হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার সার্কাস

সাতচল্লিশ ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু দেশীয় সার্কাস দল গড়ে ওঠে। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ক্রমে আকর্ষণ হারিয়েছে সার্কাসের দলগুলো।

১৮৮০ সালের 'উইলসন্স গ্রেট ওয়ার্ল্ড সার্কাস' এর বিজ্ঞাপনে কলকাতায় তাদের ক্রীড়াশৈলীর দেখা মিলে। ১৯১১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা। সে প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের জন্য কলকাতার বুকেই একের পর এক ইউরোপীয় সার্কাস শো অনুষ্ঠিত হতো। অমিতাভ চ্যাটার্জির লেখা 'এক্সিবিটিং ম্যাসকুলিন আইডেনটিটি থ্রু সার্কাস ইন কলোনিয়াল বেঙ্গল' নিবন্ধে সার্কাস আমাদের সামাজিক ইতিহাসে কতটা স্থান করে নিয়েছে তার অনবদ্য বর্ণনা পাওয়া যায়।

বাংলায় আসা সার্কাস দলগুলো সেকালের অনেক ব্যায়ামবীরের প্রেরণার উৎস হয়ে উঠে। হার্মস্টোন সার্কাস দলের খেলোয়াড়দের অপূর্ব শরীর সঞ্চালন কৌশল ও তাদের সুঠাম স্বাস্থ্যপুষ্ট শরীরের অনবদ্য লাবণ্য বালক তারাচরণের মনে একটি নুতন জগতের ছবি এঁকে দিয়েছিল। যিনি পরবর্তীতে ব্যায়ামবিদ তারাচরণ মুখোপাধ্যায় হিসেবে খ্যাত হন। বাংলায় সার্কাস কতটা গৌরবময় ছিল, ফিরে দেখা যাক।

বোসের সার্কাস ও স্বদেশী আন্দোলন

স্বদেশী যুগের শুরুর কথা। হিন্দুমেলা শরীর চর্চায় নতুন প্রেরণা দেয়। পাড়ায় পাড়ায় তখন শরীরচর্চার আখড়া গড়ে উঠে। নবগোপাল মিত্রের উদ্যোগে জন্ম নেয় প্রথম দেশজ সার্কাসের দল 'ন্যাশনাল সার্কাস'। কিন্তু বেশীদিন টিকেনি সে দল। আনুমানিক ১৮৮৩ সালে আবেল নামে উইলসন্স সার্কাসের একজন প্রাক্তন খেলোয়াড় এবং আরও দু-চারজন ইউরোপীয়কে সঙ্গে নিয়ে নবগোপাল মিত্রের মেয়ে জামাই রাজেন্দ্রলাল সিংহ 'গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস' দল গঠন করেন। পরবর্তীতে ১৮৮৭ সালে মনোমোহন বসুর ছেলে প্রিয়নাথ বসু জিমন্যাস্টিকসে পারদর্শী কিছু সঙ্গী নিয়ে 'গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস' গড়ে তোলেন। শরীর সঞ্চালনের কাজে জুড়ে দেন নতুন এক শৈল্পিক মাত্রা। মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, বীরভূম অঞ্চলে বেশ কিছু জমিদারের আমন্ত্রণে খেলা দেখান প্রিয়নাথ। সেখানকার রোজগারের টাকা দিয়ে কেনেন নতুন প্রাণি, শোয়ের জন্য তাবু।

১৮৯৬ সালের নভেম্বর মাসে রেওয়ার মহারাজা 'গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস' এর খেলা দেখে খুশী হয়ে দুটি বাঘ উপহার দেন। প্রিয়নাথ দলে রিং মাস্টারের দায়িত্ব পালন করতেন। তখনকার দিনে সার্কাস বা শরীরচর্চার প্রশিক্ষকদের 'প্রোফেসর' বলে ডাকা হতো। প্রিয়নাথ হয়ে ওঠেন 'প্রোফেসর বোস'। ভারতের বাইরে শ্রীলংকা, পেনাং, সিঙ্গাপুর, জাভাসহ নানা জায়গায় 'গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস' খেলা দেখায়। প্রিয়নাথ বসুর লেখা 'প্রোফেসর বোসের অপূর্ব্ব ভ্রমণ বৃত্তান্ত' গ্রন্থে সেসব বিচিত্র ভ্রমণ অভিজ্ঞতা লিপিবন্ধ রয়েছে। তার সুযোগ্য পুত্র শ্রীঅবনীন্দ্রকৃষ্ণ বসুর লেখা 'বাঙ্গালীর সার্কাস' বইটি থেকেও প্রিয়নাথ বসুর সার্কাস সম্পর্কিত নানা তথ্য জানা যায়। প্রিয়নাথ বসুর সহোদর মতিলাল বসু। ইনিও গ্রেট বেঙ্গল সার্কাসের একজন প্রতিষ্ঠাতা।

