বাঙ্গি কেন বাবাদের এত প্রিয়?

পৃথিবীর কিছু রহস্য চিরকাল রহস্যই থেকে যাবে। মুরগি আগে না ডিম আগে এই বিতর্কের মতো, সবার বাবা কেন বাঙ্গি নামক এক ফলের বিরাট ভক্ত তা এক রহস্য বটে। আমাদের বাবাদের জন্য বাঙ্গি শুধু একটি ফল নয়, এটি এক অনুভূতি, এক ঐতিহ্য আর তাদের আত্মার একটি অংশ। আর আমাদের প্রজন্মের জন্য এটি এমন একটি ফল, যার স্বাদ যেন দুঃস্বপ্নের মতো!
বাবাদের সঙ্গে বাঙ্গির এক অটুট সম্পর্ক আছে। রমজান মাসে ইফতারের আগে তারা জিলাপি বা হালিম কেনার উদ্দেশ্যে বাজারে যান, কিন্তু কীভাবে যেন সবসময় হাতে একটি বাঙ্গি নিয়ে ফিরে আসেন। দরজা খুলতেই বাবা ভেতরে প্রবেশ করে, ভীষণ গর্বিত ভঙ্গিতে বাঙ্গিটা টেবিলে রেখে আমাদের মুগ্ধ দৃষ্টির প্রত্যাশা করেন। কিন্তু তার বদলে আমরা সবাই আতঙ্কিত দৃষ্টিতে সেই বাঙ্গির দিকে তাকিয়ে থাকি। ঘরে কিছুক্ষণ সুনসান নীরবতার পর নীরবতা ভঙ্গ করে তিনি বলে ওঠেন, 'কী চমৎকার রং দেখেছ? এটাই সবচাইতে ভালো ছিল।' আমরা সেই মুহূর্তে ঠিক বুঝে উঠতে পারি না এমন একটা ফ্যাকাশে হলুদ ফল নিয়ে এত আনন্দিত হওয়ার কী আছে!
গত বছরের বাঙ্গির দুঃখজনক অভিজ্ঞতা ভুলতে না ভুলতেই আমরা উত্তর দিই, 'কেন?' সঙ্গে সঙ্গে যেন পুরোনো বাংলা সিনেমার দৃশ্যের মতো ঘরে বাজ পড়ার আওয়াজ হয়, বাবার চেহারায় এমন হতাশার ছাপ ফুটে ওঠে যেন আমরা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে বসে আছি। তিনি বলে ওঠেন, 'রমজান এলেই তোমরা তো দৌড়ে গিয়ে আনলিমিটেড পিৎজা আর বার্গার খেতে চলে যাও, কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যাপারে তোমাদের কোনো আগ্রহই নেই।'
হ্যাঁ, বাবা, বাঙ্গি অপছন্দ করাই এই প্রজন্মকে সত্যিকার অর্থে ধ্বংস করছে!
ইফতারের সময়ের একটি দৃশ্য কল্পনা যাক। ইফতারের সময় দেখা যায় বাবা প্লেট আর ছুরি নিয়ে বাঙ্গি কাটতে বসে গেছেন। এক টুকরো বাঙ্গি খেয়েই 'বাহ' বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। তারপর আমাদের দিকে ফিরে নরম কণ্ঠে বলেন, 'অসাধারণ! একবার খেয়ে দেখো।' আমরা ভয়ে ভয়ে এক কামড় নিই।
তাৎক্ষণিক আবেগঘন সংলাপ শুরু হয়ে যায় তখন, 'এত কষ্ট করে এনেছি, আর তুমি খেতেই চাচ্ছ না?' এরপর কথোপকথনে বাড়তি মশলা যোগ করতে মায়েরা সঙ্গে সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেন, 'তুমি জানো বাঙ্গি শরীরের জন্য কত উপকারী?' আর সঙ্গে সেই চিরন্তন সংলাপ—যদি স্বাস্থ্যকর হয়, তবে খেতেই হবে, যতই কষ্টদায়ক হোক না কেন।
না মা, এটা হয়তো উপকারী, কিন্তু এটা আমাদের হতাশার ওষুধ নয়, বিশেষ করে এই মুহূর্তে!
শেষমেশ টেবিলে পড়ে থাকা অর্ধেক খাওয়া বাঙ্গি আমাদের দিকে বিদ্রুপের হাসি হাসে, যেন বলছে—'কাল আবার দেখা হবে!' আজকের মতো সে জিতে গেছে, আবার আগামীকাল বাবার হাত ধরে আমাদের প্লেটে আসবে। আর বাবা বলবেন, 'এখনো একদম টাটকা আছে দেখছ!'
পরের দিন
গতকালের ট্রমা এড়াতে বন্ধুর বাড়ি গিয়ে উঠে মনে হলো, এবার বাঁচা গেল! বাঙ্গিমুক্ত এক নতুন জীবন, এক নতুন আশা! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ঘরে ঢুকতেই হঠাৎ চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
ওটা! ওটা টেবিলের উপরেই বসে আছে।
বন্ধুর বাবা খুশি হয়ে বলেন, 'আজ কিন্তু তোমাদের জন্যই বাজার থেকে সবচেয়ে ভালো বাঙ্গিটা কিনেছি! রংটা দেখ না, কী সুন্দর!'
হায়রে! সব বাবাদেরই বাঙ্গির প্রতি এই ভালোবাসা কেন?
অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম
Comments