ছাত্রসংসদ আইয়ুব খানের সময়েও টিকে ছিল

স্মরণ করলে দেখা যাবে যে, গত একশ’ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিস্তার ও উন্নয়ন ঘটেছে তা অসাধারণ। শিক্ষাক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান বহুমুখী ও সুবিস্তৃত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ঘটে দরিদ্র, অবহেলিত ও প্রান্তিক এক জনপদের মানুষকে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সাহায্য করার দায়িত্ব নিয়ে।

শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরিটাস অধ্যাপক। এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। বহু আগে শ্রেণিকক্ষ থেকে অবসর নিলেও বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃত উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র করে তোলার জন্য তার ভাবনা ও কর্মে কখনো ছেদ পড়েনি। একাধিকবার উপাচার্য হওয়ার প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। মনোযোগী হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি প্রকৃত জ্ঞান উৎপাদন ও চর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য।

সমাজ-রূপান্তর অধ্যায়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে গত ৭ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে অধ্যাপক আহমদ কবির প্রথম স্মারক বক্তৃতা দেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বক্তৃতার বিষয় ছিল 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ: বিচারের দুই নিরিখে'।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর এই স্মারক বক্তৃতার কথাগুলো ৭ পর্বে প্রকাশিত হচ্ছে দ্য ডেইলি স্টার বাংলায়। আজ প্রকাশিত হলো পঞ্চম পর্ব।

স্মরণ করলে দেখা যাবে যে, গত একশ' বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিস্তার ও উন্নয়ন ঘটেছে তা অসাধারণ। শিক্ষাক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান বহুমুখী ও সুবিস্তৃত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ঘটে দরিদ্র, অবহেলিত ও প্রান্তিক এক জনপদের মানুষকে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সাহায্য করার দায়িত্ব নিয়ে। সে দায়িত্ব পালনে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো প্রকার ত্রুটি করেনি। অসংখ্য মানুষকে সে সুশিক্ষিত করেছে; ওই শিক্ষিতজনেরা নিজেদেরকে আরও বিকশিত করেছেন, এবং শিক্ষা অন্যদের ভেতরও বিস্তৃত করে দিয়েছেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল পূর্ববঙ্গে প্রথম ও একমাত্র, ক্রমে আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া গেছে; কিন্তু সেসব বিশ্ববিদ্যালয়েও মাতৃসম এই বিশ্ববিদ্যালয়কেই শিক্ষক সরবরাহ করতে হয়েছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, স্কুল কলেজের অনেক শিক্ষকই এখানে শিক্ষিত।

শুরুটা ছিল অনেকটা দায়সারা গোছেরই। তখন অনুষদ ছিল মোট তিনটি- কলা, বিজ্ঞান ও আইন। আইন অনুষদে বিভাগ মাত্র একটি; বিজ্ঞান অনুষদে একটু বেশী, দু'টি; বাকি নয়টি বিভাগ কলা অনুষদের। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ বলে কিছু ছিল না। অর্থনীতি ও রাজনীতি পড়ানো হতো একই বিভাগে। বাণিজ্যশিক্ষার জন্য কোনো স্বতন্ত্র বিভাগ খোলা হয় নি; তাকে জায়গা করে নিতে হয়েছে অর্থনীতিতে। সব মিলিয়ে শিক্ষক ছিলেন মোট ৬০ জন, শিক্ষার্থী ৮৭৭।

তারপরেই কিন্তু দ্রুত বিকাশ ঘটেছে। বাণিজ্য অনুষদ গঠিত হয়েছে, সেখানে প্রথমে বিভাগ ছিল দু'টি। এখন আছে নয়টি। অনুষদের নামও গেছে বদলে, নতুন নাম বিজনেস স্টাডিজ। ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিসট্রেশনের শুরুটা ঘটেছিল দ্বিধার সাথে, এখন সেটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি প্রতিষ্ঠান।

