কর্মস্থল ‘টক্সিক’ হলে কী করবেন

টক্সিক কর্মক্ষেত্র
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের চারপাশের পরিবেশ মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব ছাড়াও নিজেদের কর্মক্ষেত্র এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। যারা বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত, তাদের দিনের একটা বিরাট অংশ কাটাতে হয় কর্মস্থলে। তাই কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ভালো হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে আজকাল একটি কথা প্রায়ই শোনা যায়, 'টক্সিক কাজের পরিবেশ'। টক্সিক শব্দটির বাংলা বিষাক্ত। যখন একজন মানুষের কর্মস্থলের পরিবেশ নানা কারণে বিষাক্ত হয়ে ওঠে সেটিকেই টক্সিক কাজের পরিবেশ বলা হয়।

আপনার কাজের পরিবেশ টক্সিক কি না বুঝবেন কীভাবে

টক্সিক কর্মস্থল কর্মীদের জন্য একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে রাখে। দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এরকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সেখানে কাজের যথাযথ মূল্যায়ন হয় না এবং আপনার কাজকে ছোট করে দেখা হতে পারে। এ ধরনের পরিবেশে কাজের মূল্যায়ন না করে তোষামোদিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বস এবং অন্যান্য সহকর্মীরা সহযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ না করে বরং ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখেন। সেখানে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ থাকে না এবং মাঝেমাঝে অন্যদের সামনে অপমানও করা হয়। একে অন্যকে সহযোগিতা করার বদলে কীভাবে আরেকজনকে মারপ্যাঁচে ফেলে টপকে যাওয়া যায় সেই চিন্তা কাজ করে এ পরিবেশে। 

এসব বৈশিষ্ট্য থেকেই বোঝা যায় আপনার কর্মক্ষেত্র টক্সিক কি না। টক্সিক কর্মক্ষেত্র মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি আপনার হতাশা, দুশ্চিন্তা ও অবসাদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। এরকম পরিবেশে দিনের একটি অংশ কাটালে আপনার মেজাজ খিটমিটে হয়ে যাবে এবং আপনি নিজেও একজন নেতিবাচক মানুষে পরিণত হতে পারেন। সুযোগ থাকলে এরকম পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসাই ভালো। তবে অনেক সময় তা সম্ভব হয় না। এরকম পরিস্থিতিতে কীভাবে এ ধরনের পরিবেশে খাপ খাইয়ে চলবেন তাই জানব আজ।

মনে রাখবেন, আপনি একা নন

কর্মক্ষেত্রের এরকম পরিবেশের শিকার কেবল আপনি নন, আপনার অনেক সহকর্মীও ভুক্তভোগী। তাই তাদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। একই রকম মানসিকতার মানুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন এবং একসঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করুন।

কাজের বাইরে নিজেকে সময় দিন

দিনের উল্লেখযোগ্য সময় এরকম পরিবেশে কাটানোর পর নিজেকে কিছুটা সময় দিন। নিজের প্রিয় কাজ করুন। সেটি হতে পারে বই পড়া, রান্না করা, খেলাধুলা করা, সিনেমা দেখা বা শরীরচর্চা করা। কাজের বাইরেও কাজ নিয়ে চিন্তা না করে অবসর সময়টি নিজের জন্য রাখুন।

নিজের লক্ষ্য স্থির রাখুন

টক্সিক কর্মস্থলে সবসময় নেতিবাচক কথা বলে আপনার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। চারপাশের সহযোগিতা না পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলবেন না, বরং প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করুন। নিজের কাজকে নিজেই মূল্যায়ন করুন। আপনার লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যান এবং এক্ষেত্রে নিজেই নিজেকে উৎসাহ দিন।

অফিসের বাইরে কাজ নয়

কিছু বিষয়ে আপনাকে কঠোর হতে হবে। যেমন অফিসের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে অফিসের কোনো ফোন রিসিভ করা বা মেইলের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে অফিসের ফোনটি বন্ধ করে রাখুন। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে অফিসের চিন্তা বাদ দিন। এই সময়টি একান্ত আপনার। পরিবার এবং নিজেকে সময় দিন। তা না হলে অফিসের বিষাক্ত পরিবেশের ভার আপনার ব্যক্তিগত জীবনকেও গ্রাস করে ফেলবে। 

ইতিবাচক থাকুন

নিজে ইতিবাচক থাকুন এবং ইতিবাচক ধরনের মানুষদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করুন। টক্সিক কর্মস্থলের নেতিবাচক প্রভাব নিজের মধ্যে যেন না আসে সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখুন। ইতিবাচক সহকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটান, যারা আপনাকে উৎসাহ দেবেন এবং গঠনমূলক সমালোচনা করবেন।

অফিস আলোচনায় কান দেবেন না

অফিসে অহেতুক কোনো বিষয়ে আলোচনা হলে তাতে অংশগ্রহণ করবেন না। কাউকে নিয়ে সমালোচনা বা অপমানজনক কথা হলে সেখান থেকে সরে আসুন। এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় আলোচনা থেকে দূরে থেকে নিজের কাজে মনোযোগী হোন।

বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজুন

দীর্ঘদিন টক্সিক পরিবেশে কাজ করলে ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। তাই সুযোগ থাকলে এ ধরনের পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করাটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। চেষ্টা করুন নিজের অভিজ্ঞতা ও আগ্রহ অনুযায়ী নতুন কর্মস্থল খোঁজার। চাকরি পেয়ে গেলে যোগদানের আগে কিন্তু নতুন অফিসে পরিবেশ কেমন, সেই খোঁজ নিতে ভুলবেন না।

তথ্যসূত্র: ফোর্বস

 

Comments

The Daily Star  | English

'Frustrated, Yunus hints at quitting'

Frustrated over recent developments, Chief Adviser Prof Muhammad Yunus is considering stepping down, said sources familiar with what went down at the Chief Adviser’s Office and Jamuna yesterday.

1h ago