শীতেও কি সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে, বাছাই করবেন কীভাবে

চলুন জেনে নিই চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ও মার্কস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী ইমরান হাসানের কাছ থেকে।
সানস্ক্রিন
ছবি: সংগৃহীত

অনেকেই মনে করেন সানস্ক্রিন শুধু গরমের জন্যই। রোদ তেমন থাকে না বলে শীতে হয়তো এটি ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। আসলেই কি তাই?

চলুন জেনে নিই চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ও মার্কস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী ইমরান হাসানের কাছ থেকে।

শীতকালেও কি সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে

ডা. ইমরান হাসান বলেন, 'সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ওজোন স্তর ভেদ করে পৃথিবীতে আসে। এই অতিবেগুনি রশ্মি শুধু গরমকালেই নয়, শীতকালেও আসে এবং ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলে। শীতকালে রোদের তীব্রতা না থাকলেও অতিবেগুনি রশ্মি যেহেতু ত্বকের ওপর পড়ে, সেহেতু ত্বকের সুরক্ষায় শীতকালেও সানস্ক্রিন বা সানব্লক ব্যবহার করতে হবে। কারণ ত্বকে ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে, মেছতাসহ ত্বকের বিভিন্ন রোগ, রোদে পোড়া থেকে বাঁচতে, ত্বকের কেরাটিন প্রোটিন ঠিক রাখতে, এজিং, প্রিম্যাচিয়ুর এজিং, ত্বকে ভাঁজ পরা, ত্বক কুঁচকে যাওয়া এ ধরনের সমস্যা থেকে সুরক্ষা দেয় সানস্ক্রিন। শীত কিংবা গ্রীষ্মে শুধু মেয়েদের নয়, ছেলেদেরও সমানভাবে ত্বকের যত্নে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।'

সানস্ক্রিন কখন ব্যবহার করবেন

ডা. ইমরান হাসান বলেন, 'যাদের ফরসা ত্বক তাদের ক্ষেত্রে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। তাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের পিগমেন্টারি ডিজঅর্ডার, মেছতা নামক রোগ হয়। সেক্ষেত্রে যারা গরমকালে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন কিন্তু শীতকালে করেন না তাদের রোগ ভালো না হয়ে আরও খারাপের দিক চলে যায়।'

অতিরিক্ত রোদে কাজ করা, খেলোয়াড়, সূর্যের সরাসরি সংস্পর্শে যারা থাকেন তাদের শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাতে হবে।

যারা অফিস বা ঘরে মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ব্যবহার করেন সেখান থেকে আসা রে ত্বকের ক্ষতি করে। তা থেকেও সুরক্ষা দেয় সানস্ক্রিন।

ইউভি-এ অনেক ভেতরে প্রবেশ করতে পারে, গাড়ির কাঁচ, বাড়ির জানালাও ভেদ করে ত্বকে প্রবেশ করে, তা থেকে সুরক্ষা দেয় সানস্ক্রিন।

সানস্ক্রিন বাছাই

সানস্ক্রিন দুই ধরনের হয়- খনিজ ও রাসায়নিক। রাসায়নিক সানস্ক্রিনগুলোতে অ্যাভোবেনজন, অক্টিসালেট, অক্টোক্রাইলিন, হোমোসালেট এ ধরনের উপাদান থাকে। খনিজ সানস্ক্রিনে জিঙ্ক অক্সাইড বা টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড এ দুটো পদার্থ থাকে। রাসায়নিক এবং খনিজ উভয় সানস্ক্রিন একইভাবে কাজ করে।

খনিজ সানস্ক্রিন সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহার করা যাবে, অ্যালার্জি বা জ্বালাপোড়া হবে না। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক সবাই ব্যবহার করতে পারবেন।

আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন বাছাই করতে হবে। ত্বক চার ধরনের হয়, যেমন- স্বাভাবিক, তৈলাক্ত, সংবেদনশীল ও শুষ্ক।