শুরুতে বিজ্ঞান অনুষদে বিভাগ ছিল মাত্র দু'টি, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন। রসায়ন বিভাগ থেকে প্রথমে এলো মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগ; পরে ফার্মেসী; ফার্মেসী এখন সম্পূর্ণ একটি অনুষদ, বিভাগ সেখানে চারটি। মৃত্তিকাবিজ্ঞান যুক্ত হয়েছে জীববিজ্ঞান অনুষদের সাথে, সেখানে বিভাগ-সংখ্যা এখন দশটি। ভূগোল শিক্ষার নিজস্ব ব্যবস্থা শুরুতে ছিল না, পরে তার সাথে আরও পাঁচটি বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদ। পদার্থবিজ্ঞান একক ছিল একসময়ে; সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান; আরও পরে এ্যাপলায়েড ফিজিক্স। পরবর্তীতে গঠিত হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনলজি অনুষদ, তাতে বিভাগ রয়েছে পাঁচটি।

দর্শন বিভাগ অবশ্য যাত্রাশুরুতেই ছিল, তবে মনোবিজ্ঞান ছিল না। পরে মনোবিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয়েছে; ক্রমান্বয়ে এসেছে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি এবং এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সিলিং বিভাগ। ভাষাবিজ্ঞান এখন একটি স্বতন্ত্র বিভাগ। আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট গঠন করা হয়েছিল সময়ের প্রয়োজন মেটাতে; এখন সেটি একটি অত্যন্ত প্রাণবন্ত প্রতিষ্ঠান। চারুকলা ইনস্টিটিউট ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে, এক সময়ে যুক্ত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে; চারুকলা অনুষদে এখন বিভাগ রয়েছে আটটি। নাট্যকলা বিভাগ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ছিল অনেক দিন ধরেই, এক সময়ে সেটা সম্ভব হয়েছে। এই বিভাগের শিক্ষাকার্যক্রম এখন প্রসারিত হয়েছে তিনটি বিভাগে- থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ, সঙ্গীত, এবং নৃত্যকলা। একদা-অনুপস্থিত সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে বর্তমানে বিভাগ রয়েছে ষোলটি।

যাত্রার শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্ব দিয়েছে গ্রন্থাগারকে; এবং সেটিকে সে ক্রমাগত সমৃদ্ধ করেছে। গ্রন্থাগারের একটি অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। বাংলা ছাড়াও ফার্সী, আরবী ও উর্দুভাষায় রচিত বিপুল পরিমাণ পাণ্ডুলিপি আছে গ্রন্থাগারের সংগ্রহে। পাণ্ডুলিপিগুলোর তালিকা প্রণয়ন ও মাইক্রোফিল্মের সাহায্যে তাদের সংরক্ষণের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটিকে এখন ইন্টারনেটের প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিজ্ঞান গ্রন্থাগারটিও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে বহুসংখ্যক ইনস্টিটিউট এবং গবেষণাকেন্দ্র। প্রথম প্রতিষ্ঠা শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের, তারপরে একে একে এসেছে আরও এগারটি। গবেষণা কেন্দ্রগুলোর ভেতর প্রথমে স্থাপিত হয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ব্যুরো, পরে এসেছে আরও নয়টি। শারীরিক শিক্ষাও মোটেই উপেক্ষিত থাকে নি, তার জন্যও রয়েছে একটি উন্নত জিমনেসিয়াম ও একটি স্টেডিয়াম। অভাব ছিল প্রকাশনা সংস্থার; এখন তা নেই।

