ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি বুঝবেন কীভাবে, কী খাবেন

ম্যাগনেসিয়াম
ছবি: সংগৃহীত

শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের মধ্যে একটি হচ্ছে খনিজ উপাদান বা মিনারেলস। মিনারেলসের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান ম্যাগনেসিয়াম।

ম্যাগনেসিয়াম শরীরের বিভিন্ন বিপাকে সহায়তাসহ অনেক প্রয়োজনীয় কাজে অংশগ্রহণ করে। শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের চাহিদা পূরণ না হলে অভাবজনিত সমস্যা দেখা দেয় এবং বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

কীভাবে বুঝবেন শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি আছে কি না? আর এই ঘাটতি পূরণে কী খাবার খাওয়া উচিত? এ বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন ল্যাবএইড আইকনিকের সিনিয়র পুষ্টিবিদ ফাহমিদা হাশেম।

শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের কাজ

তিনি বলেন, ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে শরীরে কী ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, তা জানতে আগে জানতে হবে ম্যাগনেসিয়ামের কাজ সম্পর্কে।

  • আমাদের শরীরে থাকা অসংখ্য এনজাইমের মধ্যে ৩০০টি এনজাইমের কো-ফ্যাক্টর হিসেবে ম্যাগনেসিয়াম কাজ করে। এটি এনজাইমের ক্রিয়ায় সাহায্য করে। পুষ্টি উপাদান কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট এগুলোর বিপাকে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম।এ ছাড়া গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিতে ভূমিকা রাখে।
  • শরীরে শক্তি উৎপাদনের জন্য খাদ্য থেকে এটিপি তৈরি হয়। এটিপি তৈরি এবং শক্তি সংরক্ষণে ম্যাগনেসিয়ামেন এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
  • শরীরের নতুন কোষ তৈরি, কোষের ক্ষয়পূরণ ইত্যাদি কাজে প্রোটিন প্রয়োজন। আর এই প্রোটিন সংশ্লেষণের কাজে ম্যাগনেসিয়াম সাহায্য করে।
  • মাংসপেশির সংকোচন প্রসারণ, হার্টবিটের ছন্দ বজায় রেখে হার্টকে সুস্থ রাখা, এবং সকল স্নায়ুর কার্যসম্পাদনে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম।
  • আমাদের শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম থাকে হাড়ের মধ্যে। এটি হাড়ের গঠন, হাড়ের ম্যাট্রিক্স সংশ্লেষণে কাজ করে।
  • ইনসুলিনের কার্যকারিতা সচল রাখতে ম্যাগনেসিয়াম কাজ করে। ইনসুলিনের কার্যক্রম সচল থাকলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এজন্য ডায়াবেটিক রোগীদের শরীরে পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম থাকা জরুরি।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ম্যাগনেসিয়ামের বিকল্প নেই। এটি ন্যাচারাল ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার হিসেবে কাজ করে রক্তের নালিগুলোকে স্বাভাবিক রাখে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • ম্যাগনেসিয়াম শরীরের জেনেটিক উপাদান যেমন ডিএনএ, আরএনএ তৈরি, সেলুলার ফাংশান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরিতে সাহায্য করে।
  • ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে এই সব কাজই বাধাগ্রস্ত হবে।

ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির লক্ষণ

ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন:

মাংসপেশিতে ব্যথা: ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে মাসল ক্র্যাম্পস বা মাংসপেশিতে প্রদাহ,মাসল স্পাজম অর্থাৎ পেশি অনিচ্ছাকৃত এবং জোর করে সংকুচিত হয়ে পড়া এবং শিথিল হতে না পারা এমন সমস্যা দেখা যায়। ম্যাগনেসিয়ামের অভাব এ ধরনের সমস্যায় প্রাথমিকভাবে প্রকাশ পায়।

ক্লান্তি: ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে সবসময় ক্লান্ত লাগতে পারে। যেমন শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগা, শক্তি না পাওয়া, অবসাদগ্রস্ত থাকা।

মানসিক স্বাস্থ্য: মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ম্যাগনেসিয়াম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে ডিপ্রেশন, উদ্বিগ্নতা দেখা দিতে পারে। যারা আগে থেকেই এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত তাদের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

হাত-পায়ে ঝিম ধরা: অনেক সময় হঠাৎ করে কিছু সময় হাত-পায়ের কিছু অংশ অসাড় হয়ে যায়, অনুভূতি পাওয়া যায় না, নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয়। এ রকম সমস্যা বারবার হলে বুঝতে হবে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হয়েছে।

অনিদ্রা: ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতিতে সময়মতো ঘুম আসতে চায় না। ঘুমালেও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম হয় না।

অনিয়মিত হৃদস্পন্দন: যেহেতু ম্যাগনেসিয়াম হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, তাই ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে অস্বাভাবিক হৃদপন্দন দেখা দেয়।

