গাজীপুরের দ্য বেস ক্যাম্প বাংলাদেশে রোমাঞ্চকর ক্যাম্পিং
শুধু শহুরে যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পাওয়ার আকুতি নয়, রোমাঞ্চের জন্য প্রয়োজন প্রচণ্ড দুঃসাহস। একঘেয়েমি ভাব কাটিয়ে অদম্য অনুশীলনে কতটুকু আত্মনিয়োগ করা যাবে তারও কড়া হিসাব করতে হয়। নিদেনপক্ষে ভ্রমণটা যদি কোনো দুর্গম জায়গায় হয়।
কিন্তু ঢাকার গাজীপুরের বেস ক্যাম্প মোটেই তেমন দুঃসাধ্য এলাকা নয়, যাকে জয় করার দরকার হয়। রোমাঞ্চপ্রেমীদের জন্য এই জায়গাটিকে এমন রূপ দেওয়া হয়েছে, যেন তারা সব ধরনের আউটডোর অ্যাক্টিভিটি করতে পারেন।
চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক দ্য বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ সম্পর্কে।
দ্য বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ উদ্যোগের সূত্রপাত
দ্য বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ ধারণাটি তামজিদ সিদ্দিক স্পন্দনের মস্তিষ্কপ্রসূত। সবুজ বন, রিসোর্ট, লেক, খাবার; অবকাশযাপনের এই পুরনো উপাদানগুলোর সঙ্গে থাকবে বিভিন্ন আউটডোর অ্যাক্টিভিটির সুযোগ। এতে শুধু নির্মল বিনোদনই মিলবে না, সঙ্গে শরীরচর্চাটাও হয়ে যাবে।
এই লক্ষ্য নিয়েই ২০১৩ সালে গাজীপুরের শফিপুরে তিনি গড়ে তোলেন দেশের এই প্রথম আউটডোর অ্যাক্টিভিটি ক্যাম্প।
দ্য বেস ক্যাম্প বাংলাদেশে যেসব অ্যাক্টিভিটি করা যায়
বেস ক্যাম্পের শুরুতেই আছে বিশাল পার্কিং এলাকা; সঙ্গে অবারিত সবুজ মাঠ। এই মাঠ থেকেই শুরু হয় অন ট্রি ও অন গ্রাউন্ডের রোমাঞ্চকর সব চ্যালেঞ্জ। প্রতিটি অ্যাক্টিভিটিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে সঙ্গে থাকেন অভিজ্ঞ ইন্সট্রাক্টর।
অধিক উদ্দীপনার শক্ত অ্যাক্টিভিটিগুলো হলো- অন ট্রি কোর্স (যেখানে ৯টি বাধা পেরোতে হয়), অন গ্রাউন্ড কোর্স (যেখানে ৮টি বাধা পেরোতে হয়), এবং কাদা পথ (যেখানে রয়েছে ৭টি বাধা)।
সাইক্লিং, টায়ার পাস, মাঙ্কি পাস, টায়ার স্যান্ডউইচ, রোপ ট্রেঞ্চ, জিপ লাইনিং, রোপ ওয়াক ও বোটিং নিয়ে পূর্ণ হয় অন গ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি।
এ ছাড়াও রয়েছে টিম বিল্ডিং গেম, ক্যাম্প ফায়ার, বার বি কিউ পার্টি ও পটার মেকিং। বাচ্চাদের স্পেশাল জোনের পাশাপাশি তাদের জন্য আছে ট্রামপোলিন ও কারপেন্ট্রি প্রশিক্ষণ।
স্পোর্টসের মধ্যে আছে- ওয়াটার ফুটবল, ওয়াটার জর্বিং, তীর-ধনুক, ফুটবল, হিউম্যান ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস এবং ইনডোর বোর্ড গেম।
এগুলোর সঙ্গে ট্রি হাউজ, ট্র্যাকিং আর ফিশিংয়ের ব্যবস্থা আর তাবুতে রাত্রি যাপন পুরোপুরি বনভোজনের সাধ পুরণ করবে।
এই অ্যাক্টিভিটিগুলোর বেলায় কিছু কিছু শারীরিক অসুস্থতা থাকলে ইন্সট্রাক্টরকে তা আগেই জানিয়ে রাখতে হবে। যেমন: উচ্চতা ভীতি, অ্যাজমা বা হৃদরোগ সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের অসুস্থতা।
গাজীপুরের বেস ক্যাম্পের সুযোগ-সুবিধা
এখানে পাওয়া যাবে প্রাকৃতিক সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার সুযোগ। পুরো এলাকার চারপাশ ঘেরাও করে প্রাচীর তোলা আছে, তাই অনাকাঙ্ক্ষিত অনুপ্রবেশের ভয় নেই। আর ক্যাম্পের ভেতরে নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়মিত টহল চলে। তাদেরকে সঙ্গ দেয় প্রশিক্ষিত ডগ স্কোয়াড।
অ্যাক্টিভিটিগুলোতে সঠিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য রয়েছেন পুরুষ ও নারী প্রশিক্ষক এবং তারা সকলেই সার্টিফিকেট প্রাপ্ত।
অ্যাক্টিভিটিগুলোর জন্য বরাদ্দ করা হয় টপ-অফ-লাইন সরঞ্জাম ও গিয়ার। এরপরেও অসাবধানতা বশত যে কোনো সমস্যার জন্য ২৪ ঘন্টা প্রস্তুত থাকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান টিম।
সবশেষে, সরাসরি খেত থেকে তোলা টাটকা খাবারের কথা না বললেই নয়, যা প্রস্তুত করা হয় অভিজ্ঞ রাধুনীর মাধ্যমে।