সূচনাতেই বিশিষ্ট গবেষকরা শিক্ষক হিসেবে এসেছিলেন। শহরটি মফস্বলীয় ছিল, কিন্তু এর শান্ত পরিবেশ ছিল অধ্যয়ন ও গবেষণার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তদুপরি বেতন ও আবাসন ব্যবস্থা দু'টোই ছিল আকর্ষণীয়। বিশিষ্ট গবেষক ও পণ্ডিতদেরকে পাওয়া গিয়েছিল শিক্ষক হিসেবে। তাঁরা নিজেরা গবেষণা করেছেন, এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেছেন গবেষণায়। অঙ্কুরটি তাঁরাই রোপণ করেছিলেন, পরে যেটা নিজস্বতা নিয়ে বিকশিত হয়েছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়; তাই চ্যালেঞ্জ ছিল বহুবিধ। বিশ্ববিদ্যালয় উদ্দীপনার সাথে সেই চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করেছে। শিক্ষার মানের ব্যাপারে কোনো আপস করেনি। প্রতিটি উত্তর-পত্র দু'জন পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হতো, একজন ভেতরের অপরজন বাইরের। সে-ব্যবস্থা এখনও আছে।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে ভূমিকা। শুরুতে ছাত্রী ছিল মাত্র দু'জন। প্রথমজন লীলা নাগ, যিনি নানা রকমের নিষেধ ডিঙিয়ে ভর্তি হতে পেরেছিলেন। আরেকজন ছিল আইন অনুষদের ডীন নরেশ সেনগুপ্তের কন্যা, সুস্মিতা সেনগুপ্ত। এই ছাত্রীটিকে সঙ্গ দিতে ক্লাসরুমে তার সঙ্গে গিয়ে বসতেন উপাচার্যের স্ত্রী। ছাত্রীটি অবশ্য শিক্ষা এখানে সমাপ্ত করেনি, কলকাতায় চলে গেছে। ক্লাশরুমে ছাত্রীরা থাকতো সংকোচে। অধ্যাপকরা তাদের নিয়ে যেতেন ক্লাসে, আবার ফেরত দিয়ে যেতেন ছাত্রীদের মিলনায়তনে। ছেলেমেয়েদের মধ্যে কথাবার্তা হতো না; দেখা করতে হলে প্রক্টরের অনুমোদন লাগতো। এই ব্যবস্থা চালু ছিল ১৯৫২ সাল পর্যন্ত; পরিবর্তন আসে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময়, যে আন্দোলনে মেয়েরাও যোগ দেয়। প্রথম মুসলমান ছাত্রী ফজিলাতুননেসা; তিনি এসেছেন চার বছর পরে, ১৯২৫-এ; এবং স্মরণীয় হয়ে আছেন অত্যন্ত ভালো ফল করে শুধু নয় সারা বাংলায় প্রথম মুসলমান মহিলা এম এ হিসেবেও। মহিলা শিক্ষকের আগমনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে অপেক্ষা করতে হয়েছে পনের বছর। ছাত্রীনিবাস স্থাপিত হলে প্রাথমিক ভাবে পাওয়া গিয়েছিল আটজনকে, তাদের মধ্যে মাত্র একজন ছিল মুসলমান। সেই একই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্রী সংখ্যা ১৫,৩০৫। মহিলা শিক্ষক আছেন ৬৬৩ জন। ছাত্রীদের জন্য আবাস রয়েছে সাতটি। আরও প্রয়োজন।

তবে অভিযোগ যে নেই তাতো নয়। অভিযোগ আছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এখন আর আগের মতো নেই, নেমে গেছে। বলা হয় গবেষণাও আগের মতো হচ্ছে না। গবেষণা যে হচ্ছে না এটা মোটেই সত্য নয়; গবেষণা অবশ্যই চলছে, বহু শিক্ষার্থী পিএইচডি ডিগ্রি পাচ্ছে; শিক্ষকরা গবেষণা করছেন, তাঁদের প্রকাশনাও আছে; বিভাগীয় ও অনুষদীয় জার্নালও বের হয়। হয়তো আরও হলে ভালো হতো। তেমনটা না হওয়ার কারণ কিন্তু কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে খুঁজলে চলবে না, বাইরের দিকেও তাকাতে হবে। এটা সাধারণত সত্য, এবং স্বীকৃতও বটে যে দেশে জ্ঞানের মৃল্য না কমলেও দাম কমে গেছে। এমনকি মূল্য যে কমেনি তাও নয়। জিন্নাহ সাহেব যে পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটা যে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে এটা সত্য; যে রাষ্ট্র গড়ার জন্য তাঁর চেষ্টা ছিল সেই রাষ্ট্র এখন আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না; তবে রাষ্ট্র ভাঙলেও রাষ্ট্রের জন্য যে পুঁজিবাদী উন্নয়নের সোপারিশটি তিনি করেছিলেন উন্নয়নের সেই দর্শনটি কিন্তু ভেঙে  পড়েনি। ওই দর্শনের যাত্রা ব্রিটিশ শাসনের কালে শুরু হয়েছিল, পাকিস্তানী আমলে জোরদার হয়েছে, এবং স্বাধীন বাংলাদেশেও চালু আছে। পুঁজিবাদী উন্নয়ন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় মুনাফাকে, এবং চায় সবকিছুই পণ্যে পরিণত হোক। রাষ্ট্রের ওই দর্শন কায়েম থাকায় এবং বিশ্বপুঁজিবাদের বলয়ের ভেতরেই রাষ্ট্রের অবস্থান নেওয়াতে জ্ঞানের মূল্য কমে গেছে। দামও গেছে পড়ে। জ্ঞানের প্রতি আকর্ষণের নিম্নগমনের দরুন গবেষণাতেও আগ্রহ কমেছে। সর্বত্রই কমেছে, বিশ্ববিদ্যালয় তার বাইরে থাকতে পারেনি। থাকা অবশ্য প্রয়োজন ছিল, কিন্তু বাস্তবতা সেটা ঘটতে দেয়নি।

