সাইনুসাইটিসের কারণ ও ধরন, প্রতিরোধে যা করবেন

সাইনোসাইটিস
ছবি: সংগৃহীত

আশপাশে খেয়াল করলেই দেখবেন, পরিচিতদের মধ্যে কেউ না কেউ সাইনুসাইটিসে ভুগছেন। সাইনুসাইটিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেড-নেক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুল হক নিপুন।

সাইনুসাইটিস কী

ডা. হাসানুল হক বলেন, মানুষের মুখমণ্ডলে নাকের আশেপাশে যে হাড়গুলো আছে তার ভেতরে এক ধরনের গহ্বর বা কুঠুরি রয়েছে, যেগুলো বাতাসে পূর্ণ থাকে। এই গহ্বর বা কুঠুরিগুলোকে সাইনাস বলে। নাকের দুইপাশ থেকে মাথা পর্যন্ত ম্যাক্সিলারি সাইনাস, স্পেনয়েন সাইনাস, ইথময়েড সাইনাস ও ফ্রন্টাল সাইনাস থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ম্যাক্সিলারি সাইনাস। সাইনাসের বিভিন্ন কাজ রয়েছে। যেমন-

শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা বায়ুর আদ্রর্তা ঠিক রাখা সাইনাসগুলোর কাজ। মানুষ যখন গরম আবহাওয়ায় থাকে তখন বাতাসকে ঠান্ডা করে এবং ঠান্ডা আবহাওয়া থাকলে বাতাসকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এনে শরীরের ভেতর প্রবেশ করায়।

শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ধুলাবালি নাকের ভেতর প্রবেশ করলে সাইনাস থেকে এক ধরনের মিউকাস বা শ্লেষ্মা তৈরি হয়, যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস প্রতিরোধে সাহায্য করে। কণ্ঠের রেজোন্যান্স তৈরিতে সাইনাসের ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া সাইনাস বাতাসে পূর্ণ থাকার কারণে মাথার ওজন কম মনে হয়।

এই সাইনাসগুলো কোনো কারণে যখন সংক্রমিত হয় তখন এর মধ্যে এক ধরনের প্রদাহ তৈরি হয়। আর সাইনাসের প্রদাহকেই সাইনুসাইটিস বলে।

সাইনুসাইটিস কেন হয়

বিভিন্ন কারণে সাইনুসাইটিস হতে পারে। যেমন-

১. সাইনুসাইটিসের অন্যতম কারণ হচ্ছে অ্যালার্জিক, যেটাকে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়। শ্বাস নেওয়ার সময় বাতাসে ধুলাবালির সঙ্গে থাকা বিভিন্ন অ্যালার্জেন নাকের ভেতর প্রবেশ করে নেজাল মিউকাসে ইরিটেশন তৈরি করে। যার ফলে হাঁচি হয়, ঘন ঘন ঠান্ডা লাগে, সর্দি হয়, নাকে প্রদাহ হয়, যা থেকে সাইনুসাইটিস হয়।

২. ঠান্ডাজনিত কারণে হতে পারে। শীতের দিনে স্যাঁতস্যাঁতে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কারণে হতে পারে।

৩. কারো যদি নাকের ভেতর পলিপ থাকে, নাকে মাংস বৃদ্ধি পেলে সাইনুসাইটিস হতে পারে।

৪. নাকের হাড় যদি বাঁকা হয়ে যায় তাহলে সাইনুসাইটিস হতে পারে। অনেকের জন্মগতভাবে নাকের হাড় বাঁকা থাকে, আবার আঘাতের কারণেও হতে পারে।

৫. নাকে বাতাসের প্রবাহ যদি ঠিকমতো না চলে এবং টনসিল ও এডিনয়েডে ঘনঘন সংক্রমণ হলে সাইনুসাইটিস হতে পারে।

সাইনুসাইটিসের ধরন

যেকোনো বয়সী মানুষেরই সাইনুসাইটিস হতে পারে। তবে যাদের অ্যালার্জি ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা বেশি এবং নাকে আঘাত পেয়েছেন তাদের সাইনুসাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সময়কাল অনুযায়ী সাইনুসাইটিস তিন ধরনের।

