পারকি সৈকতের ভাগ্য বদলে দেবে বঙ্গবন্ধু টানেল

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পারকি সৈকতে ডাব বিক্রি করে সংসার চালান আমজাদ মিয়া। শুক্রবার কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে।
পারকি সৈকতের ভাগ্য বদলে দেবে বঙ্গবন্ধু টানেল
পারকি সমুদ্র সৈকত। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পারকি সৈকতে ডাব বিক্রি করে সংসার চালান আমজাদ মিয়া। শুক্রবার কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে।

আমজাদ মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টানেল খুলে দিলে সহজে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে থেকে লোকজন পারকি সৈকতে আসতে পারবেন। মানুষ বেশি আসলে বেচাকেনা বাড়বে, আমাদের লাভও বেশি হবে।'

চট্টগ্রাম শহর থেকে পারকি সৈকতের বর্তমান দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। তবে টানেলের আনোয়ারা পয়েন্ট থেকে পারকির দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার।

এ কারণে টানেল চালু হলে সহজে পর্যটকরা চট্টগ্রাম থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন পারকি সমুদ্রসৈকতে।

কর্ণফুলী নদীর মোহনায় উপজেলার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে অবস্থিত পারকি সমুদ্র সৈকত।

এই সৈকতের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিদিন শত শত পর্যটক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন সৈকতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখার জন্য। সৈকতের আশাপাশে ভালো হোটেল, মোটেল না থাকায় এখানে আসা পর্যটকদের সন্ধ্যা নামার আগে গন্তব্যে ফিরে যেতে হয়।

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পারকি সৈকত। ছবি: সংগৃহীত

তবে আশার কথা হচ্ছে, পারকি সৈকতকে অত্যাধুনিক পর্যটন স্পট বানাতে ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক পর্যটন কমপ্লেক্স।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে ১৩ দশমিক ৩৬ একর জমিতে ৭১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশ্বমানের পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে।

২০১৮ সালের নভেম্বরে শুরু হয়েছিল এ প্রকল্পের কাজ। ২০২০ সালের নভেম্বরে মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয় দফায় এর মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। বর্তমানে এ প্রকল্পের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের মূল কাজ ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

প্রকল্পের মধ্যে মোট ১৭টি স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। ১৪টি আধুনিক কটেজ রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি ডবল ডুপ্লেক্স কটেজ ও ১০টি সিঙ্গেল কটেজ। চতুর্থ তলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস ভবন।

পারকি সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, টানেল উদ্বোধন হলে পর্যটকের চাপ বাড়বে মনোরম পারকি সমুদ্রসৈকতে। বেসরকারি উদ্যোক্তারাও এখানে বিনিয়োগের জন্য মুখিয়ে আছেন।

পারকি সৈকতের মায়ের দোয়া হোটেলের মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, 'যথাযথ উদ্যোগ নিলে পারকিকে মিনি কক্সবাজার বানানো সম্ভব। এতে করে চট্টগ্রামের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে।'

আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, 'উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটন করপোরেশন, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। টানেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ সৈকতের উন্নয়ন হলে দ্রুত এর সুফল পাওয়া যাবে।'

পারকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এম এ কাইয়ুম শাহ বলেন, 'পারকি একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সমুদ্রসৈকত ও বিনোদন কেন্দ্র। এখানকার ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট যে কারও নজর কাড়বে।'

তিনি দাবি করেন, 'টানেল নির্মাণ হওয়ার পর এখানে পর্যটকের চাপ বহুলাংশে বাড়বে। সরকার পর্যটকদের নিরাপত্তায় নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে নানা স্থাপনা গড়ে উঠছে। আমরা পরিকল্পিতভাবে পারকি আধুনিক সৈকতে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছি।'

 

Comments