উচ্চ রক্তচাপ: ম্যাগনেসিয়ামের অভাব থাকলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যেতে পারে। দেখা যায় ওষুধ গ্রহণ করার পরও রক্তচাপ সহজে নিয়ন্ত্রণে আসতে চায় না।

হাড়ের সমস্যা: ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতিতে হাড়ের স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। অস্টিওপোরেসিসসহ হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার কারণে আঘাত পেলেই ফ্র্যাকচার হতে পারে বারবার।

মাইগ্রেন: মাথাব্যাথা দেখা দিতে পারে ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে। কারো মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে সেটি আরো বেড়ে যেতে পারে।

রুচি কমে যাওয়া: অনেক ক্ষেত্রে যাদের ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা অনেক কমে যায় তারা খাওয়ার রুচি হারিয়ে ফেলতে পারে। খাবার খেতে গেলে বমি ভাব হতে পারে।

ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার

  • একদম গাঢ় রঙের সবুজ শাকসবজির মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। যেমন পালংশাক, কলমি শাক, সবুজ শাক ইত্যাদি।
  • বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার ম্যাগনেসিয়ামের উৎস। চীনাবাদাম, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, মিষ্টিকুমড়ার বিচি, সূর্যমুখীর বিচি ইত্যাদিতে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেসিয়াম থাকে। এ ছাড়াও ডাল, সয়াবিন, ছোলা থেকে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।
  • হোল গ্রেইন অর্থাৎ সম্পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার যেমন, লাল চাল, লাল আটা, লাল চিড়া, রোলড ওটস, বার্লি ইত্যাদিতে ভালো পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
  • সামুদ্রিক মাছে ম্যাগনেসিয়াম থাকে। ইলিশ, স্যামন, টুনা ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।
  • ফলের মধ্যে অ্যাভোকাডো,কলাতে ভালো পবিমাণের ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।
  • উচ্চমানের ভালো ডার্ক চকলেট, সয়াবিন থেকে তৈরি টোফু ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস।

কোন খাদ্য থেকে কতটুকু ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যেতে পারে

এক কাপ রান্না করা পালংশাক - ১৫৭ মিলিগ্রাম দৈনিক

২৩টা কাঠবাদাম - ১৮০ মিলিগ্রাম দৈনিক

১৮টা কাজুবাদাম - ৭৪ মিলিগ্রাম দৈনিক

২৮ টা চীনাবাদাম - ৬৩ মিলিগ্রাম দৈনিক

১ টেবিল চামচ মিষ্টিকুমড়ার বিচি - ৩৬ মিলিগ্রাম দৈনিক

১ টেবিল চামচ সূর্যমুখীর বিচি - ৯ মিলিগ্রাম দৈনিক

এক কাপ রান্না করা লাল চালের ভাত - ৮৪ মিলিগ্রাম দৈনিক

এক কাপ বান্না করা কিনোয়া - ১১৮ মিলিগ্রাম দৈনিক

এক কাপ রান্না করা ছোলা - ৭৯ মিলিগ্রাম দৈনিক

এক কাপ রান্না করা ডাল - ৭১ মিলিগ্রাম দৈনিক

এক কাপ রান্না করা সয়াবিন - ১৪৮ মিলিগ্রাম দৈনিক

৮৫ গ্রামের একপিস সামুদ্রিক মাছ - ২৬ মিলিগ্রাম দৈনিক

১টা মাঝারি আকারের কলা - ৩২ মিলিগ্রাম দৈনিক

২৮ গ্রামের ডার্ক চকলেট - ৬৪ মিলিগ্রাম দৈনিক

এক কাপ টকদই - ৫০ মিলিগ্রাম দৈনিক

এক কাপ দুধ - ২৪ মিলিগ্রাম দৈনিক

এক কাপ টোফু - ৫৩ মিলিগ্রাম দৈনিক

ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই চাহিদা অনুযায়ী ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এটির চাহিদা পূরণ করা উচিত।

বয়সভেদে ম্যাগনেসিয়ামের দৈনিক চাহিদা

১-৩ বছরের বাচ্চা- ৮০ মিলিগ্রাম দৈনিক

৪-৮ বছর - ১৩০মিলিগ্রাম দৈনিক

৯-১৩ বছর- ২৪০ মিলিগ্রাম দৈনিক

১৪-১৮ বছর (ছেলে) - ৪১০ মিলিগ্রাম দৈনিক

১৪-১৮ বছর (মেয়ে)- ৩৬০ মিলিগ্রাম দৈনিক

১৯- ৩০ বছর (পুরুষ)- ৪০০ মিলিগ্রাম দৈনিক

 ১৯-৩০ বছর (নারী)- ৩১০ মিলিগ্রাম দৈনিক

৩০ বছরের ঊর্ধ্বে (পুরুষ)- ৪২০ মিলিগ্রাম দৈনিক

৩০ বছরের ঊর্ধ্বে (নারী)- ৩২০ মিলিগ্রাম দৈনিক

 

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

2h ago