ভারতে টমেটো ফ্লু রোগে শতাধিক শিশু আক্রান্ত

সম্প্রতি ভারতে টমেটো ফ্লু নামের একটি ভাইরাসজনিত রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এ পর্যন্ত ১০০ জনেরও বেশি শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
‘টমেটো ফ্লু’ নামটি এসেছে এ রোগের মূল উপসর্গ থেকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে দেহের বিভিন্ন অংশে টমেটো আকৃতির ফোস্কা দেখা দেয়। ছবি: সংগৃহীত
‘টমেটো ফ্লু’ নামটি এসেছে এ রোগের মূল উপসর্গ থেকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে দেহের বিভিন্ন অংশে টমেটো আকৃতির ফোস্কা দেখা দেয়। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি ভারতে টমেটো ফ্লু নামের একটি ভাইরাসজনিত রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এ পর্যন্ত শতাধিক শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

গতকাল ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গতকাল মঙ্গলবার দেশটির সব রাজ্যে টমেটো ফ্লু বিষয়ক একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে। এ পর্যন্ত কেরালা, তামিলনাড়ু, হরিয়ানা ও উড়িষ্যা রাজ্যে এই রোগে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হয়েছে। 

টমেটো ফ্লু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। 'টমেটো ফ্লু' নামটি এসেছে এ রোগের মূল উপসর্গ থেকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে দেহের বিভিন্ন অংশে টমেটো আকৃতির ফোস্কা দেখা দেয়। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় লাল রঙের ফোসকাগুলো ছোট থাকলেও পরবর্তীতে এগুলো ফুলে টমেটোর মতো হয়ে যায়।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, কেরালা রাজ্যের কুল্লামে গত ৬ মে টমেটো ফ্লু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এবং এখন পর্যন্ত সেখানে ৮২ জনেরও বেশি শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে, যাদের সবার বয়সই ৫ বছরের নিচে। কেরালার আরও ৩ জায়গায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে, যেগুলো হল আরিয়ানকাভু, আঞ্চাল ও নেড়ুভাতুর।

ভুবনেশ্বরের আঞ্চলিক মেডিকেল গবেষণা কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উড়িষ্যায় ১ থেকে ৯ বছর বয়সী আরও ২৬ শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

এই রোগকে শিশুদের হাত, মুখ ও পায়ের (হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ) রোগের একটি ধরন বলা হচ্ছে।

শিশুদের মাঝে এ রোগের উপসর্গগুলো অন্যান্য ভাইরাসজনিত সংক্রমণের মতোই। টমেটো ফ্লু হলে জ্বর, ফোসকা ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হতে পারে। ত্বকের ওপর র‍্যাশ হলে তা থেকে অস্বস্তি ও চুলকানি দেখা দিতে পারে। দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা, শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যাওয়া ও ব্যথা এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মূলত ১ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হন। ছবি: সংগৃহীত
মূলত ১ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হন। ছবি: সংগৃহীত

চিকিৎসকরা বলছেন, টমেটো ফ্লুর লক্ষণগুলো অনেকটা চিকুনগুনিয়ার মতো।

এছাড়া টমেটো ফ্লুতে আক্রান্ত কিছু রোগী বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া ও শরীরে পানি শূন্যতার কথাও জানিয়েছেন। 

শিশুদের মধ্যে এ রোগের উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জাইকা ভাইরাসের জন্য পরীক্ষা করতে হয়। এসব পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হলে তারপর টমেটো ফ্লুকে বিবেচনায় নেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এটি নিজ থেকেই কমে যাওয়া বা সেলফ লিমিটিং একটি অসুস্থতা এবং এর চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। তবে এটি 'খুবই সংক্রামক' একটি রোগ বলে সতর্ক করেছেন তারা। 

ভারতের সংবাদ মাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাত, মুখ ও পায়ের রোগ মূলত ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের হয়, তবে বড়রাও এতে আক্রান্ত হতে পারেন। সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও অন্যান্য ভাইরাল রোগের মতো আইসোলেশন, বিশ্রাম নেওয়া, প্রচুর পরিমাণে তরল পান ও গরম পানি দিয়ে শরীর স্পঞ্জ করলে ফোসকা ও র‍্যাশ থেকে সাময়িক নিরাময় পেতে পারেন রোগীরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্বর ও ব্যথার ট্যাবলেট ও উপসর্গ অনুযায়ী অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

টমেটো ফ্লুতে আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে অন্যান্য শিশু ও বয়স্কদের মাঝে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে অন্তত ৫ থেকে ৭ দিন আইসোলেশনে থাকা প্রয়োজন।

টমেটো ফ্লু প্রতিরোধের সেরা উপায় হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা। এছাড়াও, আক্রান্ত শিশুর খেলনা, কাপড়, খাবার ও অন্যান্য উপকরণ সুস্থ শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা আবশ্যক।

এখন পর্যন্ত টমেটো ফ্লু প্রতিরোধের জন্য কোনো ওষুধ বা টিকা নেই।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, মানবদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পরীক্ষা করে এই ভাইরাসকে চিহ্নিত করা সম্ভব। তবে এতে ২ থেকে ৪ সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। এই রোগ মহামারিতে রূপান্তরিত হতে পারে কী না, সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালানোর ওপর জোর দিয়েছে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পাঠানো যেতে পারে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Ban on plastic bags a boon for eco-friendly sacks

Availability of raw materials now a challenge

3h ago