রাত বাড়লেই জমে ওঠে মিরপুরের এই ‘খিচুড়ি রাজ্য’

মিরপুরের খিচুড়ি

ঢাকার রাত যত গভীর হয় আর মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তা ততই সরব হয়ে ওঠে। কোনো খেলা থাকুক বা না থাকুক, স্টেডিয়াম ঘিরে পেটপুজো মেটাতে এখানে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। খাবারপ্রেমীদের কাছে এই এলাকা যেন এক 'খাবার মেলা'।

আর এ মেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় আকর্ষণ—খিচুড়ি। এক টানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টলে স্টলে রান্না হয় নানা স্বাদের খিচুড়ি। মাত্র ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকায় নানান পদ দিয়ে খেতে পারবেন এই খিচুড়ি।

মিরপুর

স্টেডিয়াম সংলগ্ন ও এর আশেপাশে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি খিচুড়ির দোকান রয়েছে। তবে প্রথমেই বলতে হয় 'লোকমান মামার খিচুড়ি'র কথা। অনেকটা ঠেলাগাড়ির মতো করে সাজানো এই ছোটখাটো স্টলে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় খিচুড়ি উৎসব। এখানে ভুনা খিচুড়ির সঙ্গে পরিবেশন করা হয় গরুর ঝাল মাংস বা লাল ভুনা, যা রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে গেছে আশপাশের এলাকাজুড়ে। দামও তুলনামূলক সাশ্রয়ী—মাত্র ১০০ টাকায় এক প্লেট ভরপেট খিচুড়ি ও গরুর মাংস। সঙ্গে ভর্তা আর সালাদের ব্যবস্থাও থাকে। সেইসঙ্গে চুই ঝাল দিয়ে গরুর কালা ভুনার সঙ্গে খিচুড়ির দাম ১২০ টাকা। মুরগির রেজালা দিয়ে ১০০ টাকা।

এই ভ্রাম্যমাণ খিচুড়ির রাজ্যে দাঁড়িয়ে কথা হয় লোকমান হোসেনের সঙ্গে, যিনি 'লোকমান মামার বিরিয়ানি হাউজ' নামের দোকান চালান প্রায় পাঁচ বছর ধরে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা মানুষ, খেলা দেখতে আসা দর্শক, এমনকি হাসপাতাল ফেরত রোগীর স্বজন—সবার রাতের আশ্রয় হয়ে উঠেছে তার এই ঠেলাগাড়ি।

লোকমান হোসেন বলেন, 'সন্ধ্যা ৭টার পর আমার খিচুড়ি বিক্রি শুরু হয়, শেষ কখন হয় তা বলা মুশকিল। মাঝে মাঝে ভোর ৪টার পরেও কাস্টমার থাকে। অনেকে খেলা দেখে খিদে নিয়ে আসে, আবার কেউ কেউ শুধু খিচুড়ির স্বাদ নিতেই আসে। আমরা মসলা একটু ঘন করে দিই, যাতে মাংসের সঙ্গে খেলে একটা জমজমাট স্বাদ আসে।'

মিরপুর

অন্যদিকে ব্যতিক্রমধর্মী স্বাদ উপহার দেয় 'হাসান মামার বিরিয়ানি হাউজ'। এটিও স্টেডিয়ামের ৪ নাম্বার গেটের সামনে অবস্থিত। এখানে বিক্রি হয় উট, দুম্বা, খরগোশ, কোয়েল ও গরুর ভুনা। এসব মাংস রান্না করা হয় বিশেষ মশলায়, আর পরিবেশন করা হয় গরম গরম ভুনা খিচুড়ির সঙ্গে। দাম খানিকটা বেশি হলেও, স্বাদ ও বৈচিত্র্যে অনন্য। মাংসের ধরন ও পরিমাণ অনুযায়ী খিচুড়িসহ প্রতি প্লেট খাবারের দাম ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

হাসান মামার বিরিয়ানি হাউজের মালিক হাসান জানান, 'দৈনিক প্রায় চার থেকে পাঁচ হাঁড়ি খিচুড়ি বিক্রি করে থাকি। প্রত্যেকটা ডেকে ৩৭-৩৮ কেজি খিচুড়ি থাকে, সে হিসেবে বিক্রি হয় ১৮০ কেজি খিচুড়ি। এছাড়া মাঝে মাঝে রান্না করা একটি আস্ত গরুর মাংসও বিক্রি হয়ে যায়।'

খিচুড়ি

স্টেডিয়ামের ৪ নম্বর গেটের পাশেই আছে 'খিচুড়ি বাড়ি' নামে আরও একটি ছোট দোকান। যার রান্না করা হান্ডির খিচুড়ি আপনাকে নিয়ে যাবে পারিবারিক রান্নার স্বাদে। এখানে সাধারণ খিচুড়ির পাশাপাশি পাওয়া যায় মুরগি, গরু বা খাসির মাংস মেশানো ঘন ঝোলযুক্ত খিচুড়ি। একেকটি হান্ডিতে রান্না হয় আলাদা আলাদা স্বাদের খিচুড়ি—কখনো হালকা ঝাল, কখনো আবার বেশি ঝাল। খিচুড়ির ঘ্রাণে ভরপুর চারপাশ। দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।

এছাড়াও কিছু কিছু ভ্রাম্যমাণ দোকানে রাজহাঁস, হাঁস, ইলিশ ভাজা, চিংড়ি, বেগুন ভাজা, ডিমসহ বিভিন্ন প্রকারের ভর্তা দিয়ে খিচুড়ি পাওয়া যায়। খিচুড়ির পাশাপাশি পোলাও ও সাদা ভাতও পাওয়া যায়। এগুলোর দামও সাধ্যের মধ্যেই। পদ অনুযায়ী দাম ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যেই।

এখানে নিয়মিত খিচুড়ি খেতে আসা শৈল্পিক হুমায়ুন নামের এক ভোজনরসিক বলেন, 'আমি প্রায়ই এখানে আসি। মাত্র ১০০ টাকায় খিচুড়ি আর গরুর মাংস। ঢাকায় এত কম দামে এত মজার রাতের খাবার আর কোথায় পাবো?'

শফিক হাসান নামের আরেক ভোজনরসিক বলেন, 'এখানকার খাবারে মসলার পরিমাণ একটু বেশি, এছাড়া হাইজিনও তেমন একটা মেইনটেইন করা হয় না। এসব বিষয়ের দিকে একটু নজর দিলেই আমরা আরও ভালো খাবার উপভোগ করতে পারব।'

খিচুড়ির এই স্টলগুলো সাধারণত সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু করে রাত ২টা-৩টা পর্যন্ত খোলা থাকে। খেলার দিন বা কনসার্ট থাকলে ভিড় আরও বাড়ে, তখন ভোর ৪টা পর্যন্তও খোলা থাকে।

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

 

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

4h ago