একিউট সাইনুসাইটিস: উপসর্গ ২ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

সাব একিউট সাইনুসাইটিস: উপসর্গ ২ সপ্তাহ থেকে ৩ মাস স্থায়ী হয়।

ক্রনিক সাইনুসাইটিস: ৩ মাসের বেশি সময় উপসর্গ স্থায়ী হলে সেটি ক্রনিক সাইনুসাইটিস।

সাইনুসাইটিসের লক্ষণ

১. মাথায় তীব্র ব্যথা হওয়া।

২. নাকে ও নাকের আশপাশে গাল, চোখ, কপাল, চোয়ালে ব্যথা।

৩. নাক দিয়ে ঘনঘন পানি পড়া, নাক বন্ধ ও শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া।

৪. ঘ্রাণশক্তি কমে যায়। খাবারের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।

৫. শরীরে জ্বর জ্বর ভাব, ক্লান্তি ও অবসাদ।

যাদের একিউট অথবা সাব একিউট সাইননুসাইটিস রয়েছে তারা সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু সাইনুসাইটিসের চিকিৎসা না করলে ক্রনিক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। দীর্ঘদিনের সাইনুসাইটিসের ফলে নাকের মিউকাস জমে জমে এক ধরনের পলিপ তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে সাইনুসাইটিসের উপসর্গের পাশাপাশি পলিপ বড় হয়ে নাকের সামনের দিকে বের হয়ে আসতে পারে। অনেক সময় নাকের পেছন দিকে চলে যেতে পারে গলার দিকে, যা রোগীর ঝুঁকি বাড়ায়।

সাইনুসাইটিসের চিকিৎসা

ডা. হাসানুল হক বলেন, সাইনুসাইটিসের চিকিৎসা ২ ধরনের। মেডিকেল ট্রিটমেন্ট ও সার্জারি।

প্রথমে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সাইনুসাইটিস কোন অবস্থায় আছে সেটি শনাক্ত করতে হবে। যাদের সাইনুসাইটিস একিউট অথবা সাব একিউট অবস্থায় আছে তাদের ন্যাজাল স্টেরয়েড স্প্রে, ন্যাজাল ডিকনজেসটেন্ট ড্রপ, অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ, মন্টিলুকাস দীর্ঘদিন ব্যবহারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কারো কারো ক্ষেত্রে প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে প্রদাহ কমানোর জন্য।

কিন্তু যাদের ওষুধে কাজ হচ্ছে না, সাইনুসাইটিসের সঙ্গে নাকে পলিপ আছে, নাকের হাড় বাঁকা সেক্ষেত্রে অনেক সময় অস্ত্রোপচার করতে হয়।

সাইনুসাইটিস প্রতিরোধ

সাইনুসাইটিস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি যাদের অ্যালার্জি ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে তাদের অনেক বেশি সর্তক থাকতে হবে।

১. ধুলাবালি থেকে দূরে থাকতে হবে।

২. বাইরে গেলে সবসময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

৩. ঘরে কার্পেট ব্যবহার করলে ডাস্ট জমে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন ঘটাতে পারে। তাই কার্পেট ঘনঘন পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে ময়লা না জমে।

৪. ঘরের আসবাবপত্র ও বিছানা পরিষ্কারের সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

৫. পোষা প্রাণী থেকেও অনেকের অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।

৬. নোংরা, স্যাঁতস্যাঁতে, অস্বাস্থ্যকর ও ঠান্ডা পরিবেশ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।

৭. ঋতু পরিবর্তনের সময় সাইনুসাইটিসের সংক্রমণ বেশি হয়। সে সময় সাবধানে থাকতে হবে।

৮. অ্যালার্জি ও ঠান্ডা জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

৯. ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।

১০. অ্যারোসোল, মশার কয়েলসহ যেকোনো স্প্রে থেকে দূরে থাকতে হবে।

১১. সরাসরি এসি ও ফ্যানের নিচে না ঘুমানো।

১২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

JnU protests called off

Students and teachers of Jagannath University called off their protest last night after receiving assurances from the government that their demands would be met.

5h ago