যেসব লক্ষণে বুঝবেন ইন্টার্নশিপে শোষিত হচ্ছেন

ইন্টার্নশিপ হলো স্বল্পমেয়াদি কাজের সুযোগ। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী, নবীন পেশাজীবী বা সদ্য স্নাতক কেউ কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পান। এটি বেতনসহ বা বিনা বেতনে, অনসাইট বা রিমোট বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেভাবেই হোক না কেন, ইন্টার্নশিপের মূল উদ্দেশ্য একটাই আর তা হলো নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি, হাতে কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন সুযোগের দরজা খুলে দেওয়া।
ইন্টার্নরা সাধারণত আশা করেন যে তারা সুযোগ, দক্ষতা গঠন, মেন্টরশিপ, নেটওয়ার্কিং এবং বিভিন্ন ক্যারিয়ার পথ অন্বেষণের সুযোগ পাবেন। অন্যদিকে, ইন্টার্ন নিয়োগের মাধ্যমে নিয়োগকর্তারা নতুন চিন্তাধারা, কাজের সহায়তা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য কর্মী গড়ে তোলার সুযোগ খোঁজেন। মূলত, ইন্টার্নশিপ উভয় পক্ষের জন্যই একটি মূল্যবান সুযোগ।
ইন্টার্নশিপ দুই পক্ষের জন্য মূল্যবান মনে হলেও অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। অনেক সময় দেখা যায় ইন্টার্নদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করানো হচ্ছে, ন্যায্য পারিশ্রমিক দেওয়া হচ্ছে না কিংবা সত্যিকারের শেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাই যারা ইন্টার্নশিপ করছেন বা খুঁজছেন, তাদের জন্য কিছু বিষয় মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। ইন্টার্নশিপে আপনাকে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করানো হচ্ছে না কি, সচেতনতার সঙ্গে এই বিষয়টি খেয়াল করা দরকার।
ইন্টার্নের বেতনে ফুল টাইম কর্মীর কাজ
আপনি একজন ইন্টার্ন হলেও, আপনাকে দিয়ে করানো হচ্ছে একজন ফুল টাইম কর্মীর মতো কাজ। এমনকি অনেক সময় বিনা পারিশ্রমিকে বা খুব কম বেতনে। চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে কাজের সময় ও ছুটির দিন সম্পর্কে যে কথা বলা হয়েছিল, বাস্তবে শুরু করার পর দেখা যাচ্ছে সেটা ঠিক মিলছে না।
প্রতিদিনই আপনাকে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিও তৈরি হচ্ছে, যেখানে কেউ স্পষ্ট করে বলছে না কখন কাজ শেষ হবে। কাজটি পরের দিন করলেও হতো, তবুও আপনাকে বলা হচ্ছে, 'এখনই শেষ করতে হবে'। যদি এমন দৃশ্য প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে বুঝতে হবে আপনাকে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
কাজ শেখার জন্য ইন্টার্নশিপ করা হয়। এটি একটি কাজের অভিজ্ঞতা হিসেবে পরে সাহায্য করে। মেন্টরশিপ, ট্রেনিং সেশন বা সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে কাজ শেখানোই ইন্টার্নশিপের মূল উদ্দেশ্য।
কিন্তু যদি সবসময় শুধু কাজ শেষ করে দেওয়ার চাপ দেওয়া হয় আর কাজ শেখা তো দূরের কথা, উল্টো সবকিছু নিজে নিজেই বোঝার চেষ্টা করতে হয় তাহলে সেটা একরকম শোষণের মধ্যেই পড়ে। কেউ যদি বলে 'কাজ করতে করতেই শিখে নাও', বা 'নিজে নিজে সব বুঝে নিতে হবে', তাও ঠিক না। এতে শেখার পরিবেশ তৈরি হয় না। নিজে নিজে কিছু শেখা অবশ্যই দরকারি, কিন্তু সেটারও একটা কাঠামো থাকা উচিত। কোনো রকম দিকনির্দেশনা ছাড়া শুধু কাজ চাপিয়ে দিলে সেটা শেখা নয়, বরং একতরফা সুবিধা নেওয়া।
বেতন পেতে দেরি
যদি আপনার ইন্টার্নশিপটি টাকার বিনিময়ে (পেইড) হয় তাহলে অবশ্যই সময়মতো টাকা পাওয়া উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, ফুল-টাইম কর্মীরা ঠিক সময়ে বেতন পাচ্ছেন, কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে কোনো না কোনো অজুহাতে বারবার বেতন পরিশোধে দেরি হচ্ছে। এটি যদি নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়ায় তবে বুঝতে হবে নিয়োগদাতা আপনার সময় ও অবদানকে যথাযথভাবে সম্মান করছেন না।
ফুল-টাইম হোক কিংবা ইন্টার্নশিপ পেইড কাজের সুযোগ মানেই হলো সময়মতো বেতন পাওয়া। বারবার বেতন দিতে দেরি হওয়া কোন ভালো লক্ষণ নয়।
কোনো সাহায্য ছাড়াই কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া
শেখার জন্য চ্যালেঞ্জিং কাজ বেছে নেওয়া খুব ভালো। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জের অর্থ যদি এমন হয় যে আপনাকে আপনার দক্ষতার বাইরে কোন সাহায্য ছাড়াই কাজ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তাহলে সেটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। আপনি হয়তো কাজটি ঠিকভাবে করার জন্য আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন, কিন্তু কোনো দিকনির্দেশনা ছাড়া ঠিকমতো করতে পারছেন না। আর যখন তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ আগাচ্ছে না, তখন দোষ কিন্তু পড়বে আপনার ঘাড়েই!
আপনাকে ছোট করা হয়
আপনি সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন, তবুও যথাযথ সম্মান পাচ্ছেন না, বরং নিয়োগকর্তাদের আচরণে মনে হবে আপনাকে সহজেই বদলে ফেলা যায়। অনেক সময় দেখা যায় আপনার কাজের প্রশংসা করার বদলে তারা বারবার অভিযোগ করছেন, অস্পষ্ট বা হতাশাজনক মতামত দিচ্ছেন এবং আপনাকে এমন মনে করানো হচ্ছে যে আপনার জায়গা অন্য কাউকে দেওয়া হবে।
এটি কোন গঠনমূলক সমালোচনার লক্ষণ নয়। কখনোই ভাববেন না যে, এই সমালোচনা আপনার ভালোর জন্য। এটি আপনাকে নিজের সম্পর্কে খারাপ মনে করানোর একটি উপায়, যাতে আপনি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। ফলে তারা আপনাকে শোষণ করার সুযোগ পাবে।
যদি ইন্টার্নশিপের সময় এই এক বা একাধিক লক্ষণ দেখে থাকেন, তাহলে সেটি নিয়ে ভাবুন। ইন্টার্নশিপ অবশ্যই মূল্যবান একটি বিষয়। কিন্তু সেখানে যদি আপনি দিনের পর দিন শোষিত হতে থাকেন তাহলে সেটি আপনার জন্য ভালো নয়। নিজের সীমারেখা তৈরি করুন। যদি সেখানে আপনি নিজেকে অবমূল্যায়িত বা উপেক্ষিত মনে করেন তাহলে নিজের পক্ষ নিন। নিজের হয়ে কথা বলুন।
অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম
Comments