রোজায় কী ধরনের শরবত ও পানীয় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো

রোজায় কী ধরনের শরবত ও পানীয় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো
ছবি: সংগৃহীত

সারাদিন রোজা রেখে তৃষ্ণা মেটাতে প্রয়োজন পানি ও পানীয়।  ইফতারে বিভিন্ন ধরনের শরবত ও পানীয় খেতে পছন্দ করে সবাই। কিন্তু সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত কি না এ ব্যাপারেও খেয়াল রাখা উচিত।

ইফতারে কোন ধরনের পানীয় শরীরের জন্য উপকারী এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ল্যাবএইড আইকনিকের সিনিয়র পুষ্টিবিদ ফাহমিদা হাশেম।

পুষ্টিবিদ ফাহমিদা হাশেম। ছবি: সংগৃহীত

ফাহমিদা হাশেম বলেন, রোজা রেখে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। যেহেতু লম্বা সময় ধরে পানি না খেয়ে থাকা হয়, সেহেতু পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পানি ও পানীয় গ্রহণের পাশাপাশি পানি জাতীয় সবজিও খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। এতে সারাদিন শরীর হাইড্রেটেড থাকবে।

সাদা পানি: স্বাস্থ্যকর পানীয়র মধ্যে প্রথমেই থাকবে সাদা পানি। চিনি, লবণ ছাড়া শুধু সাদা পানি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বাস্থ্যসম্মত পানীয়। ইফতারের শুরুতেই সাদা পানি খান।

ডাবের পানি: রোজার সময় দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থেকে কাজ করার ফলে ঘাম হয়। ফলে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স হয়। ডাবের পানি প্রাকৃতিকভাবে মিনারেলস সমৃদ্ধ পানীয়। ইফতারে এক গ্লাস ডাবের পানি খেলে শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স হবে।

লেবু পানি: পানি ও লেবুর সঙ্গে এক চিমটি পরিমাণ লবণ, বিট লবণ বা পিংক সল্ট মিশিয়ে পান করতে পারেন। চিনি দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, চিনি শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই লেবু পানিও চমৎকারভাবে শরীরের ইলোকট্রোলাইট ব্যালান্স করতে সাহায্য করবে। সারাদিনে শরীরে যে ভিটামিন সির ঘাটতি তৈরি হয়, সেটিও পূরণ করবে এটি। ভিটামিন সির চাহিদা পূরণ হলে রোজার মাসে ঠান্ডা, জ্বর, কাশি হওয়ার ঝুঁকি একটু কমে যাবে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।

তেঁতুলের জুস: যাদের উচ্চ রক্তচাপ, হাইপারটেনশন আছে তাদের জন্য তেঁতুলের জুস একটি চমৎকার পানীয়। এতে অনেক ভিটামিন ও মিনারেলস থাকে। তেঁতুলের জুস যদি ইফতারের প্রধান খাবার খাওয়ার পরে খাওয়া হয়, তাহলে সেটি হজমে সাহায্য করবে এবং শরীরকে সতেজ করবে। শরীরের রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে এটি।

ফলের রস: বাসায় যেকোনো সতেজ ফলের জুস তৈরি করে খেতে পারেন। ফলের রস অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ এবং ভিটামিন ও মিনারেলসে ভরপুর। এই ফলের রসের মধ্যে ইসবগুল, তোকমা, চিয়াসিড যোগ করে খাওয়া হলে তখন সেটি ফাইবার সমৃদ্ধ পানীয় হবে। এ ধরনের পানীয় শরীরকে দীর্ঘক্ষণ হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।

লাচ্ছি ও লাবাং: টক দই দিয়ে তৈরি পানীয় প্রোবায়োটিকের খুব ভালো উৎস। রোজার মাসে প্রোবায়োটিক খুবই প্রয়োজন। কারণ এ সময় অনেক কম সময়ের মধ্যে অনেক খাবার খেয়ে ফেলা হয়। তখন এই প্রোবায়োটিক হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। অর্থাৎ অল্প সময়ের মধ্যে খাবার হজম করতে সাহায্য করে। লাবাংও তৈরি হয় টক দই দিয়ে। এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য লাবাং খুব ভালো কাজ করে।

গাজরের জুস: বিশেষ করে বাচ্চা ও বয়স্ক যারা রোজা রাখেন তাদের জন্য উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ পানীয় গাজরের জুস। গাজরের জুস বা স্মুদিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে।

হারবাল টি: ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত এক বা দুই কাপ হারবাল টি খেতে পারেন। গ্রিন টি, তুলসি টি ইত্যাদি হতে পারে। এগুলো খাবার হজম করতে সাহায্য করবে। ফ্যাট জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করা হলে বিএমআর বাড়িয়ে সেই ফ্যাটকে দ্রুত বার্ন করতে সাহায্য করে এগুলো।

আখের গুড়ের শরবত: পানির সঙ্গে আখের গুড় আর একটু লবণ মিশিয়ে শরবত তৈরি করা হলে এটি স্যালাইনের কাজ করে এবং রক্তের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে।

বেলের শরবত: যাদের শরীর বেশি ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয় তারা বেলের শরবত খাবেন। এটি খুবই উপকারী পানীয়। বেল যদি মিষ্টি না হয় তখন প্রয়োজনে চিনির বিকল্প উপাদান মিছরি, যষ্টিমধু, খেজুরের পাউডার, গুড় ইত্যাদি দিয়ে শরবত তৈরি করা যেতে পারে।

শেক: দুধ দিয়ে তৈরি করা যেকোনো শেক ইফতারে খেতে পারেন। এতে মেশাতে পারেন খেজুর, বাদাম, পেঁপে বা পছন্দের যেকোনো ফল। 

মনে রাখবেন, এসব পানীয়তে চিনি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে চিনির বিকল্প উপাদান ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই পানীয় স্বাস্থ্যকর হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi Migrant Workers Deaths Over The Years

In coffins, from faraway lands

Kazi Salauddin, a 44-year-old man from Cumilla, migrated to Saudi Arabia in October 2022, hoping to secure a bright future for his family. But barely a year later, Salauddin, the father of two daughters and a son, died suddenly.

10h ago