হিরোশিমা দিবসে বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জাপানের

পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম বারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের দিনটিতে ভুক্তভোগীদের স্মরণ করে জাপান। এবারের দিবস এমন সময় এলো যখন ইউক্রেন যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছে রাশিয়া।
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফাইল ছবি: রয়টার্স
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফাইল ছবি: রয়টার্স

আজ থেকে ঠিক ৭৮ বছর আগে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম লগ্নে জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ৩ দিন পর অপর একটি বোমা ফেলা হয় নাগাসাকিতে। নিমিষেই মারা যান লাখ লাখ মানুষ।

আজ রোববার হিরোশিমায় সেই বিভীষিকাময় দিনটির ৭৮তম বার্ষিকী উদযাপন করছে জাপান। এ উপলক্ষে হিরোশিমার মেয়র সারা বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংসের আহ্বান জানিয়েছেন।

পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম বারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের দিনটিতে ভুক্তভোগীদের স্মরণ করে জাপান। এবারের দিবস এমন সময় এলো যখন ইউক্রেন যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছে রাশিয়া।

এছাড়াও, অপর উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল আত্মজীবনীমূলক সিনেমা ওপেনহেইমারের মুক্তি ও যুক্তরাষ্ট্রের বক্স অফিসে অসামান্য সাফল্য লাভ। এই সিনেমায় মূলত পারমাণবিক বোমা তৈরির ইতিহাসের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তবে এতে ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট যথাক্রমে হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমার ধ্বংসযজ্ঞের বিষয়টি বড় আকারে উপেক্ষা করা হয়েছে, যা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

জাপানে এখনো সিনেমাটি  মুক্তি পায়নি।

হিরোশিমায় বোমার আঘাতে নিহতদের স্মরণ করছেন জাপানের নাগরিকরা। ছবি: রয়টার্স
হিরোশিমায় বোমার আঘাতে নিহতদের স্মরণ করছেন জাপানের নাগরিকরা। ছবি: রয়টার্স

মে মাসে হিরোশিমায় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য অর্থনীতিগুলোর সংগঠন জি-৭ এর সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে জি-৭ নেতারা যৌথ বিবৃতিতে জানান, তারা দীর্ঘমেয়াদে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার থেকে বের হয়ে আসতে অঙ্গীকারবদ্ধ, কিন্তু যতদিন এ ধরনের অস্ত্রের অস্তিত্ব রয়েছে, তা আগ্রাসন ও যুদ্ধ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

আজ রোববার বোমা নিক্ষেপের সময়টিতে (স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫) হিরোশিমায় শান্তির ঘণ্টা বাজানো হয়। ভুক্তভোগীদের স্মৃতিচারণামূলক অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এ সময় নীরবতা পালন করেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেক বর্ষীয়ান নাগরিক ছিলেন, যারা বোমা বিস্ফোরণের তাণ্ডব থেকে বেঁচে ফিরতে সক্ষম হন।

হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুই এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে বলেন, 'বৈশ্বিক নেতাদের এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে যে, কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিনির্ধারকরা নতুন করে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছেন। পারমাণবিক অস্ত্র যুদ্ধকে প্রতিহত করে—এ ধরনের চিন্তাধারা যে বোকামি, তা এসব হুমকির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে।'

প্রধানমন্ত্রী কিশিদাও এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তিনি জানান, পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন বিশ্ব তৈরির পথ ক্রমশ দুর্গম হয়ে পড়ছে এবং এর পেছনে মূলত দায়ী রাশিয়ার পারমাণবিক হুমকি। কিন্তু এই হুমকির কারণেই এই লক্ষ্যের দিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর বাড়ানোর বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন।

হিরোশিমায় অ্যাটম বোমার আঘাতেও অবিকৃত থেকে যায় এই পিয়ানোটি। ফাইল ছবি: রয়টার্স
হিরোশিমায় অ্যাটম বোমার আঘাতেও অবিকৃত থেকে যায় এই পিয়ানোটি। ফাইল ছবি: রয়টার্স

তিনি বলেন, 'বিশ্ব নেতারা এই শহর পরিদর্শন করেছেন। তারা এখানকার স্মৃতিস্তম্ভগুলো দেখেছেন এবং যে দুঃসাহসী ব্যক্তিরা ঐ বিভীষিকা থেকে বেঁচে ফিরেছেন এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। অন্যদেরও একই কাজ করা উচিৎ, কারণ পারমাণবিক যুদ্ধের দামামা আবারও বেজে উঠেছে।'

'লিটল বয়' নামের পারমাণবিক বোমাটি ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমায় নিক্ষেপ করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে হাজারো মানুষ নিহত হন। বছরের শেষ নাগাদ প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

জাপান ১৫ আগস্ট আত্মসমর্পণ করে। যার মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান হয়।

Comments