শিক্ষার মানের ব্যাপারে মনে রাখা দরকার যে শিক্ষা কেবল দেবার ব্যাপার নয়, গ্রহণ করবার ব্যাপারও বৈকি। এই গ্রহণ করাটা অনেকাংশেই নির্ভর করে সংস্কৃতির ওপর। শিক্ষা ও সংস্কৃতি আসলে এক সঙ্গেই যায়। শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সাংস্কৃতিক জীবন ছিল অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও বিকাশশীল। শিক্ষার্থীরা যে কেবল ক্লাস রুমে শিক্ষাগ্রহণ করতো তা নয়, তারা গ্রন্থাগারে যেত, যেত ল্যাবরেটরিতে, এবং পরস্পরের সঙ্গে মিলতো, মিলতো সামাজিকভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি তো ছিল আবাসিক। শিক্ষকরাও কোনো না কোনো ছাত্রাবাসের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ঘটতো ক্লাসরুমের বাইরেও। যোগাযোগ ও আলাপ-আলোচনা হতো শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিষয়ে।

শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ ছিল। ছাত্রসংসদ নাটক, বিতর্ক, গানের অনুষ্ঠান, বার্ষিকী প্রকাশ, বক্তৃতা, খেলাধুলা ইত্যাদির আয়োজন করতো। বিকেল ও সন্ধ্যাতে এক বা একাধিক অনুষ্ঠান পাওয়া যেত। তাতে ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকরাও যোগ দিতেন। বিতর্ক প্রতিযোগিতা হতো নিয়মিত। প্রথম দিকের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শিক্ষকরা তো বটেই এমনকি উপাচার্য নিজেও অংশ নিতেন ছাত্রদের সঙ্গে। ছাত্রসংসদের নির্বাচন ছিল অনেকটা সামাজিক উৎসবের মতো।

ছাত্রসংসদ কিন্তু আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের সময়েও টিকে ছিল। অনিয়মিত হয়ে যায় বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত সময়কালে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্রসংসদের কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নি। এরপরে সামরিক শাসকদের শাসনামলে তিন বছর নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু বন্ধ হয়ে গেছে ১৯৯১ থেকে, ঠিক সেই সময়টা থেকেই দেশে যখন সামরিক স্বৈরশাসনের বদলে নির্বাচিত সরকারের গণতান্ত্রিক শাসন প্রবর্তিত হয়েছে। ২৮ বছর পরে মাত্র একটি (২০১৯ সালে) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পেরেছে, তবে নির্বাচিতরা যে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে সাংস্কৃতিককর্মে মুখর করে রাখতে পেরেছে এমন নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ক্লাব আছে, তাদের এবং বিভাগীয় উদ্যোগেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়; কিন্তু এরা মোটেই ছাত্রসংসদের বিকল্প নয়। সাংস্কৃতিক জীবন শিক্ষাজীবনের কেবল যে পরিপূরক তাই নয়, একে অপরের জন্য সহায়কও বটে; সাংস্কৃতিক জীবন সজীব না থাকলে শিক্ষাজীবনের স্বাস্থ্যও দুর্বল হতে বাধ্য।

Comments