বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে ৩০ মিনিটে আনোয়ারা থেকে বিমানবন্দর

বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে ৩০ মিনিটে আনোয়ারা থেকে বিমানবন্দর
বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে ৩০ মিনিটে আনোয়ারা থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর যাওয়া যাবে। ছবি: স্টার

আনোয়ারার জিরো পয়েন্টখ্যাত চাতুরি বাজার থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর যেতে বর্তমানে ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে আনোয়ারা থেকে মাত্র ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর যাওয়া সম্ভব হবে।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমাবন্দর থেকে নিয়মিত যাত্রী নিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাতায়াত করেন প্রাইভেটকার চালক সেলিম মিয়া। আজ শুক্রবার কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে।

তিনি বলেন, টানেল চালু হলে আমরা সহজে আনোয়ারা হয়ে বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া চলে যেতে পারব। এতে করে যেমন সময় বাঁচবে তেমনি আমাদের আয়ও বাড়বে।

আনোয়ারা থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর রুটে মিনি বাস চালান মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। 

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে ক্রসিং, মাইজ্জারটেক, সেতু, ফিরিঙ্গিবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পাড়ি দিয়ে বিমানবন্দর যেতে হতো। ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগতো। টানেল চালু হলে সেই সময় লাগবে না।'

তবে তিনি টানেলে গণপরিবহনের জন্য বিশেষ টোল হার নির্ধারণের অনুরোধ জানান।

বঙ্গবন্ধু টানেল
বঙ্গবন্ধু টানেল। ছবি: স্টার

আনোয়ারা স্থানীয় সংবাদকর্মী জিন্নাত আইয়ুব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টানেল দিয়ে গণপরিবহন পার হতে পারবে কি না সেটি এখনো অজানা। অনেক ব্যয়বহুল প্রকল্পটির টোল হার কেমন নির্ধারণ হবে সেটি এখনো আমরা জানি না।'

'আমাদের দাবি হচ্ছে, টানেল দিয়ে গণপরিবহন চালুর সুযোগ দেওয়া। আর গণপরিবহনের জন্য অল্প টোল হার নির্ধারণ করা', বলেন তিনি।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা নেভাল একাডেমির পাশ ঘেঁষে শুরু হয়ে কর্ণফুলী নদীর মাঝ দিয়ে দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তে উঠেছে এ টানেল।

সরেজমিনে দেখা যায়, টানেলের সংযোগ সড়কের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আনোয়ারা প্রান্তে সিইউএফএল এলাকায় টানেলের মুখ থেকে আনোয়ারা কালাবিবিরদীঘি পর্যন্ত পিএবি সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টানেল রোড। অপরদিকে শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবিরদীঘি পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার ৬ লেনের সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে।

বলা হচ্ছে, টানেলকে ঘিরে চীনের সাংহাই সিটির আদলে চট্টগ্রাম শহর 'ওয়ান সিটি টু টাউন' মডেলের রূপ পাবে। টানেলকে ঘিরে আনোয়ার পরিণত হবে উপশহরে।

আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ বলেন, 'টানেল চালু হলে পারকি সৈকত ঘিরে পর্যটন শিল্পে আরও বেশি প্রসার লাভ করবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে সহজে পর্যটকরা পারকি সৈকতে চলে আসতে পারবেন।'

টানেল দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজতর করতে কক্সবাজারে নির্মাণাধীন মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণের চিন্তা করছে সংশ্লিষ্ট দফতর। এতে করে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এ টানেল নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে চীনের সহায়তা ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ২ শতাংশ হারে এ ঋণ দিয়েছে। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) এই টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

দুটি টিউব সংবলিত নদীর তলদেশে এই মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এরমধ্যে টানেল টিউবের দৈর্ঘ ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। টানেলটি দুটি টিউবে ৪ লেনবিশিষ্ট। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ রয়েছে।

টানেল প্রকল্পে রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় করবে চীনা কোম্পানি। গত ১৮ মে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ কাজের জন্য চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে (সিসিসিসি) নিয়োগের প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।

 

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

6h ago