কাঁচা লবণ খেতে নিষেধ করা হয় কেন

কাঁচা লবণ
ছবি: সংগৃহীত

লবণ খাদ্যের একটি অপরিহার্য উপাদান। লবণের পরিমাণ কম বা বেশি হলে নষ্ট হয় খাবারের স্বাদ। তবে অনেকেই খাবারের সঙ্গে কাঁচা লবণ খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু এই কাঁচা লবণ খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

চলুন পুষ্টিবিদের থেকে জেনে নেই কাঁচা লবণ খেতে নিষেধ কেন করা হয়। এ বিষয়ে জানিয়েছেন ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কন্সালটেশন সেন্টারের পুষ্টিবিদ নুসরাত জাহান

নুসরাত জাহান জানান, কাঁচা লবণ খাওয়া সাধারণত নিষেধ করা হয় কারণ এটি স্বাস্থ্যের ওপর বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

লবণ মানব শরীরের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলেও এটি পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করা জরুরি। লবণে থাকা সোডিয়াম শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। কাঁচা লবণ বা প্রক্রিয়াজাত না করা লবণ সরাসরি খাওয়ার ফলে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

রক্তচাপ বৃদ্ধি

সোডিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে কাঁচা লবণ সরাসরি খাওয়ার ফলে শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়াম জমা হয়, যা উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণ হতে পারে। লবণ রক্তে পানি ধরে রাখে। ফলে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এই অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহের কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণে হৃদযন্ত্রে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।

কিডনির ক্ষতি

কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল বের করে শরীরকে সুস্থ রাখে। কাঁচা লবণ খাওয়ার ফলে কিডনিকে অতিরিক্ত সোডিয়াম ফিল্টার করতে হয়, যা কিডনির কার্যক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত লবণ খেলে কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে এবং কিডনি ফেইলিওর বা কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়ে।

পানি জমা হওয়া (এডিমা)

কাঁচা লবণ খাওয়ার ফলে শরীরে অতিরিক্ত পানি জমতে পারে। সোডিয়াম শরীরের কোষে পানি ধরে রাখে। ফলে হাত, পা, মুখ বা শরীরের অন্য অংশগুলোতে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে, যাকে এডিমা বলা হয়। এডিমা সাধারণত অস্বস্তি তৈরি করে এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে।

হাড়ের ক্ষতি

অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়, যা অস্টিওপোরোসিস বা হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের জন্য এটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে। হাড়ের ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক শক্তি কমিয়ে দেয় এবং হাড় ভাঙার ঝুঁকি বাড়ায়।

পাচনতন্ত্রের সমস্যা

কাঁচা লবণ খাওয়া পাকস্থলীতে অম্লতা বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি অ্যাসিডিটির সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা পাকস্থলীর দেয়ালে ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া লবণ হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ফলে খাবার ঠিকমতো হজম না হওয়া, বমি বমি ভাব বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী এই সমস্যা আলসার কিংবা পাকস্থলীর অন্যান্য রোগে রূপ নিতে পারে।

হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি

কাঁচা লবণ খাওয়ার ফলে হৃদযন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি অতিরিক্ত লবণ ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস করতে পারে, যা রক্ত প্রবাহে সমস্যা সৃষ্টি করে। এর ফলে হৃদযন্ত্রের রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে টাইপ ২ ডায়বেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সোডিয়াম ইনসুলিন প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে পারে, যা শরীরে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করে। এর ফলে ডায়বেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সব মিলিয়ে, কাঁচা লবণ খাওয়া সরাসরি স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য কাঁচা লবণ এড়িয়ে চলা এবং পরিমিত মাত্রায় লবণ গ্রহণ করা জরুরি।

 

Comments

The Daily Star  | English

Gaza civil defence says Israeli forces kill 23

Among the casualties were three children who were killed in an air strike on a home in Jabalia, northern Gaza

52m ago