ঠিক নয় জেনেও করছেন এমন অভ্যাস থেকে দূরে থাকার উপায়

ঠিক নয় জেনেও করছেন এমন অভ্যাস থেকে দূরে থাকার উপায়
ছবি: রয়টার্স

জিম মেম্বারশিপ কিনেও দিনের পর দিন অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন! ওদিকে প্রতি মাসে অ্যাকাউন্টের টাকা জমা হচ্ছে শারীরিক চর্চার খাতে! ঝামেলাটা শুধু 'ফ্রেন্ডস' সিরিজের চ্যান্ডলারের নয়, এমন আত্মসৃষ্ট ঝামেলায় কখনো না কখনো আমরা সবাই পড়ি।

শিক্ষার্থী থাকাকালীন ২০ দিন সময় পেয়েও অ্যাসাইনমেন্ট করতে বসার জন্য সেই শেষ রাতটাই বেছে নেওয়া এবং পরে হা-হুতাশ করা। অনেকেরই এ অভ্যাস মজ্জাগত হয়ে দাঁড়ায়।

অনেকসময় আমাদের ইচ্ছে, উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য– যাই বলা হোক না কেন, তা পূরণে আমাদের নিজেদেরই আচরণ আত্মবিরোধী হয়ে ওঠে। কখনো মানুষ তা বুঝেশুনে করে, কখনো বা মনের অজান্তেই চলতে থাকে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করবার এই যাত্রা। ইংরেজিতে এই বিষয়টিকে নাম দেওয়া হয়েছে, 'সেলফ সাবোটাজ'।

আক্ষরিক অর্থে 'নিজের পায়ে নিজে কুড়াল' না মেরে বসলেও প্রতিনিয়ত এমন অনেক কিছুই মানুষ করে থাকে, যা একইরকম ফলাফল বয়ে আনে। অন্য মানুষের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চেয়ে কম ক্ষতি কিন্তু নিজের করা হয় না। বহু নতুন নতুন উপায়ে নিজেই নিজের ক্ষতি করি— কাজেকর্মে দিনদিন হয়ে উঠি আত্মঘাতী। এই আত্মঘাতী প্রক্রিয়া থামানোর জন্য নিজেকেই সচেতন হতে হবে। কিন্তু কীভাবে?

সাফল্য উদযাপন করুন

যারা সেলফ সাবোটাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, তারা নিজের ছোটবড় সাফল্যকে হেসে উড়িয়ে দেন। যত বড় সাফল্যই আসুক না, তাদের কাছে মনে হয় 'এ তো কিছুই না!' এমন নেতিবাচক ভাবনা থেকে সরে আসতে হবে। সাফল্যকে অতিমূল্যায়ন করা উচিত নয়, কিন্তু যথাযথভাবে গ্রহণ করে নিজেকে প্রশংসার চোখে দেখাটাও জরুরি। সাফল্যকে উদযাপন করে, পরবর্তী সাফল্যের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে যান।

ব্যর্থতাকে স্বাভাবিকভাবে নিন

যেকোনো কাজের দুরকম ফলাফল আসতে পারে। হয় ব্যক্তি সফল হবে, নয়তো ব্যর্থ। ব্যর্থ হলেই সবকিছু শেষ এমন আগ্রাসী আতঙ্ককে নিজের ওপর জেঁকে বসতে দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, জীবনে একটি পথ বন্ধ হলে নতুন আরও পথ খুলে যায়। জীবনে সম্ভাবনার শেষ নেই। সেসব সম্ভাবনাকে কাছে পেতে চাইলে সকলপ্রকার ব্যর্থতাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখতে হবে। হতাশ হওয়া যাবে না। একটু মন খারাপ হবে, কিন্তু সেটি কাটিয়ে উঠতে হবে।

