রাশিয়ার ‘নতুন ডলার’ ইউয়ান

রাশিয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে চীনের মুদ্রা ইউয়ান।
মার্কিন ডলার ও চীনের ইউয়ান। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন ডলার ও চীনের ইউয়ান। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে চীনের মুদ্রা ইউয়ান।

ইউক্রেনে 'বিশেষ সামরিক অভিযান' শুরুর পর রাশিয়ার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ডলার ও ইউরোতে লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে দেশটিতে চীনের মুদ্রার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।

আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

চীনের উদ্যোক্তা ওয়াং মিনের প্রতিষ্ঠান এলইডি বাতি নির্মাণ ও রপ্তানি করে। রুশ ক্রেতাদের সঙ্গে ইউয়ানে লেনদেন করতে পারার বিষয়টি তার জন্য বেশ সুবিধাজনক।

আগে রাশিয়ায় চীনের রপ্তানির পরিমাণ কম হলেও এখন ইউয়ানের ব্যবহারে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হচ্ছে। ওয়াং মিন এখন রাশিয়ায় গুদাম তৈরির জন্য বিনিয়োগ করছেন।

চীনের গুয়াংডং প্রদেশের এই ব্যবসায়ী গণমাধ্যমকে বলেন, 'আশা করছি আগামী বছর মোট বিক্রির ১০ থেকে ১৫ শতাংশ রাশিয়ায় হবে।'

এ মুহূর্তে ওয়াং মিনের প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় ২০ মিলিয়ন ডলার। এর বেশিরভাগ আসে আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে।

প্রতিবেদন অনুসারে, রুশ অর্থনীতিতে এ বছর ইউয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বৈশ্বিক অর্থ-ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন রাশিয়া আর্থিক নিরাপত্তার জন্য বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিধর অর্থনীতি চীনের দিকে ঝুঁকছে।

ওয়াং মিন মনে করেন, এই পরিস্থিতি প্রতিবেশী রাশিয়া ও চীনের ব্যবসায়ীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

বেশ কয়েকবছর ধরে আরএম নামে পরিচিত ইউয়ান রাশিয়ায় জনপ্রিয় হচ্ছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলার পর গত ৯ মাসে এই মুদ্রা দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

রাশিয়ার ১০ শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের তথ্য পর্যালোচনা ও কর্মীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে রয়টার্স বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, চীনের মুদ্রার ওপর রাশিয়ার নির্ভরতা বাড়ার ফলে ডলারের আধিপত্য কমে আসতে পারে। এতে মস্কোকে অর্থনৈতিক চাপের রাখার পশ্চিমা কৌশল ব্যর্থ হতে পারে।

গত মাসে একদিনে মস্কোর মুদ্রাবাজারে ইউয়ান-রুবল বিনিময়ের পরিমাণ গড়ে ছিল প্রায় ৯ বিলিয়ন ইউয়ান বা ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। এর আগে পুরো সপ্তাহে এই পরিমাণ এক বিলিয়ন ইউয়ানে পৌঁছাত না।

মস্কোভিত্তিক বিনিয়োগ সংস্থা কাদেরুশ ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্দ্রেই আকোপিয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, 'রাশিয়ায় হঠাৎ ডলার, ইউরো ও ব্রিটিশ পাউন্ড হাতে রাখা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে।'

তিনি জানান, এসব মুদ্রার আমানত রাখা ব্যাংকগুলো বিধিনিষেধের আওতায় পড়ার ঝুঁকিতে ছিল।

'এরপর, সবাই রুবল ও অন্যান্য মুদ্রার প্রতি আকৃষ্ট হতে লাগল, বিশেষ করে, ইউয়ানের প্রতি', যোগ করেন তিনি।

অক্টোবরে ইউয়ান-রুবল বিনিময়ের পরিমাণ ছিল ১৮৫ বিলিয়ন ইউয়ান। এটি গত ফেব্রুয়ারির আগের হারের চেয়ে ৮০ গুণ বেশি।

মস্কোর বৈদেশিক মুদ্রাবাজার বিভাগের আন্তর্জাতিক প্রকল্প প্রধান দিমিত্রি পিসকুলভ গণমাধ্যমকে বলেন, 'বর্তমানে ইউয়ান বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ দখল করে নিয়েছে। এ বছরের শুরুর দিকে এই হার ১ শতাংশেরও কম ছিল।'

জানুয়ারিতে মোট মুদ্রার বিনিময়ের ৮০ শতাংশই ছিল ডলার-রুবল বিনিময়। অক্টোবরে এই হার কমে ৪০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজার পরিস্থিতি

আন্তর্জাতিক বাজারেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। গত এপ্রিল পর্যন্ত চীন ছাড়া অন্যান্য দেশের মধ্যে ইউয়ান ব্যবহারের দিক থেকে রাশিয়া প্রথম ১৫ দেশের তালিকায় ছিল না। বৈশ্বিক আর্থিক নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা সুইফট এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

এ মুহূর্তে ইউয়ান ব্যবহারের দিক দিয়ে হংকংয়ের পরেই চতুর্থ স্থানে রাশিয়া।

সার্বিকভাবে ডলার ও ইউরো বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুদ্রা। গত সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুসারে, মোট মুদ্রা ব্যবহার হয়েছিল ডলার ৪২ শতাংশ ও ইউরো ৩৫ শতাংশ। তবে ইউয়ানের ব্যবহার ২ বছর আগে ২ শতাংশের কম থেকে এ বছর আড়াই শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

ওয়াং মিনের মতো চীনের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রচুর সংখ্যক রুশ ক্রেতা প্রতিদিনই ইউয়ানের অ্যাকাউন্ট খুলছেন। সরাসরি চীনের মুদ্রায় লেনদেন করছেন। তারা একে বড় সুবিধা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ফুজিয়ান প্রদেশের এক ছোট বাণিজ্য সংস্থার প্রধান শেন মুহুই গণমাধ্যমকে বলেন, 'রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত চীনের ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।'

শুধু ছোট প্রতিষ্ঠান অন্য, বড় বড় রুশ প্রতিষ্ঠানও ইউয়ান ব্যবহার করছে। রাশিয়ার ৭ বড় প্রতিষ্ঠান রুশ বাজারে ৪২ বিলিয়ন ইউয়ানের বন্ড ছেড়েছে। দেশের শীর্ষ ব্যাংক সেবেরব্যাংক ও তেল প্রতিষ্ঠান গাজপ্রমনেফটও জানিয়েছে যে, তারা ইউয়ানে বন্ড ছাড়তে পারে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দীর্ঘদিন ধরে ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছেন। তবে ২০২২ সালে এ উদ্যোগে গতি আসে।

শি জিনপিং ও পুতিন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
শি জিনপিং ও পুতিন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে চীন কোনো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত ফেব্রুয়ারিতে যৌথ বক্তব্যে জানান, প্রতিবেশী ২ দেশের অংশীদারিত্বের কোনো 'সীমা নেই'। এর পরপরই পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করেন।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Political parties want road map to polls

Leaders of major political parties yesterday asked Chief Adviser Professor Muhammad Yunus for a road map to the reforms and the next general election.

1h ago