার্বহাইড্রেট ও প্রোটিন।

উপকারিতা

  • ডায়াটারি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় কাঁচা মরিচ হজমের জন্য খুবই উপকারী। এটি খেলে স্যালাইভার উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ফলে গ্যাস, অম্বল এবং বদহজমের মতো সমস্যা দূর হয়।
  • শীতের মৌসুমে ঠান্ডার সমস্যা, সাইনাসের সমস্যা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে কাঁচা মরিচ। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি শরীরকে জ্বর, সর্দি, কাশি থেকে রক্ষা করে।
  • কাঁচা মরিচ মেটাবলিজম বাড়িয়ে ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে। মরিচে থাকা বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন দেহে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিহত করে।
  • কাঁচা মরিচের ক্যাপসাইকিন খাদ্যে থাকা উচ্চমাত্রার চর্বিকে ধ্বংস করে ফেলে। চর্বি জাতীয় খাবারের সঙ্গে কাঁচা মরিচ খেলে শরীরে মেদ জমতে পারে না। নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে শরীরে জমে থাকা ফ্যাট গলতে শুরু করে।
  • নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়ে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • কাঁচা মরিচে থাকা বিভিন্ন উপাদান রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি কমায়। ফলে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিহত হয়।
  • এতে থাকা ভিটামিন এ হাড়, দাঁত ও মিউকাস মেমব্রেনকে ভালো রাখে। ভিটামিন সি মাড়ি ও চুলের সুরক্ষা করে।
  • কাঁচা মরিচের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকে বলিরেখা পড়তে দেয় না। ত্বক ও চুল উজ্জ্বল করে।
  • মরিচ খাওয়ার সঙ্গে শরীরে এন্ডোরফিন নামের হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এ হরমোনের প্রভাবে স্ট্রেস কমতে শুরু করে এবং মন মেজাজ ও সতেজ হয়।
  • কাঁচা মরিচের উপাদান শরীরের প্রদাহ দূর করে দূরে এবং আলসারের মত রোগকে দূরে রাখতে সহায়তা করে।
  • গ্রীষ্মকালে শরীর ঠান্ডা রাখতে কাঁচা মরিচ অত্যন্ত উপকারী। মশলা জাতীয় খাবারের সঙ্গে কাঁচ মরিচ খেলে তা ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীর ঠান্ডা থাকে।

প্রতিদিন কাঁচা মরিচ খাওয়া কি ভালো? রান্না করলে বি ভিটামিন কমে যায়?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, কাঁচামরিচের ব্যবহার এই মহাদেশে সবচেয়ে বেশি হয়। কাঁচামরিচ আমরা কাঁচা খাই, আবার রান্না করেও খাই। রান্না করে খেলে কাঁচা মরিচের কিছুটা পুষ্টিগুণ কিছুটা কমে যায়। কাঁচা অবস্থায় খেলে কিছু কিছু ভিটামিন সরাসরি পাওয়া যায়, উপকারিতা বেশি।

ডা. আতিকুর রহমান বলেন, প্রতিদিন ভাতের সঙ্গে রান্না না করা কাঁচা মরিচ খাওয়া অবশ্যই ভালো। এর উপকারিতা অনেক। প্রতিদিন কাঁচামরিচ কী পরিমাণ খাবেন তা নির্ভর করে ব্যক্তির ওপর। কেউ ঝাল বেশি খান, কেউ কম খান, আবার কেউ ঘ্রাণের জন্যই কাঁচামরিচ খেতে পছন্দ করেন ভাতের সঙ্গে। দিনে অন্তত একটি কাঁচামরিচ খেলেও তা শরীরের উপকারে আসে, রুচিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।

তবে বেশি ঝাল খাওয়ার সময় খাদ্যনালীর কথা মাথায় রাখতে হবে। বেশি ঝাল খেলে মুখে যেমন ঝাল অনুভূত হয় তেমনি খাদ্যনালীতেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই যত উপকারিতাই থাকুক, যেকোনো কিছুই বেশি পরিমাণে খাওয়া ঠিক নয়। পরিমিত খাওয়া উচিত।

 

Comments