‘তারুণ্য-তাড়নার’ মন্ত্রে সমগীতের বসন্তবরণ

তিন দিনের উৎসবের পুরো আয়োজনে সমগীতের সঙ্গী ছিলেন ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও ভারতের প্রতিবাদী কবি এবং শিল্পীরা।
যৌবনের রাজদণ্ড যে ঋতুর হাতে, সেই বসন্তকে তারুণ্য ও তাড়নার মন্ত্রে টানা তিন দিনের উৎসবে নানা আয়োজনের ভেতর দিয়ে বরণ করে নিয়েছে সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ।
পয়লা ফাল্গুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বটতলায় বসন্ত উৎসব। ছবি: সংগৃহীত

যৌবনের রাজদণ্ড যে ঋতুর হাতে, সেই বসন্তকে তারুণ্য, তাড়না ও দ্রোহের মন্ত্রে টানা তিন দিনের উৎসবে নানা আয়োজনের ভেতর দিয়ে বরণ করে নিয়েছে সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ।

পয়লা ফাল্গুন উৎসবের প্রথম দিন অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বটতলায় অনুষ্ঠিত হয় সমগীত বসন্ত উৎসব।

এদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলা এই আয়োজনের শুরুতে গান পরিবেশন করে শিশুদের জন্য আমরা এবং আমাদের পাঠশালা বিদ্যালয়ের শিশুরা। এই আয়োজনে অংশ নেন ফিলিপাইনের প্রতিবাদী কবি-শিল্পী জেস সান্তিয়াগো ও ওজোসেফ অ্যালান এফ. পুরুগানান, থাইল্যান্ডের শিল্পী ফাথানা ফ্রাইওয়ান চি এবং ড্যানপংপি নরুমন জেনি।

ঢাবি কলা ভবনের সামনে বটতলায় গাইছেন থাইল্যান্ডের শিল্পী ফাথানা ফ্রাইওয়ান চি এবং ড্যানপংপি নরুমন জেনি। ছবি: সংগৃহীত

গান করেন কফিল আহমেদ, লীলা, কৃষ্ণকলি, সায়ান, সমগীত, মাদল, সমগীতের কিশোর ব্যান্ড গঙ্গাফড়িং এবং ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শাখার সমগীতের সদস্যরা। নৃত্য পরিবেশন করেন সঞ্জীবনী সুধা ও মুক্তা ঠাকুর।

উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমগীত সন্মাননা-২০২৪ প্রদান করা হয় প্রতিবাদী কবি জেস সান্তিয়াগোকে।

এই অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, শিল্পী-সংগঠক রফিউর রাব্বি, নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর, কবি আরিফ বুলবুল ও রাজনৈতিক কর্মী বাকী বিল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণের কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান দিনা তাজরিন।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে জেস সান্তিয়াগোর হাতে শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেওয়া হয়। সেখানে জেস সান্তিয়াগোর সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন সমগীত কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীথি ঘোষ। মানপত্র পাঠ করেন হুমায়রা মুর্ছনা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অমল আকাশ।

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমগীত সন্মাননা প্রদান ও কনসার্টের পর আয়োজক এবং অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

সন্মাননা প্রদানের পর অনুষ্ঠিত হয় কনসার্ট 'তারুণ্য-তাড়নার গান'। কনসার্টে ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডের শিল্পীদের পাশাপাশি ভারতের শিল্পী ভেদি সিনহা ও বালাকৃষ্ণান সুমন্থ্ও অংশ নেন। এরপর মঞ্চে উঠেন শিল্পী আহমেদ বাবলু এবং ব্যান্ডদল নিষিদ্ধ ও লীলা। শুরুতে আবৃত্তি পরিবেশন করে চন্দ্রবিন্দু, বেইলী স্কুল ও গঙ্গাফড়িং-এর ছোট্ট বন্ধুরা। গান পরিবেশন করে সমগীতের কিশোর ব্যান্ড গঙ্গাফড়িং।

উৎসবের তৃতীয় দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে শিশুচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয় ঢাকার পান্থপথের দৃকপাঠ ভবনে।

ঢাকার পান্থপথের দৃকপাঠ ভবনে শিশুচিত্র প্রদর্শনী। ছবি: সংগৃহীত

প্রদর্শনী উদ্বোধন ঘোষণা করেন সর্বজনকথা'র সম্পাদক আনু মুহাম্মদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেস সান্তিয়াগো, রফিউর রাব্বি, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ও শিল্পী সালেহ মাহমুদ। সারা দেশের পাঁচটি জায়গায় সমগীতের পরিচালনায় শিশুচিত্র কর্মশালা থেকে পাওয়া ছবি নিয়ে সাজানো হয় এই প্রদর্শনীটি, যা চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

প্রদর্শনীর উদ্বোধন পর্বের পর একই গ্যালারিতে 'আওয়ার মিউজিক, আওয়ার স্ট্রাগল' শীর্ষক গান-আড্ডায় অংশ নেন দেশি-বিদেশি শিল্পীরা। অতিথি শিল্পীদের পাশাপাশি গান করেন শিল্পী কফিল আহমেদ, অরূপ রাহী, সায়ান ও সমগীতের বীথি ঘোষ।

দৃকপাঠ ভবনে ‘আওয়ার মিউজিক, আওয়ার স্ট্রাগল’ শীর্ষক গান-আড্ডা। ছবি: সংগৃহীত

গান-আড্ডার শুরুতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের প্রতিবাদী শিল্পী ও গানের দলের ফোরাম 'এশিয়ান মিউজিক ফর পিপল, পিস এন্ড প্রগ্রেস'-এর পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন জেস সান্তিয়াগো ও জোসেফ অ্যালান এফ. পুরুগানান। কথা বলেন ফাথানা ফ্রাইওয়ান চি ও ভেদি সিনহা।

দৃকের সার্বিক সহযোগিতায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বীথি ঘোষ।

Comments