'গ্রেট ইণ্ডিয়ান সার্কাস' আর 'গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস' প্রায় এক‌ই সময়ে তাদের যাত্রা শুরু করলেও দুটির মধ্যে একটি গুণগত পার্থক্য ছিল। গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাসের অংশীদার বাঙালি হলে‌ও, তার পরিচালনার ভার ছিল বিদেশী আবেলের ওপর। খেলোয়াড়দের মধ্যেও অনেকে ছিলেন বিদেশী। অন্যদিকে প্রিয়নাথ বসুর গ্রেট বেঙ্গল সার্কাসের পরিকল্পনা, পরিচালনা সবকিছুর মূলেই ছিলেন একজন বাঙালি। খেলোয়াড়রাও ছিলেন সব ভারতীয়। একারণে জাতীয়তাবাদী আদর্শে স্নাত হয়ে দেশীয়দের গর্বের বস্তু হয়ে ওঠে 'গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস'। দেশীয় সংবাদপত্রের পাশাপাশি বিদেশীদের নিকট থেকেও গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস প্রভূত প্রশংসা অর্জন করে।

হার্মস্টোন গ্র্যান্ড সার্কাস, ১৭ জানুয়ারি ১৯০২, কলকাতা। উৎস: পাওয়ারহাইজ আলটিমু মিউজিয়াম কালেকশন, অস্ট্রেলিয়া

সুশীলা সুন্দরীর কথা

তখন সার্কাসে নারীদের খেলা দেখানোর চল ছিল না। 'গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস' দলে নিযুক্ত হন 'সুশীলাসুন্দরী' নামীয় এক নারী জিমন্যাস্টিকস। এটি নিয়ে সেসময় বিভিন্ন পত্রিকায় আলোচনা, সমালোচনা হয়। খেলা দেখাতে দেখাতে সুশীলা খাঁচায় ঢুকে বাঘের গালে চুমু খেতেন। একবার একটি নতুন বাঘ নিয়ে খেলা দেখানোর সময় বাঘ তাকে আক্রমণ করে। এতে তার  শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়। প্রায় একবছর তিনি অসুস্থ ছিলেন। সুশীলার সার্কাস জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে এভাবেই।

পার্ক সার্কাস ও হাওড়া ময়দান

সেকালে প্রতি শীতেই কলকাতার গড়ের মাঠে অর্থাৎ ময়দানে সার্কাসের আয়োজন হতো। সার্কাস প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে নামকরণ হয় পার্কসার্কাস ময়দান। হাওড়া ময়দানেও সার্কাসের প্রদর্শনী হতো। দুটি কখনোবা তিনটি দলের সার্কাস হতো। দেশীয় সার্কাসের পাশাপাশি একটি-দুটি বিলেতি সার্কাস প্রতি বছরই আসত। বিলেতিগুলি আসত সাধারণতঃ ডিসেম্বরে বড়দিনের আগে। আবার জানুয়ারির মাঝামাঝি চলে যেত অন্য কোন শহরে। বিশ শতকের পঞ্চাশ দশক পর্যন্ত পত্রিকায় সার্কাসের বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণে হিপ্পোড্রোম, রয়েল, র‍্যামন, কার্লেকার, কমলা, গ্র্যান্ড ফেইরি, লায়ন, গ্র্যান্ড গ্লোস্টার, জুবিলী, এশিয়ান, ন্যাশানাল সার্কাসসহ প্রভূত সার্কাস দলের নাম পাওয়া যায়। প্রোফেসর কৃষ্ণা, প্রোফেসর রামমূর্তি, কৃষ্ণলাল বসাক ও মল্লবীর ভীম ভবানীর মতো অনেকেই ছিলেন সেকালের সার্কাস জগতের মধ্যমণি।