বেস ক্যাম্পে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
এখানে থাকার জন্য আছে এসি প্রাইভেট বাংলো, ডরমেটরি রুম, প্রাইভেট রুম, মাচা ঘর, সাফারি এবং তাঁবু। তাঁবুর ব্যবস্থাটা করা হয় মূলত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটির ওপর নির্ভর করে তাঁবুতে থাকার খরচ কম-বেশি হয়।
তাঁবুর প্যাকেজগুলো বিশেষত গ্রুপ ভিত্তিক তথা স্কুল, পরিবার ও কর্পোরেটদের জন্য হয়ে থাকে। ২০ জনের দলে প্রতি দুইজনের জন্য তাবু ভাড়া ২৫০০ টাকা। যারা এসি ও বাথরুমসহ সিঙ্গেল রুম নিতে চান তাদের জন্যও একই খরচ। তবে ডাবল রুমের জন্য ৩৫০০ টাকা ভাড়া। বিশাল লিভিং রুম ও লাউঞ্জসহ ডুপ্লেক্স বাংলোর জন্য গুণতে হবে ১২০০০ টাকা।
এ ছাড়া অ্যাক্টিভিটিগুলোর ওপর নির্ভর করে ক্যাম্পে ঘোরাফেরা ও থাকার খরচ পরিবর্তন হয়।
অ্যাক্টিভিটি ছাড়া সারাদিন ঘোরার জন্য জনপ্রতি খরচ ২২০০ টাকা। এখানে খাবার এবং অন্যান্য পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত। এই প্যাকেজে রাত্রি যাপন করতে হলে প্যাকেজ মূল্য বেড়ে ৩৯৯৫ টাকা হবে। সেক্ষেত্রে রাতের খাবারসহ থাকার জন্য টুইন শেয়ার তাঁবু দেওয়া হবে।
অ্যাক্টিভিটিসহ সারাদিন ক্যাম্পে থাকার জন্য জনপ্রতি খরচ ৩৪৯৫ টাকা। এখানে অ্যাক্টিভিটিসহ খাদ্য এবং অন্যান্য পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত। এই প্যাকেজে রাত্রি যাপন করতে হলে প্যাকেজ মূল্য হবে ৫৪৯৫ টাকা। এতে অন্যান্য পরিষেবার পাশাপাশি রাতের খাবারসহ টুইন শেয়ার তাঁবু যোগ হবে।
এ ছাড়া প্যাকেজগুলো পছন্দমত কাস্টমাইজ করা যেতে পারে, যেমন ২ দিন ১ রাত কিংবা ৩ দিন ২ রাত।
সবগুলো প্যাকেজে ভ্রমণকারীদেরকে আলাদা করে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়।
খাবারের ক্ষেত্রে এখানে সাধারণত দিনে ও রাতে বুফের ব্যবস্থা থাকে। তবে আগে থেকে বলে রাখলে পছন্দমতো খাবারের ব্যবস্থা করা যায়। এখানে খেয়াল রাখতে হবে, ক্যাম্পের ভেতরে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয় না।
তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য বা বেস ক্যাম্পের ব্যাপারে সর্বশেষ খবরাখবর জানতে ঘুরে আসতে পারেন তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে।
ঢাকা থেকে গাজীপুর বেস ক্যাম্পে যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দূরে গাজীপুরের মাদবপুর এলাকার শফিপুরে দ্য বেস ক্যাম্প বাংলাদেশের অবস্থান। ঢাকার গুলিস্তান থেকে বিভিন্ন উপায়ে গাজীপুর বেস ক্যাম্পে যাওয়া যেতে পারে।
টঙ্গী রুট ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়েতে চলাচলকারী যেকোন বাসে করে গাজীপুর চৌরাস্তায় যাওয়া যায়। অতঃপর বামে জয়দেব-টাঙ্গাইল হাইওয়ে ধরে কিছুদুর এগুলেই পড়বে শফিপুর। সেখান থেকে বামে মোড় নিয়ে মাধবপুর সড়ক ধরে গেলেই পৌঁছা যাবে বেস ক্যাম্পে।
এখানে যাওয়ার আরেকটি উপায় হচ্ছে সাভার হয়ে যাওয়া। এর জন্য নবীনগর-চন্দ্রা রুটে বাইপাইল পেরিয়ে যেতে হবে ডানে জিরানি-কাশিমপুর রোড বরাবর। কিছুদূর গেলেই হাতের বামে পড়বে মাধবপুর রোড।
নিজস্ব গাড়ি বা রিজার্ভ গাড়ি হলে যে কোনো রুটেই খুব সহজেই পৌঁছা যাবে এই বেস ক্যাম্পে।
শেষাংশ
সুস্বাস্থ্যের জন্য শারীরিক অনুশীলনের কোনো বিকল্প হয় না। আর ঢাকার গাজীপুরের দ্য বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ সেই অনুশীলনের উদাত্ত পরিবেশক। এখানকার অন ট্রি, অন গ্রাউন্ড কার্যক্রম শারীরিক কার্যক্ষমতার জানা ও অজানা সব সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে যাওয়ার দিকে ধাবিত করে।
সেখানে জোরালভাবে নিরীক্ষা হয়ে যায় নিজের সহ্য ক্ষমতার। সেই সঙ্গে দম নিয়ন্ত্রণে রেখে ফুটবল, টেনিস আর সাঁতার অ্যাড্রেনালিন রাশের মাধ্যমে মনে ছড়িয়ে দেয় প্রফুল্লতা।
Comments