বইমেলার সঙ্গে এবার কেন নেই স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর

২০১৮ সালের শেষের দিকে স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর আনুষ্ঠানিকভাবে বইমেলার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ পান এবং 'বাংলাদেশের উদযাপন সংস্কৃতিটা মুনাফা লোভী, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের হাত থেকে বের করে ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছা থেকে' সেই আমন্ত্রণে সাগ্রহে সাড়া দেন।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'ডাক পেয়ে আমি আর দেরি করিনি। প্রথম থেকেই বলেছিলাম, বইমেলার মূল জায়গাটা ঠিক করা দরকার। এর লোগো ঠিক মতো হয় না, কোনো ব্রান্ডিং নেই। এরপর স্বাধীনতা পাই প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করার।'

এরপর থেকে প্রতি বছর একটু একটু করে বদলেছে বইমেলার চেহারা, এসেছে নতুনত্ব। কিন্তু এনামুল করিম নির্ঝরকে এবারের বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়নি।

কেন আপনাকে সম্পৃক্ত করা হলো না, প্রশ্নের উত্তরে নির্ঝর বলেন, 'সেটা আমি বলতে পারব না। বাংলা একাডেমির বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া আমার পয়সা আয়ের জায়গা না। সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে এখানে একটা নতুন প্রক্রিয়া তৈরির কাজ শুরু করি। যেসব করপোরেট স্পন্সর করে, তাদের নাম দিয়ে পুরো মেলা ভরে যায়। তারা তো টাকা দেয়। বুদ্ধিটা কে দেবে? এর ডিজাইন, থিমসহ এমন বিষয় নিয়ে কাজ করার কিছু মানুষ দরকার। এটা বাংলা একাডেমিরও করার কথা না। তাদের তো কোনো বাজেট নেই, এমনকি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়েরও কোনো বাজেট নেই। তারা জানেও না এখানে কি করতে হবে। তারা প্রতি বছর একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে কাজটা দিয়ে দেয়, তারাই সব করে। এভাবেই চলছিল।'

'আমি শুরু করলাম আইএসআর (ইন্টেলেকচুয়াল সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি)। লেখক, শিল্পী, স্থপতিসহ যাদেরই আগ্রহ আছে, তাদের নিয়ে একটি গ্রুপ করলাম। বাংলাদেশের ৫০ বছরে যেসব জিনিস একটু পড়ে গেছে, সেগুলো টেনে তোলার চেষ্টা করলাম। তৎকালীন মহাপরিচালকসহ সবাই এই বিষয়টাকে সাধুবাদ দিয়েছিলেন', যোগ করেন তিনি।

বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে বইমেলা ছড়িয়ে পড়লো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও। মেলাগুলো থিমভিত্তিক হচ্ছিল। মুজিববর্ষের সময় আলাদা করে কিছু প্রতিযোগিতা করা হয়েছে। নানা রকমের নতুন নতুন বিষয় মেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নির্ঝর বলেন, 'নতুনত্বের এই প্রক্রিয়াটা আকর্ষণীয় ছিল। কিন্তু, যেহেতু কোনো সম্মানী নিতাম না, মনে হচ্ছিল যে অন্যরা খুব একটা আগ্রহ নিয়ে কাজ করছেন না। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু অর্থ এ ক্ষেত্রে ব্যয় করলাম। কোনো অর্থ বাংলা একাডেমির কাছ থেকে নেইনি।'

তিনি বলেন, 'পৃথিবীর আর কোথাও ১ মাসব্যাপী বইমেলা হয় না। এখানে জায়গা আছে, খুবই ভালো পরিকল্পনা আছে। সিএসআর হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলো পয়সাও দিতে চায়। কাজেই একে আরও অনেক ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে।'

এ বছর বইমেলায় কেন সম্পৃক্ত করা হলো না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'হয়তো তারা আমাকে আর প্রয়োজন মনে করেননি।'

তিনি বলেন, 'মেলায় আমার একটা নজরদারি ছিল। কেউ চাইলেই ইচ্ছা মতো দোকান বসিয়ে দিতে পারতো না, সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করতাম।'

তিনি আরও বলেন, 'বইমেলার সঙ্গে এবার আমি নেই কেন—অনেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলো। তখন আমি ফেসবুকে লিখলাম। এরপর জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বাংলা একাডেমি চিঠি পাঠালো। সেখানে আমাকে মেলার সাজসজ্জা কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এটা আমার কাছে খুবই অসম্মানজনক মনে হয়েছে। আরও অসম্মানজনক লেগেছে যে যেদিন চিঠি পেলাম সেদিনই বিকাল ৪টায় মিটিং। আমি ওই কমিটি থেকে আমার নাম প্রত্যাহার করতে বলি। যদিও, এর কোনো উত্তর তারা দেননি। আমরা ফেব্রুয়ারির মেলার কাজ শুরু করতাম নভেম্বর থেকে।'

নির্ঝর বলেন, 'বাংলা একাডেমি হয়তো ভেবেছে, আগের ডিজাইন দেখেই নতুন মেলা করে ফেলবে, এটা এমন কঠিন কোনো ব্যাপার না। কিন্তু, এর জন্য যে একটা মহাপরিকল্পনা দরকার, দূরদৃষ্টি দরকার, সেটা পূরণ করবে কে?'

বইমেলা নিয়ে নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে নির্ঝর বলেন, 'নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করে সেটা বোঝাতে যে শ্রম যাবে, তারচেয়ে বিনা সম্মানীতে কাজটা করে দিলে আর প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকে না। কারণ, কোথা থেকে টাকা দিবে সেটা নিয়ে আর চিন্তা করতে হয় না।'

তিনি বলেন, 'আমার উদ্দেশ্য ছিল, এমন অস্থায়ী স্থাপত্য চর্চায় একদম নতুন স্থপতি, লেখক, শিল্পীদের নিয়ে একটি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে, যেখানে প্রতি বছর একটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নতুন ডিজাইন আসবে। দেশের তরুণরা তাদের মেধা দেখানোর সুযোগটা পেতো।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি গত ৪ বছর মেলায় কাজ করেছি। প্রতি বছরই বলেছি, মেলায় একটা মত বিনিময় অনুষ্ঠান করতে চাই। আর কয়েক বছর কাজটা করতে পারলে বইমেলায় একটি নতুন ধারা তৈরি করতে পারতাম। কিন্তু, সেটা তো কারো শুনতে হবে। এটা যে দরকার তা হয়তো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে বুঝতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago