শিশুদেরও কি বাতরোগ হয়?

শিশুদের বাতরোগ
ছবি: সংগৃহীত

অনেকেই মনে করে থাকেন, বাতরোগ শুধু বয়স্কদের ক্ষেত্রেই হয়। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে বাতরোগের যে লক্ষণগুলো দেখা যায়, সেগুলো শিশুদের মধ্যেও দেখা যেতে পারে। একে জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থাইটিস (জেআইএ) বলে।

শিশুদের বাতরোগ সম্পর্কে জেনে নিন এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের রিউমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বিআরবি হসপিটালস লিমিটেডের রিউমাটোলজি অ্যান্ড মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. হাবিব ইমতিয়াজ আহমদের কাছ থেকে।

শিশুর বাতরোগ কী

ডা. হাবিব ইমতিয়াজ বলেন বড়দের ক্ষেত্রে বাতরোগের বিশেষ বিশেষ নাম থাকে যেমন- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, স্পন্ডাইলো আর্থ্রাইটিস। শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় বাতরোগের যে লক্ষণগুলো আছে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বাতরোগের প্যাটার্ন পরিবর্তন হয়ে যায়। তার আগ পর্যন্ত এটিকে জুভেনাইল ইডিওপ্যাথিক আর্থাইটিস নামে অভিহিত করা হয়। পরে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে বাতরোগের কোন শাখায় সে যাচ্ছে সেটার উপরে নামকরণ করা হয়ে থাকে।

শিশুর বাতরোগ কেন হয়

বিভিন্ন কারণে শিশুর বাতরোগ হতে পারে। সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। ধারণা করা হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের জেনেটিক প্রিডিসপজিশনের কারণে হতে পারে, বংশগতির ধারক ও বাহক ডিএনএ লেভেলে কোনো পরিবর্তন যদি শিশু জন্মের সময় থেকেই নিয়ে আসে তাহলে জুভেনাইল ইডিওপেথিক আর্থ্রাইটিস (জেআইএ) বেশি হয়।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু বারবার সংক্রমণ ঝুঁকি, বিশেষত কিছু সুনির্দিষ্ট ভাইরাস সংক্রমণের কারণে শরীরের যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সেটি স্বাভাবিক কোষের বিরুদ্ধে বেশি সক্রিয় হয়ে শিশুদের বাতরোগ তৈরি করতে পারে।

শিশুর বাতরোগের লক্ষণ

জুভেনাইল ইডিওপেথিক আর্থ্রাইটিস ১৬ বছর বয়সের নিচের শিশুদের হয়। শিশুর ২ থেকে ৪ বছর বয়সে এবং ১১ ও ১২ বছর বয়সে জুভেনাইল ইডিওপেথিক আর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বয়স ১৬ বছরের বেশি হলে রোগীকে প্রাপ্তবয়স্ক বাত রোগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাতরোগের কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন-

১. ৩ বা ৩ এর নিচে অস্থিসন্ধি আক্রান্ত হয়।

২. গিরা ব্যথা ও গিরা ফুলে যায়।

৩. কিছু কিছু ক্ষেত্রে গিরার পাশে রগে প্রদাহ হয়, ব্যথা হয়।

৪. গিরা ভাঁজ করতে না পারা, ঠিকমত হাঁটতে না পারা, উঠা থেকে বসার সময় সমস্যা হওয়া।

৫. জ্বর আসে, গলা ব্যথা, শরীরে লাল লাল ফুঁসকুড়ির মতো দানা দেখা দেয় অনেকের।

শিশুর বাতরোগের ধরন

ডা. হাবিব ইমতিয়াজ বলেন, শিশুর আক্রান্ত জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির সংখ্যা এবং কী কী লক্ষণ আছে তার উপর ভিত্তি করে জুভেনাইল ইডিওপেথিক আর্থ্রাইটিস ভাগ করা হয়।

  • যদি বাত আক্রান্ত অস্থিসন্ধির সংখ্যা ৫ এর কম হয় তাহলে তাকে অলিগোআর্টিকুলার জেআইএ বলে।
  • আক্রান্ত অস্থিসন্ধির সংখ্যা অত্যাধিক হলে তাকে পলিআর্টিকুলার জেআইএ বলে।
  • অস্থিসন্ধির সঙ্গে রগের ব্যথা থাকলে তাকে এনথেসাইটিস রিলেটেড আর্থ্রাইটিস বলে।
  • অস্থিসন্ধি আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি জ্বর, ক্ষুধামন্দা, মাংশপেশীতে ব্যথা, ওজন কমে যাওয়ার মত লক্ষণ থাকলে সিসটেমিক আর্থ্রাইটিস বলে।

চিকিৎসা ও ঝুঁকি

ডা. হাবিব ইমতিয়াজ বলেন, শিশুর বাতরোগের চিকিৎসা যদি সঠিক সময়ে না করা হয় তাহলে আক্রান্ত অস্থিসন্ধিগুলোর কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলার ঝুঁকি থাকে। শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। শিশুর অস্থিসন্ধি ও মাংশপেশির বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। অসুস্থ থাকার কারণে মানসিক বিকাশ ঠিকমতো হয় না। বাতরোগের চিকিৎসায় দেওয়া ওষুধের কারণে বার বার সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

শিশুর বাতরোগ অনেক সময় দেখা যায় হঠাৎ করে হয়, আস্তে আস্তে বাড়ে। প্রথম দিকে হালকা ব্যথা এবং পরে লক্ষণগুলো তীব্র হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য প্রথমে শিশু বিশেষজ্ঞ এবং পরবর্তীতে বাতরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়ার কথা বলেন ডা. হাবিব ইমতিয়াজ। বাতরোগ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং দীর্ঘমেয়াদে ওষুধ খেতে হয় এই বিষয়টি রোগী ও তার অভিভাবকে বোঝানো হয়।

বড়দের বাতরোগের চিকিৎসা থেকে একটু আলাদা হয় শিশুদের বাতরোগের চিকিৎসা। শিশুদের বাতরোগের চিকিৎসায় বিশেষ করে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ যত কম সময় এবং কম ডোজে দেওয়া যায় তত ভালো বা না দিতে পারলে আরও ভালো। কারণ স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে। ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ এবং বাত নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ দেওয়া হয় অত্যন্ত স্বল্প ডোজে। শিশুর ওজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে। রোগীকে নিয়মিত ফলোআপে রাখা, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না, শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে কি না সেদিকে নজর রাখার কথা বলেন ডা. হাবিব ইমতিয়াজ।

একইসঙ্গে শিশুর বাতরোগ ভালো হয়ে গেলেও পরে আবারও বাতরোগ ফিরে আসতে পারে সেজন্য রোগী ও অভিভাবকদের সচেতন করা হয়। শিশুদের ইপিআই সিডিউরের টিকার পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও কিছু ভ্যাকসিন দিতে হবে।

 

 

 

 

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

1h ago