নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে কারা, লক্ষণ কী

নিউমোনিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ নিউমোনিয়া আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি বয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুদের।

নিউমোনিয়া সম্পর্কে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত।

নিউমোনিয়া কী ও কেন হয়

অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, নিউমোনিয়া এক ধরনের মারাত্মক সংক্রমণ যা ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। বিভিন্ন ধরনের জীবাণু, কিছু ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং  ছত্রাকের সংক্রমণে নিউমোনিয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে নিউমোনিয়া হয়। নানা রকম ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ঘুরে বেড়ায় এবং তা ফুসফুসে প্রবেশ করলে সংক্রমণ থেকে নিউমোনিয়ার উৎপত্তি হয়। এতে ফুসফুসের ভেতর এয়ার স্যাকগুলো সংক্রমণের কারণে প্রদাহগ্রস্থ হওয়ায় ফ্লুইড বা তরল জমে যায়। তখন অক্সিজেন ঠিকমত যেতে পারে না এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়।

লক্ষণ

১. উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর হতে পারে।

২. শরীরে কাঁপুনি, শীত শীত লাগা।

৩. নিউমোনিয়া বেশি বাড়লে বা সিভিয়ার হলে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার দ্রুত হয়।

৪. বুকে ব্যথা হয়, বিশেষত বুকের যে পাশের ফুসফুস আক্রান্ত হয় সেই পাশে ব্যথা হয়।

৫. কাশি হতে পারে, কাশির সঙ্গে হলুদ কফ আসতে পারে।

নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে কারা

১. বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, কোনো ওষুধের কারণে বা রোগের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাদের নিউমোনিয়া আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি।

২. বয়স্ক মানুষ বিশেষ করে যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি।

৩. ৫ বছরের নিচের শিশু।

৪. যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে, দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগে ভুগছেন।

৫. ধূমপান করেন যারা।

৬. যাদের আগে থেকেই অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিসসহ ফুসফুসের কোনো রোগ আছে তাদের নিউমোনিয়া আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাদের ক্ষেত্রে জীবাণু বেশি সংক্রমিত হয় এবং গুরুতর নিউমোনিয়া তৈরি করতে পারে।

৭. ভাইরাল ফ্লু বা ভাইরাস জ্বরের পরে সেকেন্ডারি সংক্রমণ ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে নিউমোনিয়া হতে পারে।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, জ্বর, কাশি, বুকে ব্যথা এবং কফ হলুদ হয়ে যাচ্ছে এমন লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত রক্ত পরীক্ষা ও বুকের এক্স-রে করাই যথেষ্ট নিউমোনিয়া রোগ নির্ণয়ের জন্য। নিউমোনিয়া দ্রুত নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা গেলে সিভিয়ার হওয়ার আশঙ্কাও কমে যাবে।

কোন ধরনের জীবাণুর সংক্রমণে নিউমোনিয়া হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে  নিউমোনিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হয়। ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় রোগীকে মুখে খাওয়ার ওষুধ হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, খুব গুরুতর অবস্থা হলে ইনজেকশনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। বুকে ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ওষুধই যথেষ্ট। ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়ায় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি রোগীকে সুষম ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার, সবজি ও ফল খেতে হবে, পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। ধূমপান পরিহার করতে হবে।

অনেক সময় নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। রোগীর যদি প্রচণ্ড জ্বর থাকে, খাবার খেতে না পারলে, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যাচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হলে, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে এবং এর ফলে ঠোঁট, জিহ্বা অথবা আঙুল নীল হয়ে গেলে বুঝতে হবে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

নিউমোনিয়ার পাশাপাশি যাদের গুরুতর অসুস্থতা আছে, বয়স্ক মানুষ, হার্টের রোগ বা হার্ট ফেইলিউর রোগী, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এই ধরনের উচ্চ ঝুঁকির রোগী যারা তাদের অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

প্রতিরোধ

নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ধূমপান পরিহার করতে হবে। এর পাশাপাশি নিউমোনিয়া প্রতিরোধে ভ্যাকসিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের, যারা আগে থেকে ফুসফুসজনিত ও দীর্ঘমেয়াদী কোনো রোগে ভুগছেন তাদের নিউমোনিয়া প্রতিরোধী নিউমোকোকাল ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত।

ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত হলে নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। সেজন্য উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিতে পারেন।

এ ছাড়া নিউমোনিয়া আক্রান্ত হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। কারণ তার মাধ্যমে অন্যরাও সংক্রমিত হতে পারেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt forms commission to probe Milestone jet crash

The probe commission will examine the cause of the tragic crash, assess damage and casualties, determine the responsibilities

53m ago