গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী দুধ লাউ বানাবেন যেভাবে

বেশ কয়েক বছর আগে বেড়াতে গিয়েছিলাম এক আত্মীয়ের বাড়িতে। বাড়ির কর্ত্রী ছিলেন দারুণ অতিথিপরায়ণ। হরেক রকমের খাবার তৈরি করেছিলেন। কিন্তু আমি শুধু একটাই জিনিসের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, হালকা সবুজ রঙের একটা মিষ্টান্ন। দেখতে পায়েসের মতো, আবার সেমাইয়ের ছোঁয়াও আছে। দ্বিধা নিয়ে এক চামচ মুখে দিলাম। আহা! এক অদ্ভুত স্বাদ! জিজ্ঞেস করতেই গৃহকর্ত্রী হাসলেন। বললেন, 'এটা দুধ লাউ!'
দুধ লাউ! এমন অদ্ভুত নামের খাবার আগে কখনো খাইনি। কিন্তু স্বাদটা একবার পাওয়ার পর মনে হলো, এ জিনিস তো চুপিচুপি আরও এক-দুই বাটি খাওয়া যায়! তারপর রেসিপিটা চেয়ে নিলাম। যতবার বানিয়েছি, ততবারই বাহবা পেয়েছি।
আপনারাও যদি দুধ লাউয়ের স্বাদ নিতে চান, তাহলে রেসিপিটা নোট করে ফেলুন।
দুধ লাউয়ের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো কচি রোয়া যুক্ত লাউ। লাউ যত কচি হবে এই মিষ্টান্নের স্বাদ ততটাই ভালো হবে। আরে বাজারের বুড়ো লাউটা নিলে স্বাদ আর ঘ্রাণ কোনোটাই ভালো আসবে না। লাউটা ভালো করে খোসা ছাড়িয়ে লাউয়ের বিচির নরম অংশ বাদ দিয়ে বেশ সরু করে কুচিয়ে নিতে হবে এক কাপ পরিমাণ। চাইলে ভেজিটেবল গ্রেটার ব্যবহার করতে পারেন। এরপর ফুটন্ত গরম পানিতে সেই কুচানো লাউ মিনিট দুয়েক ভাপিয়ে নিন। ভাপানো লাউ থেকে চেপে চেপে পানি বের করে ফেলুন। নতুবা লাউয়ে বাড়তি পানি দুধের সঙ্গে মিশে একদম পানসে লাগবে।
এরপর একটা প্যানে এক টেবিল চামচ ঘি গরম করে তাতে দুটো এলাচ আর এক টুকরো দারচিনি দিয়ে দিন। সঙ্গে সঙ্গেই ভাপানো লাউ ঢেলে হালকা নাড়ুন। মিনিট দুয়েক ভাজুন, যেন লাউটা ঝরঝরে হয়ে যায়।
এক লিটার দুধ চুলায় বসিয়ে দিন। দুধ যেন বেশ ঘন হয়ে আসে, তাই সময় নিয়ে জ্বাল দিন। এবার সেই দুধে ভাজা লাউ দিয়ে দিন। স্বাদ আর ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য আধা কাপ দুধের সঙ্গে এক চা চামচ চালের গুঁড়ো মিশিয়ে মিশ্রণে ঢেলে দিন ও স্বাদমতো চিনি দিন। নাড়তে থাকুন। মিশ্রণ ঘন হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন, কারণ ঠান্ডা হলে আরও একটু ঘন হয়ে যাবে।
উপরে কাজু-কিশমিশ ছড়িয়ে ঠান্ডা করুন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া এক মিষ্টান্ন দুধ লাউ!
এখন, রাতে ফ্রিজ খুলে যদি দেখেন দুধ লাউয়ের বাটিটা অর্ধেক খালি, তাহলে বুঝবেন বাড়ির অন্য সদস্যরাও চুপিচুপি খেয়ে নিয়েছে!
Comments