বিদেশে পড়তে যাওয়া, দেশে ফেরা ও সামাজিকতা: যেমন অভিজ্ঞতা হলো

বিদেশে উচ্চশিক্ষা
ছবি: সংগৃহীত

দেশে ফিরে অনেকের কাছেই শুনতে হয়েছে, কেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডির আগেই চলে আসলাম? কেন ওখানে স্থায়ী হওয়ার ব্যবস্থা করলাম না! একে তো দেশে ফেরারপর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশে মনে হয়েছে, ভুল করলাম কি? এই যে কথা নেই, বার্তা নেই, অফিস থেকে ফেরার পথে একেকদিন একেক গোলযোগে রাস্তা বন্ধ। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা, সময়ের অপচয়। তারপরেও তো দেশেই ফিরেছি, এসব আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই।

মূল কথা হলো, আপনি কেন ফিরে আসবেন বা আসবেন না, এর আসলে কোন সদুত্তর বা সোজাসাপ্টা উত্তর নেই। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিজেদের কাছেও অনেক সময় এই সব প্রশ্নের উত্তর জানা থাকে না। তবে হ্যাঁ, ব্যক্তি এবং তার নিজের পরিকল্পনা, চিন্তার জগত অনুযায়ী একেক জনের সিদ্ধান্ত একেক হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে নিজ মানসিকতা রাখা উচিত ভিন্নতার। সবার পরিকল্পনাই যে আমার মতো হবে, এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসার। একই সঙ্গে প্রায়ই খেয়াল করেছি, কোনো কিছুর সিদ্ধান্ত বা পরামর্শ জানতে না চাইলেও অনেকেই এসে সিদ্ধান্ত টানতেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি ভুলে যান, তার পরিকল্পনা বা তার ইচ্ছা অন্যের মতো হবে না।

এই তালিকার শেষ নেই! শুনতে হয়েছে কেন দ্বিতীয় মাস্টার্স করছি, একেবারে পিএইচডি নয় কেন। কারণ দ্বিতীয় মাস্টার্স 'সময়ের অপচয়'। আমরা যারা শিক্ষকতা এবং গবেষণা পেশায় আছি, তাদের জন্য আসলে কোনো ডিগ্রিই সময়ের অপচয় নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রেই এই পেশায় প্রতিটি ডিগ্রি একেকটি গুরুত্ব যোগ করে নিজের পোর্টফলিওতে। আবার সবাই হয়তো নিজ কর্মপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ছুটি নিয়ে উচ্চতর শিক্ষার জন্য পাড়ি দেন  না। অনেকের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ কিংবা টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হলো অর্থের উৎস। অনেক পিএইচডির শিক্ষার্থীই তাই চাকরিজীবন শুরু করার আগে নিজেদের অ্যাসিসট্যান্টশিপ বাড়ানোর আবেদন করেন। এটা অধিকাংশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর জন্যই সত্য।

আবার অনেকের শিক্ষা ছুটির মেয়াদ শেষে কর্মস্থলে বাধ্যকতাও থাকে যোগদানে জন্য। তাই আসলে কারো পরিস্থিতির সঙ্গেই কারোটা মেলে না। কিন্তু প্রায়ই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তাম, যখন কোনো আলোচনা কিংবা গেট-টুগেদারে এ জাতীয় উপদেশ পেতে হতো। আপনি যদি হন নারী শিক্ষার্থী, তাও আবার অবিবাহিত, তাহলে উপদেশের মাত্রা যেন আরও বেড়ে যায়।

এসব কারণে, মনে হয়েছে আমরা যারা বিভিন্ন দেশে পড়তে যাই, আমাদের নিজেদেরও প্রয়োজন এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া। আপনি নিজে কারো বিরক্তির উদ্রেক করছেন কি না বা যে বিষয়গুলো ব্যক্তির একান্তই, সে বিষয়ে উপযাচক হিসেবে পরামর্শ দিচ্ছেন কি না। বিষয়টি একইসঙ্গে নিজ দেশ, মানসিকতার পরিচয়ও তুলে ধরে ভিনদেশে। আপনি শুধু নিজ দেশের মানুষের সঙ্গেই না, ওখানে নানান জাতি, সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গেও পরিচিত হবেন। ক্লাসে, পাঠাগারে এমনকি কর্মস্থলে তাদের সঙ্গেই আপনাকে চলতে হবে। তাদের নানান ধর্মীয় উৎসব, সাংস্কৃতিক রীতিনীতি থাকবে ওখানে। আপনি নিশ্চয়ই সেসব জেনেই একটি দেশে উচ্চতর শিক্ষায় যাচ্ছেন। তাই 'ডাইভারসিটি' বা ভিন্নতার বিষয়টিতেও সহনশীল হওয়া প্রয়োজন।

এমন অভিজ্ঞতাও আছে, নিজ দেশের কিছু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর কারণে কোনো গেট-টুগেদারে বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়তে হয়েছে। আপনার ভিন্ন মতামত থাকতেই পারে, কিন্তু সেটা চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা না রেখে সহনশীল হওয়ার মানসিকতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। কারণ একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর আচার, তার সবকিছুর দক্ষতার ওপর প্রফেসর বা সেই বিভাগে ভালো কিংবা মন্দ ধারণা তৈরি হতে পারে। তাই বিষয়টি নিজ দেশের ঐতিহ্য এবং পরিচয়ের সঙ্গেও যুক্ত।

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির শিক্ষার্থী।

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus returns home completing 4-day Japan tour

A flight of Singapore Airlines, carrying the CA landed at Hazrat Shahjalal International Airport at 12:15am on Sunday

4h ago