পূর্ববঙ্গে সার্কাস প্রদর্শনীর কথকতা

সার্কাস শিল্পে পূর্ববঙ্গের যার নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয়েছে তিনি হলেন ঢাকার কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক ছাত্র শ্যামাকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। 'গ্র্যান্ড শো অব ওয়াইল্ড এনিমেলস' নামে তার একটি সার্কাস দল ছিল। ১৮৮৮ সালে তিনি এই দলটি গঠন করেন। কুচবিহার, ঢাকা, কলকাতা, রংপুর, আগরতলা প্রভৃতি স্থানে খেলা দেখাতেন শ্যামাকান্ত। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বন্য বাঘ, সিংহ বশ করতে পারতেন। তিনি বাঘের মুখের মধ্যে মাথা এবং দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রবেশ করিয়ে খেলা দেখানোর কারণে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন। শ্যামাকান্তের গুণে মুগ্ধ হয়ে ভাওয়ালের জয়দেবপুরের রাজা সুন্দরবনের একটি রয়েল বেঙ্গল শ্যামাকান্তকে উপহার দিয়েছিলেন। সার্কাসের মাধ্যমে শ্যামাকান্ত শুধু অর্থোপার্জনই করেননি; দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে ব্যায়ামচর্চা, আত্মনির্ভরশীলতা, দেশপ্রেম জাগ্রত করা এবং দেশকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করতেও তিনি নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন।

বেশ কয়েকজন সাহিত্যিকের বয়ানে পূর্ববঙ্গে প্রদর্শিত বিভিন্ন সার্কাস দলের বর্ণনা পাওয়া যায়। সৈয়দ মুর্তাজা আলীর আত্নজীবনী 'আমাদের কালের কথা' বইতে সার্কাস প্রসঙ্গে ১৯১৮ সালের একটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। তিনি লিখেছেন, "শীতের সময় আসতো ভালো ভালো সার্কাস। কাছারির পেছনে জল্লার মাঠে পড়ত বড় বড় তাঁবু। একবার শীতকালে মাদ্রাজ থেকে এল এক বিখ্যাত সার্কাস পার্টি। বড় বড় প্ল্যাকার্ডে লেখা হলো 'রামমূর্তি সার্কাস'। বিজ্ঞাপন দিল 'নয়ন সার্থক করো জল্লার মাঠে গিয়া'। এল বাঁদর, কুকুর ও ঘোড়া। খাঁচার মধ্যে এল বাঘ। জরি ও সার্টিজের ঝলমলে পোশাক পরে, বুকে সারি সারি মেডেল ঝুলিয়ে খেলা দেখালেন প্রফেসার রামমূর্তি।' সিনেমা তখনও চালু হয়নি। বাৎসরিক বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল তখন সার্কাস।

ঢাকায় প্রদর্শিত সার্কাসের সবচেয়ে প্রাণবন্ত বর্ণনা পাওয়া যায় মীজানুর রহমানের 'ঢাকা পুরাণ' গ্রন্থ হতে। লেখকের অসাধারণ ভাষাশৈলী পাঠকের মানসপটকে যে সার্কাসের ভাবনায় আলোড়িত করবে সেটা হলফ করে বলা যায়। তিনি লিখেছেন, 'হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো পঞ্চাশের যুগে ঢাকার বুকে প্রমোদ ভেলায় চেপে এসেছিল মাদ্রাজ তথা ভারতবর্ষ থেকে বিখ্যাত কমলা সার্কাস তাদের বিপুল বহর নিয়ে।.....পল্টনজুড়ে কমলা সার্কাসের বহর আঁট হয়ে ঘাঁটি গাড়ল। যেন বা এক সার্কাস নগর, ছোট ছোট তাঁবুর ঘর, তাতে সার্কাসের খেলোয়াড় ও কর্মী বাহিনীর সংসার। সারিবদ্ধ বড় বড় খাঁচা, পশুরাজ সিংহ, বেড়াল মামা, বাঘ মশাই, মক্ষী-প্রেমী ভালুক, রামসখা বানর-বিরস নয়নে অরণ্য ধ্যানে মগ্ন।

