চিরতার যত উপকারিতা, কীভাবে খাবেন

চিরতার উপকারিতা
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহৃত একটি বিখ্যাত ভেষজ উদ্ভিদ হলো চিরতা। এটির স্বাদ অত্যন্ত তিক্ত হলেও রোগ প্রতিরোধে ও শরীরের বিভিন্ন সমস্যায় এটি কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে শতাব্দী ধরে।

চলুন জেনে নিই চিরতা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা। পরামর্শ দিয়েছেন ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী।

শরীফা আক্তার শাম্মী জানান, চিরতা হলো প্রকৃতির এক আশীর্বাদস্বরূপ ভেষজ উদ্ভিদ, যা নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যায় কার্যকর। বিশেষ করে হজম, জ্বর, চর্মরোগ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক চিকিৎসা উপাদান। চিরতা মূলত কাঁচা ও শুকনো দুইভাবেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে যেকোনো প্রাকৃতিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেমন সাবধানতা দরকার, চিরতার ক্ষেত্রেও তাই। নির্দিষ্ট নিয়মে এবং পরিমিত মাত্রায় চিরতা সেবনের মাধ্যমে শরীর ও মনের সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়।

চিরতার পুষ্টিগুণ ও কার্যকর উপাদান

চিরতায় রয়েছে বিভিন্ন বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে পাওয়া যায়- স্যুরিন, অ্যামারোগেনটিন (পৃথিবীর অন্যতম তিক্ত যৌগ), গ্লুকোসাইডস, জেন্টিয়ানিন,ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি খনিজ।

এইসব উপাদানই চিরতাকে শক্তিশালী ভেষজ গুণসম্পন্ন করে তুলেছে।

চিরতা খাওয়ার উপকারিতা

১. জ্বর ও সংক্রমণ প্রতিরোধে

চিরতা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন। সে কারণে টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া বা ভাইরাল জ্বরের সময় এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং রোগ দ্রুত সারাতে সহায়তা করে।

২. রক্ত পরিষ্কার ও ত্বকের যত্নে

চিরতা রক্ত বিশুদ্ধকরণে অসাধারণ। শরীর থেকে টক্সিন বের করে ত্বককে করে উজ্জ্বল ও ব্রণমুক্ত। নিয়মিত চিরতার রস পান করলে চুলকানি, একজিমা, সোরিয়াসিসের মতো চর্মরোগেও উপকার পাওয়া যায়।

৩. হজম শক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরসনে

চিরতা হজমে সাহায্য করে এবং লিভার ও পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে। এটি পিত্তরস নিঃসরণে সাহায্য করে। ফলে গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে

চিরতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

৫. ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বৃদ্ধিতে

চিরতায় থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শরীরকে প্রস্তুত রাখে।

৬. কৃমিনাশক

চিরতা প্রাকৃতিক কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। শিশুদের পেটে কৃমি হলে চিরতা জলে ভিজিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

৭. লিভার পরিষ্কার ও শক্তিশালী করতে

চিরতা লিভার টনিক হিসেবেও কাজ করে। এটি লিভার ডিটক্সিফিকেশন করে, চর্বি জমতে বাধা দেয় এবং হেপাটাইটিসের ঝুঁকি কমায়।

৮. ম্যালেরিয়া বা টাইফয়েডের উপসর্গ কমাতে

চিরতা প্রচলিতভাবে জ্বর, বিশেষত টাইফয়েড ও ম্যালেরিয়ার উপসর্গ হ্রাসে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি জ্বরের সঙ্গে আসা দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা কমাতে সাহায্য করে।

৯. অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে

চিরতায় থাকা আয়রন উপাদান রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে এটি সহায়ক।

চিরতা খাওয়ার নিয়ম

চিরতা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। নিচে কয়েকটি প্রচলিত ও নিরাপদ পদ্ধতি দেওয়া হলো-

১. চিরতা ভেজানো পানি

এক টুকরো শুকনো চিরতা ১ গ্লাস পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে পানি ছেঁকে খেয়ে ফেলুন। এটি প্রতিদিন একবার পান করলেই যথেষ্ট।

২. চিরতা সেদ্ধ পানি

কিছু চিরতা পানি দিয়ে ৫–৭ মিনিট ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করুন। দিনে ১–২ বার খাওয়া যেতে পারে।

৩. চিরতা গুঁড়া

শুকনো চিরতা গুঁড়ো করে আধা চা চামচ পরিমাণ খালি পেটে হালকা গরম পানির সঙ্গে খাওয়া যায়।

৪. চিরতা ট্যাবলেট/ক্যাপসুল (আয়ুর্বেদিক)

বর্তমানে অনেক আয়ুর্বেদিক কোম্পানি চিরতার নির্যাসযুক্ত ক্যাপসুল বাজারজাত করছে।চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তা খাওয়া যায়।

সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যদিও চিরতা প্রাকৃতিক, তবুও কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত-

১. অতিরিক্ত খেলে বমি বমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য বা মাথাব্যথা হতে পারে।

২. অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মায়েদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চিরতা খাওয়া উচিত নয়।

৩. কম রক্তচাপ: চিরতা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, তাই যাদের ব্লাড প্রেসার কম থাকে তাদের সতর্ক থাকতে হবে।

৪. নিয়মিত ও মাত্রা অনুযায়ী খাওয়া উচিত: দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত সেবনে উপকারের পরিবর্তে অপকার হতে পারে।

 

Comments

The Daily Star  | English
Domestic violence killing women in Bangladesh

Domestic violence in Bangladesh: When numbers speak of the silence

When we are informed that 133 women have been killed by their husbands in seven months, it is no longer just a number.

7h ago