অর্থ সঞ্চয়ে ধনীরা যেসব সূত্র মেনে চলেন

ধনীরা তাদের প্রাত্যহিক জীবনে এমন অনেক নিয়ম অনুসরণ করেন, যা তাদের অর্থ সঞ্চয় করতে সাহায্য করে।
ছবি: সংগৃহীত

ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে কিছু ধনীর চোখ ধাঁধানো গাড়ি ও বিলাসবহুল জীবনযাপন দেখে কারো কারো মনে হতে পারে, তারা হয়তো প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। কিন্তু আসলে অধিকাংশ ধনীর ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা অনেকটা ‍উল্টো। কীভাবে অর্থকে কাজে লাগিয়ে আরও বেশি অর্থ উপার্জন করা যায়, সে সম্পর্কে ধনীরা খুবই সচেতন।

তাদের সাফল্যের পেছনে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনই নয়, সঞ্চয়েরও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। ধনীরা তাদের প্রাত্যহিক জীবনে এমন অনেক নিয়ম অনুসরণ করেন, যা তাদের অর্থ সঞ্চয় করতে সাহায্য করে।

এই লেখায় আমরা দেখব ধনীরা তাদের প্রাত্যহিক জীবনে কীভাবে ব্যয়ের বাহুল্য এড়িয়ে চলেন। তাদের কাছ থেকেই আজ কিছু সাধারণ নিয়ম এবং টিপস সম্পর্কে জানব, যা আমরাও আমাদের জীবনে অনুসরণ করতে পারি।

তারা খুবই মিতব্যয়ী

লেখক সিনথিয়া ওয়াইলি বলেন, 'আমি একজন কোটিপতি, কিন্তু খুবই মিতব্যয়ী। আমি মাসে মাত্র দুইবার রেস্তোরাঁয় খাই এবং অর্থ সাশ্রয় করি। উপহার কেনার পেছনেও আমি বাড়তি অর্থ খরচ করি না। আমার মাত্র একটি গাড়ি আছে। এটা ঠিক যে গাড়িটি একটি পোরশে, কিন্তু আমি এবং আমার স্বামী উভয়ই গাড়িটি ব্যবহার করি।'

তারা উড়োজাহাজে দামি আসনে ভ্রমণ করেন না

অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম গ্রিনপালের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ব্রায়ান ক্যালিটন বলেন, 'আমি বছরে ছয়-সাত মাস ভ্রমণ করতে পছন্দ করি, কিন্তু সবসময় উড়োজাহাজের ইকোনমি ক্লাসে যাতায়াত করি। আমার মনে হয় উড়োজাহাজে প্রথম শ্রেণিতে ভ্রমণ করাটা অর্থের অপচয়। কারণ আপনি মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্যই কিছু বাড়তি সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। আমি ব্যাপারটাকে এভাবে দেখি যে, আমরা সবাই একই উড়োজাহাজে একই সময়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাঁচ্ছি, তাহলে কেন বাড়তি অর্থ খরচ করতে হবে! আমি বরং ভালো জিনিসের জন্য অর্থ ব্যয় করতে পছন্দ করি। যেমন পাঁচ তারকা হোটেল কিংবা খুব ভালো পোশাক, যা আমি ৫-৬ বছর ব্যবহার করতে পারব। কিন্তু উড়োজাহাজের প্রথম শ্রেণিরর টিকেটের পেছনে বাড়তি অর্থ খরচ করার ইচ্ছা নেই আমার।'

তারা দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করেন

অর্গানিক খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাচুরা মার্কেটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাকজোড খাবীবভ বলেন, 'কোথাও বিনিয়োগ করলে যে ভবিষ্যতে এর সুফল পাওয়া যায়, তা আমি ধনীদের কাছ থেকে শিখেছি। আমার বাৎসরিক আয়ের ২০-২৫ শতাংশ অর্থ আমি শেয়ার, বন্ড, রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করি।'

তারা সম্পদ ও আয়কে গুলিয়ে ফেলেন না

ব্যবসায়ী ডেভ ইউ. বলেন, 'অনেকেই আয় ও সম্পদকে গুলিয়ে ফেলেন। আপনি বছরে কোটি টাকা আয় করতে পারেন এবং তারপরও ব্যর্থ হতে পারেন। আমরা এটাকে বলি HENRY (high earners, not rich yet), অর্থাৎ প্রচুর আয়, কিন্তু তারপরও ধনী না। আবার আপনি হয়তো এমন কাউকে পাবেন যার কোনো মাসিক আয় নেই, কিন্তু অনেক ধনী। সম্পদ ও আয় দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস।'