 .... বিশাল তাঁবু পড়েছে মাঠের মাঝে। এরা কেউ সাজবে ক্লাউন। নিজেদের জীবনে হাসি না থাকলেও হাসাবে আগত দর্শকদের-কত রঙে কত ঢঙে কত রঙিন আঙিয়া আর টোপর মাথায় দিয়ে। কেউ কেউ ট্র্যাপিজের খেলায় মাতবে। ৫০০ ফুট উঁচুতে শূন্যে পাক খাবে। ...আর এটাই তো সার্কাসের আসল খেলা। তারপর রয়েছে সরু তারের ওপর সাইকেল চালনা, নাচানাচি, রঙিন হাওদায় চড়ে হাতি নিয়ে বল খেলা, ঘোড়া চড়ে এক ঘোড়া থেকে আরেক ঘোড়ায় লাফানো, সিংহ ও বাঘেদের সব তেজ ফুটুস করে তাদের নিয়ে নানা খেলা-এসব দেখেছি তো! বেশির ভাগ খেলাতেই মেয়েদের প্রাধান্য। ...পল্টনের ময়দানে পড়ল মস্ত তাঁবু-ওই সার্কাসের মতোই গোলাকার। তাঁবুর ভেতরে ওই সার্কাসের মতোই দশর্কদের আসন। ঠিক মাঝখানে গোলাকার বড়সড় সাদা পর্দা।'

একটি বিজ্ঞাপন। ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২, দৈনিক আজাদ পত্রিকা

সাতচল্লিশ ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু দেশীয় সার্কাস দল গড়ে ওঠে। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ক্রমে আকর্ষণ হারিয়েছে সার্কাসের দলগুলো। তবে শুধু পৃষ্ঠপোষকতাই নয়, সার্কাসের হারিয়ে যাওয়ার পেছনে আরো কিছু কারণ রয়েছে। ইত্যবসরে বদলেছে সভ্যতার বিবেক, পাল্টেছে মূল্যবোধ। পশুর সঙ্গে মানুষের লড়াই দেখার উল্লাসের সেই বর্বরতার দিন আর নেই। জীব-বৈচিত্রের অবলুপ্তি সার্কাসে পশুপাখীর ব্যবহারকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। জড়োসড়ো হয়ে বসে মধ্যরাত পর্যন্ত সার্কাস দেখার সেই সময় আর নেই, নেই সেই আবহাওয়াও৷ কনকনে শীতের রাতে অন্ধকার রাস্তা দিয়ে মা-বাবার হাত ধরে সার্কাস দেখতে যাওয়া এখন শুধুই স্মৃতি। সার্কাসের স্থান দখল করে নিয়েছে মুঠোফোনের স্ক্রীন, নেটফ্লিক্স ও হইচই এর মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং ফ্যান্টাসি কিংডম ও নন্দনের মতো থিম পার্ক।

সার্কাসকে ঘিরে ছিল যে সমস্ত কলাকুশলীর জীবন, সার্কাস রিং ও সাহিত্যের পাতা থেকে তাদের সেই ছবি ক্রমশ   ফুটে উঠেছে সিনেমার পর্দায়। সার্কাসের সেই সব কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে 'দ্য লক্ষণ দাস সার্কাস', 'কমলা সার্কাস', 'বিউটি সার্কাস'সহ একাধিক চলচ্চিত্র। চন্দ্রলেখা মাদ্রাজের ছবি, হিন্দি ভাষায় চিত্রায়িত। ওই চলচ্চিত্রে কমলা সার্কাসের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে দোদুল্যমান বারের খেলা প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। এভাবেই সার্কাস রয়ে যায় আমাদের মানসপটে।

সহায়ক 

১. ফ্রম পোস্টকলোনিয়াল টু নিওলিবারেল, আইডেন্টিফাইং দ্যা আদার বডি ইন ইন্ডিয়ান সার্কাস, আসথা গান্ধী
২. দ্যা ট্রপিক ট্রাপেজঃ সার্কাস ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া, অনির্বাণ ঘোষ
৩. ন্যাশন এট প্লে: অ্যা হিস্টরি অফ স্পোর্ট ইন ইন্ডিয়া, রনোজয় সেন

 

Comments

The Daily Star  | English

Food inflation above 10% for half a year, why?

Experts say raising policy rate would have little impact on lowering food prices

3h ago