যাদের ঘাম বেশি হয় তাদের ত্বক তৈলাক্ত। তারা সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার না করে ম্যাটিফাইং  সানস্ক্রিন, জেল বা স্প্রে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক সহনশীল থাকবে এবং ঘামও কম হবে।

অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা থাকলে ওয়াটারপ্রুভ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যাবে। সুইমিংপুল বা সমুদ্রে গোসলের সময়ও ওয়াটারপ্রুফ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ভালো। নয়তো ঘাম ও পানিতে মিশে সানস্ক্রিন উঠে যাবে। তৈলাক্ত ত্বক হলে জেল বেসড বা ক্রিম জাতীয় সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ভালো। শুষ্ক ত্বকের জন্য হয় অয়েল বেজড সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

সানস্ক্রিন বাছাইয়ে এসপিএফের গুরুত্ব

সানস্ক্রিন বাছাইয়ে সবচেয়ে যেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে তা হচ্ছে, সান প্রটেক্টর ফেক্টর- এসপিএফ। এসপিএফের ওপর নির্ভর করে ত্বক কতক্ষণ সুরক্ষা দিতে পারবে আর কোনটি ব্যবহার করতে হবে।

সাধারণত উন্নত দেশে এসপিএফ ১৫ থেকে ৯০ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ৩০ বা ৫০ এ দুটো এসপিএফ ব্যবহার করে থাকি আমরা।

৩০ বা ৫০ এর গুরুত্ব হচ্ছে এটাকে বলা হয় স্পেকট্রাম, যদি ইউভি-এ এবং ইউভি-বি দুটিকেই কাভারেজ দিতে পারে তাহলে ব্রড স্পেকট্রাম বলা হয়। আর একটি কাভারেজ দিলে বলা হয় শর্ট স্পেকট্রাম।

এসপিএফ ৫০ অতিবেগুনি রশ্মিকে ৯৯% ব্লক করে দিতে পারে। এসপিএফ ৩০ অতিবেগুনি রশ্মিকে ৯৭% ব্লক করতে পারে।

যাদের ত্বক সংবেদনশীল, ত্বকের সমস্যা আছে, বয়সের প্রভাব আগেই পড়া শুরু হয়ে গেছে, রোদে গেলে ত্বক পুড়ে যায়, তাদের অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে এসপিএফ ৫০ ব্যবহার করতে হবে জানান ডা. ইমরান।

যাদের এ ধরনের সমস্যা নেই তারা এসপিএফ ৫০ ব্যবহার করলে ত্বকে কোনো সমস্যা হতে পারে। তাদের এসপিএফ ৫০ এর নিচে ব্যবহার করতে হবে।

সানস্ক্রিন ব্যবহারে সতর্কতা

১. সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে। অর্থাৎ কোনো ধরনের অ্যালার্জি আছে কি না তা জেনে নিতে হবে।

২. ত্বকে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনোকিছু এড়ানোর জন্য আগে সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করে দেখে নিতে হবে।

৩. অনেকের অতিরিক্ত ঘামের জন্য সানস্ক্রিন উঠে যায়। যাদের ঘামের সমস্যা হবে তাদের সে অনুযায়ী সানস্ক্রিন বাছাই করতে হবে।

৪. সানস্ক্রিনে বিষাক্ত কিছু আছে কি না, অ্যালার্জি মুক্ত কি না, ব্রড স্পেকট্রাম ও ডার্মাটোলজিস্ট এপ্রোভড কি না তা দেখে নিতে হবে।

৫. চোখের নিচে, আশেপাশে হালকা করে সানস্ক্রিন দিতে হবে, যাতে ভেতরে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৬. সানস্ক্রিন লাগানোর পর মুখে ক্রিম, পাউডার বা অন্যকিছু লাগানো উচিত নয়।

৭. সানস্ক্রিন ব্যবহারের ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর এর কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায়। পরে ক্লিনজিং করে আবার সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

Comments