সুখী দাম্পত্যে কর্মব্যস্ত দম্পতিদের অনুসরণীয় যে ৫ বিষয়

কর্মব্যস্ত জীবনে কাজের দিকটা ঠিকঠাকভাবে সামলে সঙ্গীর জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করা আসলেই কঠিন।
ছবি: সংগৃহীত

একটি সম্পর্ক সুন্দর ও স্বাভাবিক রাখতে একে অপরকে সময় দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কর্মব্যস্ত জীবনে কাজের দিকটা ঠিকঠাকভাবে সামলে সঙ্গীর জন্য পর্যাপ্ত সময় বের করা আসলেই কঠিন।

সব সম্পর্কই আলাদা এবং একটি সম্পর্ককে অন্যটির সঙ্গে তুলনা করাটা উচিত নয়। আপনি যদি বিয়ে বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কোনো সম্পর্কে আবদ্ধ হোন এবং ব্যস্ততার কারণে সঙ্গীকে পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারেন, তাহলে কিছু নিয়ম অনুসরণ করে এ ঘাটতি মোচন করতে পারেন।

লক্ষ্য অর্জনে দুজনে একসঙ্গে কাজ করুন

জীবনের প্রতিটি ধাপেই নতুন নতুন দক্ষতা অর্জনে মানুষ বিভিন্ন কিছু করে। কেউ সাঁতার শেখে, কেউবা ড্রাইভিং শেখে, কেউ আবার কোনো ডিগ্রি নেয়। সম্ভব হলে দুজন মিলেই এ কাজগুলো করুন। এতে ডিগ্রি বা দক্ষতা অর্জনও হবে, আবার সঙ্গীর সঙ্গে সময়ও কাটানো যাবে।

পূর্ণকালীন চাকরির পাশাপাশি মাস্টার্স করছেন আদিবা আরিফ।

তিনি বলছিলেন, 'নতুন দক্ষতা অর্জনের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই এবং আপনার সঙ্গী যদি আপনাকে শেখায়, তাহলে এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে? আমার বিয়ের পর স্বামীর কল্যাণে গাড়ি চালানো এবং সাঁতার শিখেছি। এখন আমরা একসঙ্গে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করছি। আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা করি এবং একে অপরকে সাহায্য করি।'

 

ঘরের কাজ দুজন মিলেমিশে করুন

দম্পতিদের জন্য বাসা ও অফিসের কাজ একসঙ্গে সামলানো কঠিন। সেক্ষেত্রে বাসার কাজ যদি দুজন মিলেমিশে করা যায়, তাহলে দুজনের ওপরই চাপ কম পড়ে আবার একসঙ্গে কাজ করতে করতে কিছু ভালো মুহূর্তও উপভোগ করা যায়। প্রাপ্তবয়স্ক অনেকেই মুদি কেনাকাটা করতে খুব আনন্দ পান। বাসার মুদি কেনাকাটাও দুজন একসঙ্গে করুন।

বাসার কেনাকাটা একসঙ্গে করলে দম্পতিরা খুব ভালো সময় কাটাতে পারেন। তবে এর বাইরেও একসঙ্গে রান্না করা, খাবার প্রস্তুত করা ও ঘর গোছানোর কাজ করেও সঙ্গীর সঙ্গে খুব ভালো সময় কাটানো যায়। মাঝেমাঝে তাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যান, সিনেমা দেখতে যান কিংবা একসঙ্গে সুন্দর কিছু সময় কাটান।

একে অপরের সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন

সঙ্গীর সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারাটা সম্পর্কের মূল ভিত্তি। বিভিন্ন প্রজন্মের দম্পতিরাও একে অপরের সঙ্গে ভালো যোগাযোগের সুফল ভোগ করেছেন।

কর্পোরেট চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্স চাকরিও করেন জোহাইনা।

তিনি বলেন, 'আমি এবং আমার স্বামী প্রতিদিন লম্বা সময় ধরে কাজ করি। আমরা যত ব্যস্ত বা ক্লান্তই থাকি না কেন, দিনশেষে আমরা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলি। আমি বাড়ি পৌঁছেছি, অন্তত এটুকু হলেও তাকে জানাই।'

আমরা যত স্বাবলম্বীই হই না কেন, দিনশেষে আমাদের সবারই মন খুলে বলার জন্য কাউকে না কাউকে প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ দম্পতিই দিনশেষে তাদের সঙ্গীকে মন খুলে কিছু বলতে পারার মাঝে আনন্দ খুঁজে পান এবং স্বাভাবিকভাবেই তখন তা একসঙ্গে কাটানো সময় হয়ে উঠে।

ছুটির দিনগুলো একসঙ্গে পরিকল্পনা করুন

সারা সপ্তাহ যত ব্যস্ততাই যাক না কেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোই আমাদেরকে যেন বাঁচিয়ে রাখে। সপ্তাহের দিনগুলো যেহেতু সীমিত, তাই এ ব্যাপারে আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ভালো। ছুটির দিনগুলোতে একসঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, বাইরে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাওয়া কিংবা সিনেমা দেখতে যাওয়া যেতে পারে। আগে থেকে পরিকল্পনা করা থাকলে সময় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। 

একে অপরকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য বা পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য সপ্তাহে অন্তত একদিন সময় রাখুন। এই অভ্যাস অব্যাহত রাখলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব কমবে, আবার দারুণ কিছু সময়ও কাটবে। 

একে অপরকে স্পেস দিন

গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার হচ্ছে সঙ্গীকে স্পেস দেওয়া। আমরা প্রত্যেকেই আসলে আমাদের নিজেদের জীবনই যাপন করছি।

সম্প্রতি বিয়ে করা নাবিলা বলেন, 'আমরা দুজনই খুব ব্যস্ত চাকরি করি। আমরা জানি আমাদের পরস্পরকে সময় দিতে হবে। আবার একে অপরকে স্পেস দেওয়াকেও আমরা গুরুত্ব দিই।'

কাজের চাপ বা অন্য ব্যস্ততায় যখন অন্য কোনোদিকে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না, তখনও এই স্পেস খুব কাজে আসে।

নাবিলা বলেন, 'গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে সবসময় সঙ্গীর উপস্থিতি বা সঙ্গ প্রত্যাশা করাটা মোটেও আদর্শ হতে পারে না।'

প্রতিটি সম্পর্কই আলাদা। একটি বিষয় কোনো দম্পতির জন্য কাজ করলেও সেটি হয়তো অন্য দম্পতির জন্য কাজ নাও করতে পারে। ব্যস্ত দম্পতিরা যদি তাদের দৈনন্দিন জীবনে ওপরের উপায়গুলো অনুসরণ করেন, তাহলে কাজ ও সম্পর্কের মধ্যে একটি সুন্দর সমন্বয় করতে পারবেন।

অনুবাদ করেছেন আহমেদ হিমেল

 

Comments