নিজেকে মূল্য দিন

দিনশেষে ব্যক্তিকে নিজেই নিজের পাওয়ারহাউজ হয়ে উঠতে হবে। ধার করা শক্তিতে বেশিদূর এগোনো যায় না, তাই নিজেকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে জানতে হবে। এর অর্থ স্বার্থপর হয়ে ওঠা কিংবা সমাজবিচ্ছিন্ন হওয়া মোটেই নয়, বরং নিজেকে মানসিকভাবে যথেষ্ট সবল করে তোলা। নিজেকে মূল্য দিতে পারলেই নিজেকে শেষ করে দেবার এই দুষ্টচক্র ভাঙা সম্ভব হবে।

নিয়মিত চর্চা করুন

একেকজনের পেশা একেকরকম, ব্যক্তিজীবনও আলাদা। কিন্তু এই আলাদা সব জীবনের মাঝে একটি ফর্মুলা সাধারণ, আর তা হচ্ছে নিয়মিত চর্চা চালিয়ে যাওয়া। একজন গায়কের যেমন প্রতিদিন রেওয়াজ দরকার, তেমনি একজন গণিতবিদের প্রয়োজন প্রতিদিন অঙ্ক কষে যাওয়া– একজন লেখকের শব্দবাজিতে নিয়মিত সুর না ভাঁজলে কলম নামের তলোয়ারেও একসময় মরিচা ধরে যায়। তাই যেকোনো কাজই হোক, তাতে নিয়মিত চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। ঠিক তেমনি চর্চা চালিয়ে যেতে হবে নিজের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও। চর্চা থাকতে হবে ইতিবাচক আচরণের।

আত্ম-নিয়ন্ত্রণই শেষ কথা

ব্যক্তি নিজেই নিজের চালক, তাই ভালো-মন্দ সকল সিদ্ধান্তে নিজের আচরণ কেমন হবে– কতদূর গঠনমূলক কিংবা কতটা বিধ্বংসী হবে তার জীবনযাপন, সেটির চাবিকাঠিও তারই হাতে রাখা। সেলফ সাবোটাজের প্যাটার্ন যখন চোখে পড়বে, যখনই মনে হবে আবারো সেই মন্দ চক্রে জড়িয়ে যাচ্ছেন, তখন থেকেই নিজেকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। প্রতিটি ধাপ বুঝেশুনে নিতে হবে। কিছুটা জোর করে হলেও ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া, দীর্ঘসূত্রিতার জালে আটকে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

নিজেকে গাছে তুলে নিজেরই মই কেড়ে নেওয়ার এই বাজে অভ্যাসটি আমাদের মাঝে রাতারাতি সৃষ্টি হয় না, এর পেছনেও থাকে নিজস্ব ইতিহাস। থাকতে পারে ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা কিংবা অভিভাবক গোত্রীয়দের বাঁকাকথা, কোনো প্রাক্তন সঙ্গীর ছুঁড়ে দেওয়া কাদা, অথবা জীবনভর বিভিন্ন কাজে ব্যর্থতার খসড়া। ব্যর্থ হতে হতে একসময় মনে হয় যেন ব্যর্থতাই ভবিতব্য। এমন ভাবনা থেকে ব্যক্তি তখন সফল হওয়া যায় এমন কাজেও নিজেকে ব্যর্থতার পথেই নিয়ে যান। নিজেকে বারবার 'সঠিক' প্রমাণ করে নিজেকেই করে তোলেন আরও বেশি ব্যর্থ। প্রতিদিনকার জীবনে একটু একটু করে পরিবর্তন আনলে এ চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। হয়তো জিম মেম্বারশিপের বদৌলতে সপ্তাহে প্রতিদিন না পারলেও অন্তত ৩ দিন ব্যায়াম করলেন, অ্যাসাইনমেন্ট শেষরাতে না করে এবার সিদ্ধান্ত নিলেন অন্তত এক সপ্তাহ আগে হলেও বসবেন! এভাবেই, একটু একটু করে সেলফ সাবোটাজের দীর্ঘ ভোগান্তি থেকে বের হওয়া যায়।

  

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

3h ago