ক্যালসিয়াম পাবেন কোন খাবারে

ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার
ছবি: সংগৃহীত

ক্যালসিয়াম মানব শরীরের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান, যা হাড় ও দাঁতের গঠনে এবং পেশি ও স্নায়ুর কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়ামের অভাব হলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়, দাঁতের সমস্যা দেখা দেয় এবং পেশির সংকোচন ও নার্ভের কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। তাই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু কোন খাবারে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় তা আমরা অনেকেই জানি না।

আজকে জানব ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের উৎস সম্পর্কে। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ মাহফুজা নাসরিন শম্পা।

তিনি বলেন, শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এই উপাদান বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন।

ক্যালসিয়ামের উপকারিতা

  • ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে এবং অস্টিওপোরোসিস ও দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
  • এটি পেশির সংকোচন ও স্নায়ুর সংকেত সঠিকভাবে পরিচালনায় সাহায্য করে, যা দেহের স্বাভাবিক নড়াচড়ার জন্য জরুরি।
  • ক্যালসিয়াম রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে।
  • হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক স্পন্দন বজায় রাখতে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ক্যালসিয়াম সহায়ক।
  • এটি বিভিন্ন হরমোনের নিঃসরণে ভূমিকা রাখে, যা দেহের বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে।
  • ক্যালসিয়াম ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়িয়ে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • ক্যালসিয়াম কিছু ধরনের ক্যানসার বিশেষ করে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে।

 

ক্যালসিয়ামের উৎস

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার

দুধ ক্যালসিয়ামের অন্যতম প্রধান উৎস। তবে যদি ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্সের কারণে দুধ খেতে না পারেন, তাহলে দই বা ছানা গ্রহণ করতে পারেন। ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্স হলো এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার হজম করতে সমস্যা হয়। এটি ঘটে যখন শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে ল্যাকটেজ এনজাইম তৈরি করতে পারে না।

  • গরুর দুধ: ১ কাপ দুধে প্রায় ২৭৬-৩৫২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • ছাগলের দুধ: ১ কাপ ছাগলের দুধে প্রায় ৩২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • দই: ১ কাপ প্লেইন দইয়ে প্রায় ৪৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • ছানা: ১০০ গ্রাম ছানায় প্রায় ২০০-৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি

সবুজ শাকসবজি ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। তবে কিছু শাক-সবজিতে অক্সালেট নামক পদার্থ থাকে, যা ক্যালসিয়ামের শোষণ কমিয়ে দিতে পারে।

  • পালং শাক: ১০০ গ্রামে প্রায় ৯৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • কলমি শাক: ১০০ গ্রামে ১৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
  • লাল শাক: প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • বাঁধাকপি: ১০০ গ্রামে প্রায় ৪০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • সরিষা শাক: ১০০ গ্রামে প্রায় ১১৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

মাছ ও সামুদ্রিক খাবার

মাছ, বিশেষ করে ছোট মাছ ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।

  • কাচকি মাছ: ১০০ গ্রামে প্রায় ৭০০-১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • মলা, পুঁটি, চাঁদা মাছ: ১০০ গ্রামে প্রায় ৫০০-৭০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • শুঁটকি মাছ: ১০০ গ্রামে প্রায় ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • ইলিশ মাছ: ১০০ গ্রামে প্রায় ২৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • চিংড়ি: ১০০ গ্রামে প্রায় ৭০-১২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

ছোট মাছ খেলে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেশি পাওয়া যায়। কারণ এগুলো হাড়সহ খাওয়া হয়।

ডাল ও শস্যজাতীয় খাবার

  • মসুর ডাল: ১০০ গ্রামে প্রায় ৩৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • মুগ ডাল: ১০০ গ্রামে প্রায় ১৩২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
  • ছোলা: ১০০ গ্রামে প্রায় ১০৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • মটর: ১০০ গ্রামে ৪৫-৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

ফল ও শুকনো ফল

  • কমলা: ১টি মাঝারি আকারের কমলায় প্রায় ৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • আঙুর: ১০০ গ্রামে প্রায় ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • পেয়ারা: ১০০ গ্রামে ১৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • কিশমিশ: ১০০ গ্রামে প্রায় ৬২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

বীজ ও অন্যান্য খাবার

  • তিল: ১০০ গ্রামে প্রায় ৯৭৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • চিয়া সিড: ১০০ গ্রামে প্রায় ৬৩১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • সয়াবিন: ১০০ গ্রামে প্রায় ২৭৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
  • বাদাম:  ১০০ গ্রামে ২৬৪ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার

  • ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ব্রেড বা সিরিয়াল: কিছু ব্রেড ও সিরিয়াল ক্যালসিয়াম দিয়ে ফোর্টিফায়েড থাকে।
  • সয়ামিল্ক বা আমন্ড মিল্ক: এগুলো ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হতে পারে।

ক্যালসিয়ামের চাহিদা

দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা বয়স, লিঙ্গ ও শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে।

বয়সভিত্তিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা (মিলিগ্রাম/দিনে):

  • শিশু (১-৩ বছর): ৭০০ মিলিগ্রাম
  • শিশু (৪-৮ বছর): ১০০০ মিলিগ্রাম
  • কিশোর (৯-১৮ বছর): ১৩০০ মিলিগ্রাম
  • প্রাপ্তবয়স্ক (১৯-৫০ বছর): ১০০০ মিলিগ্রাম
  • প্রাপ্তবয়স্ক (৫১ বছর ও তদূর্ধ্ব, পুরুষ): ১০০০মিলিগ্রাম
  • প্রাপ্তবয়স্ক (৫১ বছর ও তদূর্ধ্ব, নারী): ১২০০ মিলিগ্রাম
  • অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারী: ১০০০-১৩০০ মিলিগ্রাম

ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য করণীয়

  • ভিটামিন ডি: ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করা জরুরি। সূর্যালোক থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
  • অতিরিক্ত সোডিয়াম এড়ানো: বেশি লবণ খেলে শরীর থেকে ক্যালসিয়ামের ক্ষয় হয়।
  • অক্সালেট ও ফাইটেট সমৃদ্ধ খাবার নিয়ন্ত্রণ: পালং শাক ও চা বেশি পরিমাণে খেলে ক্যালসিয়ামের শোষণ কমতে পারে।

     

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy in early 2025

According to the latest data from the United Nations High Commissioner for Refugees (UNHCR), 2,589 Bangladeshis landed in Italian shores in January and February this year while 1,206 went to the European country in the two months last year

1h ago