ত্বকের ক্যানসারের লক্ষণ কী, কারণ ও প্রতিরোধের উপায়

ত্বক নিয়ে অসচেতনা থেকে হতে পারে ত্বকের ক্যানসার। ত্বকের ক্যানসার সম্পর্কে জানিয়েছেন নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খান।
ত্বকের ক্যানসার কী ও কেন হয়
ডা. আসমা তাসনীম খান বলেন, ত্বকের সেল বা কোষগুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্যই ত্বকের ক্যানসার হয়। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্যানসার হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। এ ছাড়া আরো কিছু কারণে ত্বকের ক্যানসার হতে পারে। যেমন-
১. সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্যানসার হওয়ার অন্যতম কারণ। যাদের দীর্ঘসময় সূর্যের আলোতে থাকতে হয়, কাজ করতে হয় তাদের এই ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সূর্যের আলোতে দীর্ঘ সময় থাকার কারণে ত্বকের কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অস্বাভাবিক ধরনের কোষ তৈরি করে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
২. সান ট্যানের কারণে ত্বকের ক্যানসার হতে পারে। অনেকে ত্বক ট্যান করার জন্য রোদের মধ্যে দীর্ঘ সময় শুয়ে থাকেন, এছাড়া ট্যানিং বিছানা পাওয়া যার মাধ্যমে ত্বক ট্যান করেন। সূর্য এবং ট্যানিং বিছানা থেকে নির্গত অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. সানস্ক্রিন ব্যবহার না করার কারণে ক্যানসার হতে পারে।
৪. পরিবারে যদি কারো ত্বকের ক্যানসারের ইতিহাস থাকে তাহলে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি।
৫. ইমিউনোলজিক্যাল বিভিন্ন কারণ এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের ত্বকের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
ধরন
ডা. আসমা তাসনীম খান বলেন, ত্বকের ক্যানসার বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন-
১. বেসাল সেল কার্সিনোমা: বেসাল সেল কার্সিনোমা ত্বকে কম হয়, ত্বকের ক্যানসারের সাধারণ ধরন এটি। শরীরের অন্যান্য অংশে কম ছড়ায়। এপিডার্মিস হচ্ছে ত্বকের একদম উপরের স্তর এবং এপিডার্মিসের সবচেয়ে নিচের স্তরে থাকে বেসাল সেল, বেসাল কোষে তৈরি হয় বেসাল সেল কার্সিনোমা।
২. স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা: স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমাও ত্বকের ক্যানসারের সাধারণ ধরন। স্কোয়ামাস সেল এপিডার্মিসের ওপরের স্তরে থাকে, স্কোয়ামাস কোষে হয় এই ক্যানসার।
৩. মেলানোমা: ত্বকের ক্যানসারের মধ্যে মেলানোমা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং সবচেয়ে বেশি বিপদজনক ক্যানসারও মেলানোমা। সারা শরীরে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মেলানোসাইট নামক কোষে তৈরি হয় মেলানোমা।
এছাড়া মার্কেল সেল কার্সিনোমাসহ আরো বেশ কিছু ধরন রয়েছে ত্বকের ক্যানসারের।
লক্ষণ
ত্বকের ক্যানসারে রোগীর বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অনেকের ত্বকে ছোট ছোট তিল হওয়ার প্রবণতা থাকে। আগে থেকেই ত্বকে একটা দাগ কিংবা মোল ছিল, এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় হঠাৎ করে ত্বকের ছোট প্যাচ বা দাগ আকারে বড় হচ্ছে, রঙের পরির্বতন হচ্ছে। অথবা হঠাৎ মোল আকারে বড় হচ্ছে, রক্তপাত, চুলকানি হচ্ছে, অনেক সময় ক্ষত বা ঘা এর মত তৈরি হচ্ছে। ছোট ছোট তিল, মোল আগে থেকে ছিল কিন্তু নতুন করে সংখ্যায় অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে, এমনটাও দেখা যায়।
এছাড়া হঠাৎ করে ত্বকে ক্ষত বা ঘা হওয়া একটি লক্ষণ। চিকিৎসা নেওয়ার পরেও ঘা সহজে সারছে না বরং আকারে বড় হচ্ছে, রক্তপাত হচ্ছে এবং আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ছে এমন লক্ষণ প্রকাশ পায়।
চিকিৎসা
ডা. আসমা তাসনীম খান বলেন, রোগীর ত্বক ভালোভাবে পরীক্ষা করার পর অস্বাভাবিক কোনো কিছু বা সন্দেহজনক মনে হলে বায়োপসি করা হয়। বায়োপসিতে অস্বাভাবিক কিছু শনাক্ত হলে সিটি স্ক্যান, এমআরআই এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য পরীক্ষা করা হয় ক্যানসারের ধরন ও বিস্তার জানতে।
ত্বকের ক্যানসারের চিকিৎসা নির্ভর করে মূলত ক্যানসারের ধরন, স্টেজ, আকার ও রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। অস্ত্রোপচার হচ্ছে ত্বকের ক্যানসারের প্রধান চিকিৎসা, ক্যানসারযুক্ত টিস্যু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করে ফেলা হয়। কিছু ক্ষেত্রে মোহস সার্জারি নামক একটি বিশেষ অস্ত্রোপচার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ত্বকের ক্যানসার অপসারণে।
ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা করার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি দেওয়া হয় রোগীকে। এছাড়া ইমিউনোথেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপির মাধ্যমেও ত্বকের ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়।
প্রতিরোধ
১. ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা পেতে লম্বা হাতাযুক্ত ও ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। টুপি ও সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
২. দীর্ঘ সময় সূর্যের আলোতে থাকা যাবে না, যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ছায়াযুক্ত স্থানের নিচে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
৩. বাইরে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
৪. সান ট্যান ও ট্যানিং বিছানা ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫. হঠাৎ করে ত্বকে কোনো দাগ, মোল আকারে বড় হয়ে যাচ্ছে, রঙের পরিবর্তন হচ্ছে, তিল কিংবা মোল অনেক বেশি পরিমাণে হচ্ছে অথবা ত্বকে অস্বাভাবিক কোনো কিছু দেখলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
Comments