নামী ব্র্যান্ডের পেছনে তারা অর্থ খরচ করেন না

সিলভিয়া মার্কেটিং অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস এর প্রধান নির্বাহী কেনেথ কিলপ্যাট্রিক বলেন, 'গিটার বাজানো আমার একটা শখ। কিন্তু নামী ব্র্যান্ডের গিটারের পেছনে আমি অর্থ ব্যয় করি না। আমি হয়তো দু-একটি ভালো গিটার কিনি, তবে সেগুলো আমার সংগ্রহে রাখার জন্য। তবে মূলত আমি ভালো মানের কপি গিটার (মূল গিটারের অনুলিপি) কিনি। আমার কাছে মনে হয় সেগুলোও খুব ভালো এবং শব্দের দিক থেকে দামি গিটারের মতোই।'

'দামি ব্র্যান্ডের পোশাকও আমি এড়িয়ে চলি। এমনকি মাঝে মাঝে আমি কম মূল্যের এবং পুরোনো জিনিস বিক্রির দোকান থেকেও পোশাক কিনি। এর ফলে একদিকে আমি যেমন বাড়তি খরচ থেকে বেঁচে যাচ্ছি, অন্যদিক এ ধরনের দোকান থেকে কেনাকাটার ভিন্ন অভিজ্ঞতাও পাচ্ছি। অফিসে পরার মতো পোশাক কেনার ক্ষেত্রে আমি একটির সঙ্গে আরেকটি ফ্রি অফারের জন্য অপেক্ষা করি', যোগ করেন তিনি।

তারা ছোটখাট জিনিসের পেছনে বেশি অর্থ ব্যয় করেন না

'আমি আমার টাকা কীভাবে খরচ করি সে সম্পর্কে সচেতন এবং আমি বাজেটকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য অভ্যাস রপ্ত করেছি। কফি বা নাশতায় আমি ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়তি অর্থ খরচ করি না। খরচের অভ্যাসে এই পরিবর্তনগুলোর কারণে আমি অর্থ সঞ্চয় করতে পারি। ফলে আমাকে আনন্দ দেয় বা ভালো অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়, এমন কাজে আমি আরও বেশি অর্থ খরচ করতে পারি,' ভিভিপিনসের প্রধান নির্বাহী রবিন ব্রাউন বলেন।

তাদের বিলাসবহুল গাড়ি নেই

'বিলাসবহুল গাড়ির বদলে আমি ফোর্ড বা সুবারু গাড়ি চালাতেই বেশি পছন্দ করি। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য এই গাড়িগুলো বেশ উপযুক্ত। কয়েক বছর পর পর নতুন মডেলের গাড়ি না কিনে আমি বরং এই গাড়িগুলো যতদিন পর্যন্ত ভালোভাবে চলে, ততদিন পর্যন্ত ব্যবহার করি,' একটি শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রোগ্রাম ম্যানেজার জো লোপাজ বলেন।

তারা নিজেদের জন্য বিনিয়োগ করেন

ভাষা শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম লিং অ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সাইমন ব্যাচার বলেন, 'শুধু মানুষকে দেখানোর জন্য আমি কোনো কিছুর পেছনে অর্থ খরচ করার বিরুদ্ধে। আমি বরং অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং ব্যক্তিগত বিকাশের পেছনে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করি। একটি ভাষা শিক্ষার প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমার জন্য বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ভাষার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই আমি ঘন ঘন ভ্রমণ করি এবং নতুন নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়াকে অগ্রাধিকার দিই। ফলে আমি ব্যক্তিগত এবং পেশাগতভাবে ক্রমাগত শিখতে পারি এবং নিজেকে আরও বিকশিত করতে পারি।'

তারা সফলতার জন্য ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত

উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী পিটার শ্যাঙ্কম্যান বলেন, 'আমি ১৯৯০ এর দশকে এওএলে কাজ করছিলাম, যখন কোম্পানিটি ৩০০ জন কর্মীকে ছাঁটাই করে। আমিও ছিলাম তাদের মধ্যে একজন। তখন টাইটানিক সিনেমাটি মুক্তি পেতে যাচ্ছিল। আমি আমার বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়ে ৫০০ টি-শার্ট তৈরি করি, যাতে লেখা ছিল 'এটি ডুবে গেছে। এবার সামনের দিকে তাকান।' আমি যদি এই সিদ্ধান্তটি না নিতাম, তাহলে আমাকে গৃহহীন অবস্থায় থাকতে হতো। আমি ৬ ঘন্টায় ৫০০ টি-শার্ট বিক্রি করি এবং এখান থেকে ৫ হাজার ডলার লাভ করি। এরপর আমি ইউএসএ টুডে পত্রিকাকে ফোন করে আমার কাজের কথা জানাই। তারা আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন করে। এরপর আমি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দুই মাসে ১০ হাজার টি-শার্ট বিক্রি করি এবং ১ লাখ ডলারেরও বেশি লাভ করি। সেটি ছিল আমার প্রথম প্রতিষ্ঠান।'

তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

 

Comments