বইমেলা বিশেষ-১

মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশের রীতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত

চলছে অমর একুশে বইমেলা। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যে প্রকাশ হয়েছে কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক মশিউল আলমের দুটি বই, রুশ থেকে বাংলা অনুবাদ 'নিরীহ' ও তলকুঠুরির কড়চা, প্রকাশ করেছে মাওলা ব্রাদার্স। 

নতুন বই ও নিজের লেখালেখি-অনুবাদ ভাবনা  নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

চলতি বইমেলায় আপনার দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। মেলাকেন্দ্রিক প্রকাশনাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

মশিউল আলম: দস্তইয়েফস্কির দুটো উপন্যাসের অনুবাদ বেরিয়েছে এবারে। একটা তলকুঠুরির কড়চা, ইংরেজিতে এটা নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড নামে পরিচিতি। অন্যটা নিরীহ, এটার ইংরেজি নাম দা মিক ওয়ান বা আ জেন্টল ক্রিয়েচার। শুধু বইমেলাকে কেন্দ্র করে আমাদের পুস্তক প্রকাশনা শিল্প সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে, এটাকে আমি ভালো মনে করি না। এর সবচেয়ে খারাপ দিক হলো লেখক, প্রকাশক, প্রচ্ছদশিল্পী সকলের তরফে তাড়াহুড়ো। এই মেলায় বই আনতেই হবে, নইলে পুরো একটা বছর অপেক্ষা করতে হবে, সুতরাং তাড়াহুড়ো, যেনতেন প্রকারে কাজ সারো। এই প্রবণতা লেখকের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনই ইন্ডাস্ট্রির জন্যও ক্ষতিকর। আমাদের এই মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশের রীতি থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। বছরজুড়ে বই প্রকাশিত হতে থাকলে পাঠকদেরও বই কেনার অভ্যাসে পরিবর্তন আসবে।

আপনি অনুবাদের কাজ করছেন অনেক দিন। এটি বেশ দক্ষতা ও পরিশ্রমের কাজ, তবু অনুবাদকে মৌলিক কাজ বলে স্বীকার করে না কেন?

মশিউল আলম: অনুবাদ করা হয় এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায়, অর্থাৎ মূল ভাষার কাজটাকে ধরা হয় মৌলিক। এ অর্থে অনুবাদ আর মৌলিক কাজ থাকে না। কিন্তু আমি মনে করি, ব্যাপারটা এভাবে দেখা উচিত নয়। মৌলিকতা এখানে আলোচ্য বিষয়ই নয়। বিষয়টা হচ্ছে কাজের গুরুত্ব। অনুবাদ শুধু গুরুত্বপূর্ণ কাজ নয়, অপরিহার্য কাজ। অনুবাদ ছাড়া পৃথিবী চলতে পারত না। এ কথা বলছি শুধু সাহিত্যের কথা ভেবে নয়, মানুষে মানুষে যোগাযোগের জন্য অনুবাদ অপরিহার্য, অনুবাদ ছাড়া পৃথিবী অচল। অনুবাদ ছাড়া শিক্ষাও সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ত, জ্ঞান–বিজ্ঞানের বিস্তারও সম্ভব হতো না। এগুলো আমরা সবাই জানি, বলার অপেক্ষা রাখে না।

ফিওদর দস্তইয়েফ্স্কির ভাবনা আপনাকে কতটা তাড়িত করে?

মশিউল আলম: দস্তইয়েফ্স্কির প্রতি আমার আগ্রহের কারণ তাঁর ভাবুকতা বা দার্শনিকতা নয়। তাঁর সামাজিক–রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার সমর্থকও আমি নই। তাঁর প্রতি আমার আগ্রহের প্রধান কারণ মানুষের মনের অত্যন্ত গভীর ও সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলো তিনি যেভাবে খুলে খুলে দেখাতে পারেন, তেমন কথাশিল্পী আমি আর পাইনি, এই দিক থেকে তিনি আমার কাছে অনন্য। তলস্তোয়কেও আমি খুব পছন্দ করি, সম্ভবত দস্তইয়েফস্কির চেয়ে বেশিই পছন্দ করি। কিন্তু তবু দস্তইয়েফ্স্কি অনন্য, এরকম লেখক আমার বিবেচনায় বিশ্বজুড়ে একমাত্র তিনিই।

আপনার সঙ্গে বিশ্বের অনেক লেখকের যোগাযোগ আছে; আমাদের সাহিত্য কতটা এগিয়েছে, তারা কি এই বিষয়ে কিছু জানেন বা জানার আগ্রহ দেখান?

মশিউল আলম: সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুবাদে আমার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ৩২ জন কবি, লেখক, নাট্যকারের সঙ্গে পরিচয় ও মতবিনিময়ের সুযোগ হয়েছে। বাংলা সাহিত্য সম্পর্ক তাদের ধারণা খুবই কম, বা নেই বললেই চলে। অধিকাংশই শুধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চেনেন, বাংলা ভাষার আর কোনো কবি–লেখকের নাম তাদের কারও মুখে শুনিনি। বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে তাদের কোনো আগ্রহও আমি দেখতে পাইনি।

আমাদের বইমেলা ও দেশের বাইরে বই নিয়ে আয়োজনে ভিন্নতা কী?

মশিউল আলম: বাংলাদেশের বাইরে শুধু কলকাতার বইমেলা দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। কলকাতার বইমেলা আমাদের বইমেলার চেয়ে বেশি আড়ম্বরপূর্ণ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ মনে হয়েছে। আমাদের বইমেলায় দর্শকের ভীড় বেশি হয়, ক্রেতা সে তুলনায় কম দেখি। কিন্তু কলকাতা বইমেলায় দেখেছি ক্রেতার ভীড় বেশি। আমাদের দেশে দুই–একজন জনপ্রিয় লেখকের নতুন বই কেনার জন্য ক্রেতাদের ভীড় দেখি, তা–ও মাসজুড়ে নয়, একুশে ফেব্রুয়ারির আগের সপ্তাহে আর ছুটির দিনগুলোতে। কিন্তু কলকাতা বইমেলায় দেখেছি অনেক দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন বয়সের নারী–পুরুষ বিভিন্ন লেখকের বই কিনছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Can Bangladesh fend off Vietnam in RMG race?

Bangladesh's limited trade diplomacy, coupled with its slower shift towards value-added production, could allow Vietnam to surpass it in global rankings

9h ago