পটল না খেলে যেসব পুষ্টিগুণ থেকে বঞ্চিত হবেন

পটল গ্রীষ্মকালীন সবজি হিসেবে বেশি পরিচিত হলেও প্রায় সারাবছরই পাওয়া যায়। এই সবজিটি অনেকের কাছে সুস্বাদু, আবার অনেকেই এটি খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু পটলে আছে ভরপুর পুষ্টি। দেহের নানা রকম রোগ প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর এটি।
চলুন জেনে নিই পটলের সব পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা। এ বিষয়ে জানিয়েছেন ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ মাহফুজা নাসরিন শম্পা।
মাহফুজা নাসরিন শম্পা বলেন, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধে পটলের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পটল খেলে হজম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, ত্বক, চুল, হৃদপিণ্ড এবং লিভারসহ সার্বিক স্বাস্থ্য রক্ষা পায়। তবে শুধু পটল খেলেই যে শরীর ভালো থাকবে এমন ধারণাও ঠিক না। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের সঙ্গে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় পটল রাখলে মিলবে স্বাস্থ্য উপকারিতা।
পটলের পুষ্টি উপাদান
পটল একটি কম ক্যালরিযুক্ত অথচ পুষ্টিকর সবজি। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি এবং কিছু পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। আছে মিনারেল যেমন—আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এছাড়াও রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ও উচ্চমাত্রার ডায়েটারি ফাইবার। এই উপাদানগুলো দেহের সামগ্রিক সুস্থতা রক্ষা করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
পটলের উপকারিতা
শরীর ঠান্ডা রাখে
গ্রীষ্মকালে শরীরে অতিরিক্ত গরম বা ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা দেয়। পটলের ঠান্ডা প্রকৃতির জন্য এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ঘাম, শরীর জ্বালা, ক্লান্তি ইত্যাদি কমায়।
হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
পটলে উপস্থিত উচ্চমাত্রার আঁশ হজমে সহায়তা করে এবং পাচনতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি গ্যাস্ট্রিক, অম্বল, বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর। যাদের হজমজনিত সমস্যা আছে, তাদের জন্য পটল একটি নিরাপদ ও প্রাকৃতিক সমাধান।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান কিংবা ওজন কমানোর পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য পটল একটি আদর্শ খাবার। এতে ক্যালরি ও ফ্যাট কম থাকায় এটি দেহে অতিরিক্ত চর্বি সঞ্চয় হতে বাধা দেয়। পাশাপাশি এটি পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। ফলে অপ্রয়োজনীয় খাদ্যগ্রহণ কম হয়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
পটলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী।
ত্বক ও চোখের যত্নে কার্যকর
ভিটামিন এ ও সি সমৃদ্ধ পটল ত্বকের সৌন্দর্য ও চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এটি ত্বককে উজ্জ্বল ও সজীব রাখে এবং চর্মরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। চোখে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, চোখের শুষ্কতা বা রাতকানা রোধেও এটি সহায়ক।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
পটলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যেমন—ফ্ল্যাভনয়েড, পলিফেনল, বিটা-ক্যারোটিন প্রভৃতি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফলে সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ সহজে হয় না।
লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
পটলের প্রাকৃতিক উপাদানগুলো লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। ফলে যকৃতের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং হেপাটাইটিসসহ অন্যান্য লিভার রোগ প্রতিরোধ সম্ভব হয়।
হৃদরোগ প্রতিরোধ করে
পটলে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদস্পন্দন সঠিক রাখে। এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়ায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে যায়।
কিডনি ও মূত্রনালীর যত্নে সহায়ক
পটল একটি প্রাকৃতিক ডাইইউরেটিক (প্রস্রাববর্ধক) হিসেবে কাজ করে। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও বর্জ্য অপসারণে সহায়তা করে। ফলে কিডনি ও মূত্রনালীর কার্যকারিতা ঠিক থাকে। যারা প্রস্রাবে জ্বালা, ইনফেকশন বা ঘন প্রস্রাবের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি উপকারী।
চুল ও নখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
পটলে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল যেমন—জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম এবং আয়রন চুল পড়া রোধ করে এবং নখ শক্ত রাখে। পটল নিয়মিত খেলে চুল মজবুত ও ঘন হয় এবং নখ ভাঙার সমস্যা কমে।
অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে
পটলে কিছুটা আয়রন থাকায় এটি রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তাদের জন্য পটল উপকারী। এটি আয়রনের শোষণ বাড়াতে সহায়তা করে, বিশেষ করে যদি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়।
এসব পুষ্টিগুণ পটল রান্না করার ওপরও নির্ভর করে। বেশি তেল, মসলা পরিহার করে পাতলা তরকারি বা সেদ্ধ করে খেলে উপকার বেশি পাওয়া যাবে।
Comments