তিতা খাবার খেয়ে কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব?

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তিতা খাবার
ছবি: সংগৃহীত

ডায়াবেটিস রোগীরা চাইলেই যখন যেমন ইচ্ছে খাবার খেতে পারেন না। সুস্থ থাকা এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক খাদ্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য।

তিতা খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে কি না এমন প্রশ্ন অনেকেরই। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন এএমজেড হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট এন্ড নিউট্রিশনিস্ট ডা. মো. জয়নুল আবেদীন দীপু।

তিতা খাবার খেয়ে কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়?

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, তিতা খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এটিকে কোনোভাবেই প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। যেসব তিতা খাবারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার ও বিভিন্ন বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে, সেগুলো রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু এগুলো ইনসুলিন বা ওষুধের বিকল্প নয়, বরং কেবল সহযোগী খাদ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, তিতা জাতীয় কিছু খাবার, যেমন- করলা গ্লুকোজ মেটাবলিজমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে ফলাফল ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং এর কার্যকারিতা নির্ভর করে সামগ্রিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের ওপর।

তিতা খাবার কীভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে?

তিতা খাবারে কিছু কিছু উপাদান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিভিন্নভাবে কাজ করে। যেমন-করলা, নিম, মেথি ইত্যাদিতে থাকা কিছু সক্রিয় উপাদান ইনসুলিনের মতো কাজ করে বা ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ায়।

এছাড়া তিতা খাবারে থাকা ফাইবার অন্ত্রে গ্লুকোজের শোষণের হার কমিয়ে দেয়, ফলে খাবার পর রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি পায় না। আবার কিছু তিতা উপাদান লিভারে গ্লুকোনিওজেনেসিস (গ্লুকোজ তৈরি প্রক্রিয়া) কমিয়ে দেয়। কিছু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু তিতা উপাদান গাট-হরমোন (এখচ-১) বৃদ্ধি করে, যা ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়ায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তিতা খাবার

করলা: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য যেসব তিতা খাবার উপকারী বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে করলা। সবচেয়ে বেশি গবেষণা হয়েছে এই সবজির ওপর এবং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাসে কার্যকর।

মেথি বীজ: এছাড়া মেথি বীজে থাকা গ্যাল্যাক্টোমানান ফাইবার গ্লুকোজ শোষণ কমায়।

নিমপাতা: নিমপাতাও বেশ উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টিডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য ফ্ল্যাভনয়েড ও লিমোনয়েড সমৃদ্ধ।

চিরতা: তিতা খাবার হিসেবে অনেকে চিরতা খেতে পারেন। সীমিত গবেষণা আছে, তবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কার্যকর হতে পারে।

তেঁতুল পাতা বা ছোট তিতা শাক: তেঁতুল পাতা বা ছোট তিতা শাক কিছু আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, কিন্তু গবেষণায় প্রমাণিত নয়।

কীভাবে খাওয়া উচিত

করলা: রান্না করে অথবা ৫০ থেকে ১০০ মিলিলিটার রস সকালে খালি পেটে (সর্বোচ্চ সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন)। তবে কাঁচা না খাওয়াই ভালো, বিশেষ করে কিডনির সমস্যা থাকলে।

মেথি বীজ: রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি ও ভেজা বীজ খাওয়া যেতে পারে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ গ্রাম।

নিমপাতা: ৫ কিংবা ৭টি নিমপাতার রস অথবা শুকনা পাউডার আধা চা চামচ করে পানি দিয়ে খাওয়া যাবে। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। নিমপাতা অতিরিক্ত খেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে চিনি স্বাভাবিকের নিচে) হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা ও কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু উপাদান ঝুঁকিপূর্ণ এবং নিয়মিত ওষুধ খাওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া ঠিক নয়।

ডা. জয়নুল আবেদীন বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের এক্ষেত্রে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। বৈজ্ঞানিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, তিতা খাবার কখনোই ইনসুলিন বা ওষুধের বিকল্প নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল কৌশল হিসেবে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক পরিশ্রম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ওষুধ সেবন, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই।

সর্বোপরি সাপ্লিমেন্ট আকারে বিক্রি হওয়া অনেক তিতা উপাদানের কার্যকারিতা এখনও নির্ভরযোগ্যভাবে প্রমাণিত হয়নি। তাই স্থানীয় প্রাকৃতিক খাবারই বেশি উপকারী। তিতা খাবার যেমন-করলা বা মেথি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহযোগী হিসেবে কার্যকর, তবে একে চিকিৎসা মনে করলে হবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাদ্য তালিকায় যুক্ত করলে এটি সামগ্রিকভাবে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।

 

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

2h ago