জাহানারা ফাউন্ডেশন মিউজিয়াম: অতীতের ঢাকার এক টুকরো স্মৃতি

জাহানারা ফাউন্ডেশন মিউজিয়াম
ছবি: পলাশ খান

২৫ বংশাল রোড ঠিকানার একটি বাড়ি। আশপাশের বাড়িগুলোর সঙ্গে এর পার্থক্য হলো, বাড়িটি ইতিহাসের এক বিশাল ভান্ডার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির একটি তলায় রয়েছে অসংখ্য অ্যান্টিক জিনিস এবং প্রত্নবস্তু, যা আমাদের শহরের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দেয়। তবে পাঠ্যবইয়ে পড়া রাজনৈতিক ইতিহাস নয়, এক সময়ের ঢাকার পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের এক ঝলক দেখা যায় এখানে।

জাহানারা খাতুন (১৯৩০-২০০১) ছিলেন একজন সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মী। ২০১৩ সালে তার নামে জাহানারা ফাউন্ডেশন মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই মিউজিয়ামের প্রেসিডেন্ট জাহানারা খাতুনের মেয়ে জিনাত পারভীন তার পরিবারের সঙ্গে মিলে মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তার বাবা-মা এবং আগের প্রজন্ম অর্থাৎ দাদা-দাদির নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন রান্নাঘরের সামগ্রী থেকে শুরু করে ক্যাশ বাক্স এবং কাপড় সবই আছে এখানে। পুরো মিউজিয়ামটিই সাজানো হয়েছে তাদের পরিবারের বিভিন্ন পুরোনো জিনিস দিয়ে।

জাহানারা ফাউন্ডেশন মিউজিয়াম
ছবি: পলাশ খান

জাদুঘর প্রতিষ্ঠার কারণ জানতে চাইলে জিনাত পারভীন বলেন, 'আমাদের মা মারা যাওয়ার পর আমরা দেখলাম বাড়িতে প্রচুর পুরোনো জিনিস আছে। সেগুলো ফেলে না দিয়ে বা কাউকে না দিয়ে সংরক্ষণের চিন্তা করি, যেন মানুষ এখানে এসে পুরোনো দিনের ঢাকার মানুষদের পারিবারিক জীবন কেমন ছিল সে সর্ম্পকে ধারণা পেতে পারেন।'

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জাহানারা খাতুনের ছোটবেলার খেলনা, মশারিসহ খাট, একটি চেয়ারসহ বিভিন্ন জিনিস আছে এই জাদুঘরে। তার বিয়ের নিখুঁত কাজের জমকালো জুতোজোড়াও এখানে পরম যত্নে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

জাদুঘরের কথা চিন্তা করলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশাল ঝকঝকে কোনো দালান। তবে জাদুঘরে যে শুধু অসংখ্য প্রত্নবস্তু থাকতে হবে তা নয়, খুব ছোট পরিসরে ব্যক্তিগত জিনিস নিয়েও জাদুঘর গড়ে তোলা যায়।

এই জাদুঘরের জিনিসগুলো কেবল যত্ন দিয়ে সংরক্ষণ করা হয় না, যত্নের সঙ্গে যোগ হয়েছে গৌরব। এখানে জিনাত পারভিনের দাদা রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী হাজী মৌলভি আল্লাহ বকস সরকারের একটি অভিজাত কাতানের শেরওয়ানি রয়েছে।

জাহানারা ফাউন্ডেশন মিউজিয়াম
ছবি: পলাশ খান

জিনাত পারভীন তার দাদা সম্পর্কে বলেন, 'তিনি ২২টি পঞ্চায়েতের সরদার ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ছিলেন একজন এমএলএ। তৎকালীন তেভাগা আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।'

জাদুঘরের একটি কর্নারে ইউনানি চিকিৎসক হেকীম হাবিবুর রাহমানের ব্যবহৃত কিছু জিনিস রাখা আছে। হেকীম হাবিবুর রাহমান ছিলেন নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন এবং ঢাকার ইতিহাসের ওপর লেখা অন্যতম বিখ্যাত বই 'ঢাকা পাচাস বারাস পাহলে'র লেখক। তার ব্যবহৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে একটি বড় কাচের কৌটো, যেখানে ওষুধ এবং অন্যান্য ক্যামিকেল রাখা হতো বলে জানালেন জিনাত পারভীন।

জাদুঘরটিতে শুধু ঘরের ব্যবহার্য জিনিস আছে তা নয়, ঢাকার তথা বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত এমন নানা কিছু রয়েছে এখানে। রয়েছে ১৯৭০ সালে জিনাত পারভীনের বাবা, মনসুর রহমান সরকারের ব্যবহার করা কয়েকটি লাল হালখাতা।

এখানে একটি বুলেটবিদ্ধ টেবিল রয়েছে। জিনাত পারভীন জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি বিমান হামলার শিকার এই টেবিলটি।

এই জাদুঘরে আরও দেখতে পাবেন কয়েকটি বড় মটকা।

জিনাত পারভীন বলেন, 'এগুলো এই বিল্ডিংয়ের কাছেই কন্সট্রাকশন কাজের সময় মাটির নিচে পাওয়া গেছে।'

অন্যদিকে ডাইনিংয়ের বেশ কিছু সামগ্রী রয়েছে, যার মধ্যে আছে একটি জারের সঙ্গে এক সেট কাপ ও কিছু সিরামিকের জিনিস।

এখানকার প্রতিটি জিনিসের রয়েছে একটি গল্প, এখানকার স্টাফ এবং পরিবারের সদস্যরা এসব গল্প অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ভীষণ পছন্দ করেন। এখানে যাওয়ার মাধ্যমে আপনি ঢাকাকে আরও ভালো ভাবে চিনতে পারবেন।

জাহানারা ফাউন্ডেশন মিউজিয়ামে ব্যক্তিগত সামগ্রী ছাড়াও নানা অ্যান্টিক সামগ্রী রয়েছে। যারা ঢাকাকে চিনতে আগ্রহী তারা এখানে গেলে ভীষণ উপভোগ করবেন। জাদুঘরটি রোববার ও বৃহস্পতিবারে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এ ছাড়া বিশেষ দিনগুলোতেও খোলা থাকে এ জাদুঘর।

অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম

Comments

The Daily Star  | English

Election Roadmap: BNP unhappy as Yunus gives no specific timeline

The election must be held by December, as any delay could cause the situation to spiral out of control, the BNP said after a meeting with the chief adviser yesterday.

9h ago