বইমেলা বিশেষ-২

বাংলার প্রতি আমাদের ভালোবাসা খুব সামান্য : আহমাদ মাযহার

কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনা মানেও কয়েক আগের তুলনায় ইতিবাচক! তবে গড় অবস্থার এখনো উল্লখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।

চলছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৪। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যে প্রকাশ হয়েছে প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহারের প্রবন্ধের বই 'স্মৃতিতে ও সান্নিধ্যে, প্রকাশ করেছে হাওলাদার প্রকাশনী। নতুন বই ও নিজের ভাবনা  -বইমেলা নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

সম্পাদনা আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি। বাংলাদেশে নির্মোহ সম্পাদনা ও আলোচনা কতটা এগিয়েছে বলে মনে করেন।

আহমাদ মাযহার: ৭-৮ বছর আগের তুলনায় বই-সম্পাদনার গুরুত্ব অনেকটা বেড়েছে। আলোচনাও হয় কিছুটা। কয়েকটি পেশাদারী প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠতে শুরু করেছে! কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনা মানেও কয়েক আগের তুলনায় ইতিবাচক! তবে গড় অবস্থার এখনো উল্লখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।

বাইরে থাকেন আপনি। বইমেলার সময় দেশে আসেন। কিসের টানে?

আহমাদ মাযহার: আমদের প্রজন্মে অনেকের মতো আমিও ঐতিহ্যবাহী গ্রাম সংস্কৃতির আবহে বড় হওয়া মানুষ। অমর একুশে বইমেলার মননে, স্বভাবও বাংলাদেশের গ্রাম্য হাট ও মেলাস্বভাবী আয়োজন। এর প্রতি আমি প্রাণের টান অনুভব করি। তাই অন্য দিকের ক্ষতি করেও না এসে পারি না! তাই প্রতি বছর ছুটে আসি!

প্রতি বছরে বাংলা একাডেমির পুরস্কার নিয়ে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা হয়। আপনার জানা আছে নিশ্চয়।

আহমাদ মাযহার: দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেমন অদূরদর্শী বিবেচনা, কায়েমি স্বার্থ-অনুকূলতার প্রাধান্য নিয়েই অগ্রগতি হচ্ছে বাংলা একাডেমির পুরস্কারের সার্বিক অবস্থাও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশের সার্বিক রাষ্ট্রসংস্কৃতি সাধারণ মানুষের অনুকূল সিদ্ধান্ত গ্রহণে যেমন অপারঙ্গম বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও তেমনই! এই পুরস্কারে 'রুচির দুর্ভিক্ষ' ও 'ন্যায়সঙ্গত বিবেচনা'র অভাব জনিত কলুষ পরায়ণতা তার মুখব্যাদান যেন ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছে।

আপনার দীর্ঘ সময় কেটেছে দেশে। আগামীতে আপনাকে প্রবাসী লেখক হিসেবে পুরস্কার দিলে কেমন লাগবে? 

আহমাদ মাযহার: ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রসীমানার বাইরে বাস করলেও আমি সৃজন ও মনন কর্মে মূলত বাংলাদেশ কেন্দ্রী। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যেই আমার অনুশীলন কর্ম! আমি কোনো রকম পুরস্কারের উমেদার নই। প্রাতিষ্ঠানিকতার সঙ্গে আনুকূল্য রেখে নিজেকে সৃষ্টিপ্রয়াসে নিজেকে সক্রিয় রাখিনি। বাংলাসাহিত্যের কোনো লেখক প্রবাসে জীবন যাপন করলেও তিনি বাংলা সাহিত্যেরই লেখক। অন্য কোনো করুণামূলক বিবেচনাকে আমি অগ্রহণযোগ্য মনে করি।

এবারের মেলায় প্রকাশিত আপনার 'স্মৃতিতে ও সান্নিধ্যে' বইটি আসছে।

আহমাদ মাযহার: আমার দুটি বই প্রকাশিত হবার কথা। একটির নাম 'স্মৃতিতে ও সান্নিধ্যে'। এটি স্মৃতি ও কৃতিপরিচয়মূলক প্রবন্ধ-সংকলন। বাংলাদেশের প্রায় এক শতাব্দী কালের সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিতে সৃজন ও মননশীল ২৮ জন প্রয়াত ব্যক্তি সম্পর্কিত রচনা এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অন্য বইটিকে জার্নালধর্মী রচনা-সংকলন বলা যায়। বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের ভৌগোলিকতা ও এর বাইরের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ের চকিত উপলব্ধির প্রকাশ এই বই।

বাংলা অনেক ভালোবাসি আমরা। কিন্তু বাংলা ভাষা ব্যবহারে ভয়াবহ বৈষম্য। আপনার মূল্যায়ন?

আহমাদ মাযহার: সাতচল্লিশোত্তর, মুক্তিযুদ্ধের আগের বছরগুলোতে, সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে যে মূলত একভাব কেন্দ্রী ইতিবাচক জাগরণ ঘটেছিল বাংলাদেশের সার্বিক সংস্কৃতি এখন তার থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। লা ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা খুব সামান্য। জীবনের অন্যবিধ প্রয়োজনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বাংলাপ্রীতি এখন ভীষণ কপটতাদূষিত। সেই বেদনা আমিও বহন করে চলেছি। লড়াই এখনো অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা দেখি না!

Comments