গ্লুটেনমুক্ত খাবার কি বেশি স্বাস্থ্যসম্মত?

গ্লুটেন
ছবি: সংগৃহীত

গ্লুটেন শব্দটি আজকাল বেশ পরিচিত সবার। বর্তমানে গ্লুটেনমুক্ত খাবারের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এখন অনেককেই বলতে শোনা যায়, তিনি গ্লুটেনমুক্ত খাবার খান। কারণ গ্লুটেনযুক্ত খাবার খাওয়া তার নিষেধ। আবার অনেকে আছেন যারা না জেনে-বুঝেই ভালো মনে করে 'গ্লুটেনমুক্ত' ট্যাগযুক্ত খাবার খান। কিন্তু এই গ্লুটেন আসলে কী তা অনেকেরই জানা নেই।

এ বিষয়ে জানিয়েছেন সিলেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ডায়াবেটিস এডুকেটর ও পুষ্টিবিদ স্বর্ণালী দাশ বিজয়া।

গ্লুটেন কী

গ্লুটেন এক ধরনের জটিল প্রোটিন যা গ্লায়াডিন ও গ্লুটেনিনের সমন্বয়ে গঠিত হয়। গ্লুটেন মূলত গম এবং এক গোত্রীয় বিভিন্ন শস্যে যেমন রাই, বার্লি ইত্যাদিতে থাকে।

গ্লুটেনমুক্ত এবং গ্লুটেনযুক্ত খাবার কোনগুলো

গ্লুটেনমুক্ত খাবারের তালিকায় রয়েছে তাজা ফল, সবজি, ডিম, মাংস, মাছ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, সি-ফুড, ডাল, বাদাম, ভাত, ভুট্টা। আমরা নানা রকমের প্রসেসড খাবার খাই যাতে গ্লুটেন আছে। যেমন পাউরুটি, বার্গার, পিজ্জা, পাস্তা, কেক, সিরিয়েল। এমনকি সস, আইসক্রিম থেকে শুরু করে অনেক মেডিকেশনেও হিডেন গ্লুটেন পাওয়া যায়। তাই এই খাদ্যাভাসে যারা অভ্যস্ত হতে চান তাদের অবশ্যই 'গ্লুটেন ফ্রি' ট্যাগ দেখে নিতে হবে।

সবারই কি গ্লুটেনমুক্ত খাবার খাওয়া উচিত?

গ্লুটেনযুক্ত খাবার আমরা সবাই প্রতিদিন খেয়ে থাকি। গ্লুটেনযুক্ত খাবার শরীরের জন্য খারাপ এই ধারণা ঠিক নয়। তবে বিশেষ কিছু সমস্যা থাকলে তখন গ্লুটেনমু্ক্ত খাবার খেতে হবে।

যেমন-

সিলিয়াক রোগ: এই রোগ যাদের আছে, গ্লুটেনযুক্ত খাবার খেলে তাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ ব্যাহত হয়। সিলিয়াক রোগ এক ধরনের অটোইমিউনঘটিত অসুস্থতা।

গ্লুটেন সংবেদনশীলতা: সিলিয়াক রোগ না থেকেও অনেকেরই গ্লুটেন নিয়ে সংবেদনশীলতা থাকতে পারে। এমনকি সিলিয়াক রোগের উপসর্গও দেখা যেতে পারে। পেটের তলদেশে ব্যথা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, চুলকানি, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। ক্ষুদ্রান্ত্রের কোনো ক্ষতি না হলেও এই উপসর্গগুলো দেখা দেয়। তাদের গ্লুটেনমুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।

গ্লুটেন অ্যাটাক্সিয়া: এটিও এক ধরনের অটোইমিউনঘটিত অসুস্থতা। বেশ কিছু স্নায়ুর তন্তুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এটি, যার ফলে পেশির নড়াচড়া করার শক্তি ব্যাহত হয়।

হুইট অ্যালার্জি: অনেকের আটাতে অ্যালার্জি হয়। আটাতে এক ধরনের প্রোটিন থাকে, যা শরীর ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ভেবে ভুল করে। সুতরাং প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে শরীর অ্যান্টিবডি তৈরি করে। ফলে শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে।

এ ধরনের রোগ যাদের আছে তাদেরকে সাধারণত গ্লুটেনমুক্ত খাবার খেতে বলা হয়। গ্লুটেন ফ্রি খাবার খাওয়ার মাধ্যমে তারা নিজেকে সুস্থ রাখতে পারেন।

এ ছাড়া চাইলে যে কেউ গ্লুটেনমুক্ত খাবার খেতে পারেন। কিন্তু এটা বাধ্যতামূলক নয়। কারণ এই অসুখগুলো সবারই যে হয় এমন না। যাদের হয় তাদের গ্লুটেনমুক্ত খাওয়া উচিত। কিন্তু অন্যদের এটি না করলেও হয়। তাই আগে জানতে হবে গ্লুটেনে অ্যালার্জি বা এই ধরনের কোনো সমস্যা আছে কি না শরীরে।

গ্লুটেন ফ্রি মানে কি বেশি স্বাস্থ্যসম্মত?

গম, বার্লি, যব সবচেয়ে সহজপাচ্য খাবারগুলোর মধ্যে আছে। এগুলোতে যেমন অনেক ভিটামিন আছে, তেমনি আছে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা হয়তো অন্য অনেক খাবারে পাওয়া যায় না। গ্লুটেন ফ্রি ডায়েটে এই পুষ্টি উপাদানগুলো থেকে শরীর বঞ্চিত হতে পারে।

আবার যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য হোল গ্রেইন খুবই উপকারী।  একজন সুস্থ ব্যক্তি নিয়মিত গ্লুটেনমুক্ত খাবার গ্রহণ করতে থাকলে অনেক ক্ষেত্রে ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট এবং ফাইবারের  ঘাটতি দেখা দিতে পারে। খাবারে ফ্যাট বৃদ্ধি, হাইপারগ্লাইসেমিয়া, হাইপারলিপিডেমিয়া, করোনারি আর্টারি রোগ ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া গ্লুটেনমুক্ত খাবার অনেক ব্যয়বহুল।

কার্বোহাইড্রেট খেলেই গ্লুটেন খাওয়া হয় কি?

কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার সঙ্গে গ্লুটেনের কোনো সম্পর্ক নেই। ভাত, আলুসহ এমন অনেক শর্করা আছে যা গ্লুটেনমুক্ত।

 

Comments

The Daily Star  | English

Retaliation 'underway' as India hits Pakistan

New Delhi claims hitting 9 'terrorist sites'; Islamabad says civilians hit, claims downing 5 Indian jets; at least 8 killed; US, UN sound alarm

2h ago