বর্ষায় ছাদে ফুল বাগান শুরু করবেন যেভাবে

ছবি: সংগৃহীত

বর্ষার আগমন ঘটে উপহারের ডালা নিয়ে। এটি যেমন গ্রীষ্মের উত্তপ্ত তাপ থেকে আমাদের স্বস্তি দেয়, তেমনি প্রকৃতি পায় নতুন জীবন। এমন সময়ই ছাদে ফুলের বাগান করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।

শহরাঞ্চলে বড় আকারে বাগান করার সুযোগ না থাকলেও কিছু টিপস জানা থাকলে ছাদেই করে ফেলা যেতে পারে রঙ-বেরঙের নানা ফুলের বাগান।

সঠিক জায়গা

ছাদে ফুলের বাগান করার জন্য প্রথমেই পর্যাপ্ত স্থানের প্রয়োজন। সঠিক স্থান বাছাই করার জন্য বিবেচনায় রাখতে হবে সূর্যালোক ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার বিষয়টি। স্থানটিতে দিনের বেলায় কয়েক ঘণ্টার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সূর্যের আলো পড়ে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে প্রথম বীজ বপনের সময় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে ফুল গাছগুলোর কাছাকাছি ড্রেনের ব্যবস্থা আছে কি না দেখতে হবে, যাতে অতিরিক্ত পানি জমে গাছগুলোর নিচে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না করে। যদি নিষ্কাশনের জন্য কোনো প্রাকৃতিক ব্যবস্থা না করা যায়, তাহলে গাছের নিচে বেড তৈরি করে উপকার পাওয়া যেতে পারে।

গাছ নির্বাচন

প্রতিবার ছাদে হাঁটার সময় আপনার যত্নে লাগানো গাছগুলোতে ফোটা রঙিন ফুলের প্রাণবন্ত সুবাস যখন স্বাগত জানাবে, কেমন লাগবে ভেবে দেখুন তো! বর্ষার বাতাসে ভেসে বেড়ানো ফুলের গন্ধ আপনার মন ভালো করবেই। যেহেতু ঘন ঘন ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই গাঁদা, গোলাপ, জেসমিন ও জিনিয়ার মতো সহনশীল জাত বেছে নেয়া যেতে পারে। এ ধরনের ফুল শুধু দেখতেই সুন্দর হয় না, ভারী বৃষ্টিপাতেও টিকে থাকতে পারে অনায়াসে।

মাটি ও পাত্র

ফুলের গাছ প্রস্তুত করার পর পাত্র নির্বাচন করতে হবে। বর্ষাকাল হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের জন্য পাত্রে প্রয়োজনীয় গর্ত থাকতে হবে, যাতে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে। শিকড়ের জন্য পানি ও সূর্যালোকের পাশাপাশি বাতাসও গুরুত্বপূর্ণ। গাছের পাত্র জৈব সার সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। এই জাদুকরী সংমিশ্রণ আপনার ফুলগাছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করবে, যাতে সেগুলো বেড়ে উঠতে পারে। শিকড় ভালো হলে ফুলও ভালো হয়।

বর্ষায় পরিচর্যা

বর্ষায় প্রায় সবসময় বৃষ্টি হচ্ছে বিধায় প্রকৃতিই সব করে দেবে এমনটা ভাবলে মোটেই চলবে না। কিছুটা যত্ন পেলে গাছ দীর্ঘদিন ফুল দিতে পারে।  সঠিক বৃদ্ধি এবং শিকড়ের কার্যক্ষমতা নিশ্চিত করতে গাছে প্রতিনিয়ত পানি দিতে হবে। আর্দ্র পরিবেশ থেকে কোনো কীটপতঙ্গ বা রোগ হয় কি না সেদিকে নজর দিতে হবে।

গাছ ঠিক আছে কি না নিয়মমাফিক পরিদর্শন করলে ভালো হয় এবং গাছ সুরক্ষিত রাখতে জৈব কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও ব্যবহার করা যেতে পারে। মৃত বা ঝড়ে পড়া ফুল নতুন ফুল ফুটতে বাধা দেয়। তাই সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে।

মালচিং

মালচিং মূলত গাছের পাত্রের চারপাশের মাটিকে বিভিন্ন কারণে কিছু উপাদান দিয়ে ঢেকে রাখার একটি প্রক্রিয়া। এটি সাধারণত মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং আগাছা বৃদ্ধি রোধ করার জন্য করা হয়। বাগানে মালচ ব্যবহারের ধরনের ওপর নির্ভর করে গাছের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়।

এ জন্য ছেঁড়া পাতা, কাটা ছাল, ঘাসের কাটা, নারকেলের খোসা এবং খড় ব্যবহার করা যায়। প্লাস্টিক ও রাবারের আচ্ছাদনের মতো নন-বায়োডিগ্রেডেবল উপকরণও ব্যবহার করা যায়, তবে বাস্তুতন্ত্র ও প্রতিস্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বৃষ্টির পানির কার্যক্ষমতা

বর্ষাকালে প্রকৃতি প্রচুর বৃষ্টির পানি উপহার দেয়। গাছে পানি দেওয়ার জন্য বৃষ্টির পানি অন্য ঋতুতে ব্যবহার করার জন্য ব্যারেল এবং পাত্রে সংগ্রহ করতে পারলে কিন্তু দারুণ হয়। কারণ বৃষ্টির পানিতে প্রচুর পুষ্টি এবং খনিজ পদার্থ থাকে, যা আমাদের ট্যাপের পানিতে পাওয়া যায় না। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করলে পরিবেশের ক্ষতিও কমবে। 

সৃজনশীল হয়ে উঠুন

আপনার বাগান কেবল ফুলের সংগ্রহশালা নয় বরং এটি একটি ক্যানভাস, যা আপনার সৃজনশীল সত্তাকে তুলে ধরার জন্য সুযোগ করে দিতে পারে। আপনার ফুলের বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন উচ্চতা ও ব্যবস্থা নিয়েও পরীক্ষা করতে পারেন, যা আপনার চোখকে তৃপ্তি দেবে। রঙিন পাত্র, ঝুলন্ত ঝুড়ির মতো কিছু সৌন্দর্যবর্ধক উপাদান যুক্ত করার চেষ্টা করা যেতে পারে। আপনার বাগান হয়ে উঠুক আপনার সত্তার অংশ। 

অনুবাদ করেছেন আসরিফা সুলতানা রিয়া

Comments

The Daily Star  | English

Large-scale Chinese investment can be game changer for Bangladesh: Yunus

The daylong conference is jointly organised by Bangladesh Economic Zones Authority and Bangladesh Investment Development Authority

59m ago